শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়

প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি

শান্তি ও সহিষ্ণুতার ধর্ম ইসলামের নামে এবারের মাহে রমজানে জঙ্গি নামের নরপিশাচরা গুলশানে যে পৈশাচিক হত্যাকা- চালিয়েছে তা কলঙ্কজনক ঘটনা। ইসলাম তথা দেশের স্বার্থে বিদেশি অপশক্তির এসব প্রতিভূকে ঠেকানো এবং বিচারের মাধ্যমে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা সরকার তথা সব নাগরিকের কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইসলাম অর্থ শান্তি। যে ধর্ম সব ধরনের সন্ত্রাস এবং অন্যায় রক্তপাতকে কবিরা গুনাহ বা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে, সে ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাস চালায় তারা হয় মস্তিষ্ক বিকৃতিতে ভুগছে, নতুবা নিজেদের বোধশক্তিকে কারও কাছে বন্ধক রেখেছে। গুলশান ও শোলাকিয়ার জঙ্গি হামলায় প্রমাণ হয়েছে জঙ্গিদের সিংহভাগ মগজ ধোলাই কিংবা মাদকাসক্তির শিকার হয়ে এই ঘৃণ্য পথে পা বাড়িয়েছে। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ অংশকেই জঙ্গিরা তাদের অশুভ উদ্দেশ্য পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ইসলামের অপব্যাখ্যা করে তাদের হাতে তরবারি, আগ্নেয়াস্ত্র ও গ্রেনেড তুলে দিচ্ছে। এ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে সে সত্যটি তুলে ধরতে হবে। এ বিষয়ে দেশের আলেম সমাজ, বিশেষ করে মসজিদের ইমামদের এগিয়ে আসতে হবে। বিপথগামীদের সঠিক পথে আনতে সেটিই হতে পারে যথার্থ পথ।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এ মুহূর্তে একটি বিশ্বজনীন সমস্যা। এই ঘৃণ্য আপদ বিশ্বশান্তির জন্য ইতিমধ্যে বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর অপচর্চা বেশ কিছু দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও তা বিসম্বাদ সৃষ্টি করে চলেছে। বাংলাদেশ প্রথম থেকেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এই জঘন্য আপদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের প্রাসঙ্গিকতাকে স্বীকার করে বিশ্বসম্প্রদায়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণেও এ বিষয়ে বাংলাদেশের দ্ব্যর্থহীন অবস্থানের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব রাষ্ট্রকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশের এ অবস্থান বিশ্ব শান্তি এবং সব জাতির সহঅবস্থানের পরিবেশ নিশ্চিত করার যৌক্তিক প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অপচর্চা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও তা প্রতিটি ধর্মীয় মতবাদের মূল চেতনার পরিপন্থী। পৃথিবীর প্রতিটি ধর্ম শান্তি ও মানবতার পক্ষে। প্রতিটি ধর্ম সন্ত্রাস ও অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে তার অনুসারীদের সতর্ক করে দিয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উপাসকরা নিজেদের মতলব হাসিলের জন্য ধর্মকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করলেও তাদের সঙ্গে ধর্মীয় মূল্যবোধের যে দূরতম সম্পর্কও নেই তা সহজে অনুমেয়। এ বিপদের বিরুদ্ধে বিশ্ব সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের যে আহ্বান বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট সব দেশের বিবেচনায় আসবে এমনটিই কাক্সিক্ষত।
আমাদের এই গ্রহকে শান্তির গ্রহে পরিণত করতে চাইলে, এ গ্রহের ৭০০ কোটি মানুষের জীবন যাত্রার মানকে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিতে চাইলে এ প্রয়াসের প্রতি বিঘœ সৃষ্টিকারী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উপাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব দেশের সব মানুষের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলো অস্তিত্ব সংকটে আছে। তাদের কর্মকা- নিষিদ্ধ। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোও অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। এ অবস্থার সুযোগ নিয়ে সংগঠিত হয়ে তারা সরকারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এ অবস্থায় সরকারকেই দায়িত্বশীল ও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। কাজে লাগাতে হবে গোয়েন্দা বিভাগকে। জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সংগঠিত হওয়ার আগেই তাদের নিষ্ক্রিয় করতে হবে। জঙ্গিদের সাংগঠনিক কার্যক্রম ভেঙে দিতে পারলে তাদের মনোবলও ভেঙে যাবে। অন্যদিকে রাজনৈতিক দিক থেকেও নানা কার্যক্রম নিয়ে জঙ্গি উত্থানের সম্ভাবনা নস্যাৎ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। ব্যবহার করতে হবে মিডিয়াকেও। গড়ে তুলতে হবে জনসচেতনতা। জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে পারলে জঙ্গিবাদ কোনোভাবেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। এ ব্যাপারে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোকেও কাজে লাগাতে হবে। জঙ্গিবাদ দমনে মিডিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে। জঙ্গিদের সংবাদ যাতে বেশি প্রচার না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। জঙ্গি বিরোধী অভিযানের সংবাদ যাতে আগে থেকে জঙ্গিরা না জানতে পারে সেদিক থেকেও সতর্ক হতে হবে। ধর্ম, দল-মত নির্বিশেষে সকল শান্তি প্রিয় মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে জঙ্গিবাদ দমন করতে।
জঙ্গি দমনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর একের পর এক থাকলে অভিযান পরিচালনায় মানুষ অনেকটাই স্বস্তি অনুভব করছে। বিশেষ করে গুলশান হামলার পর থেকে অভিযান পরিচালনায় যে গতি এসেছে, তা রীতিমতো প্রশংসীয়। এ ঘটনার মাধ্যমে আমরা দেখতে পেলাম যে, জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি কেবল দরিদ্র পরিবারের অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত মাদ্রাসা পড়–য়াদের বেলায় প্রযোজ্য নয়। এই ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের অত্যন্ত উঁচু মহলে, উচ্চ বিত্ত পরিবারের ইংরেজি শিক্ষিত ছাত্রদেরও বিশ্বের উন্নত অনুন্নত অনেকগুলো দেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটেছে। সব দেশই নিরাপত্তা বাড়াতে চেষ্টা করছে এবং জঙ্গিবাদকে আন্তর্জাতিক অভাব ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দুর্বলতা থাকলেও কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে, তুলনামূলক কম সময়ে বা দ্রুতই জঙ্গি দমন, মোকাবেলা ও জননিরাপত্তা রক্ষায় সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। সরকার নীতিগতভাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নেয়ায় জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদকে প্রত্যাখ্যান করে প্রতিরোধে ছাড়ানোয় এবং কার্যকর কৌশল নিয়ে পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ঐকান্তিক চেষ্টায় এটা অর্জিত হয়েছে। জঙ্গি তৎপরতা বাংলাদেশের সুনামের জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। দেশ যখন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে তখন জঙ্গি নামের দেশ ও জাতির চিহ্নিত শত্রুরা বাংলাদেশ সম্পর্কে অপধারণা সৃষ্টির যে পাঁয়তারা চালাচ্ছে তা এক উদ্বেগজনক ঘটনা। এখন সময় এসেছে দীর্ঘ মেয়াদে জঙ্গিবাদ নির্মূলে উদ্যোগী হওয়া এবং আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সুদৃঢ় মনোবল ও দীর্ঘ মেয়াদি কৌশল নিয়ে আমরা যদি জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে পারি, তাহলে শান্তি ও প্রগতির পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
ষ লেখক : সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব জাতীয় পার্টি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন