শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

অক্লান্ত পরিশ্রমি ভূমিহীন কৃষকের সাফল্যের হাসি

প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আমিনুল হক, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে

আত্মবিশ্বাস উদ্যম আর একনিষ্ঠ শ্রমের বিনিময়ে সেই তরুণ যুবক কৃষক আজ সফলতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নিজের এতোটুকুন জমিও নেই। কিন্তু আছে উদ্যম আর চেষ্টা। এলাকার আশেপাশের পতিত অনেকের জমি বর্গা নিয়ে মাঠে হরেক রকম ফসল আর মৌসুমী ফলনের হাসিতে নিজের সুখ-দুঃখ-হাসি বিলীন করে পুরো পরিবারকে ঘুরে দাঁড় করায় মীরসরাই পৌরসভার নোয়াপাড়া গ্রামের শাহজাহান (২৮) নামের এক যুবক। বাবা আবুল কাশেমও ছিলেন বর্গাচাষি কৃষক। গ্রামের বিভিন্ন জনের জমি চাষ করতেন তিনি। শাহজাহান মীরসরাই পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে। স্কুল জীবনেও বাবার সাথে মাঝে মাঝে মাঠে যেত। পড়া-লেখা চালিয়ে যাবার ইচ্ছা থাকলেও বাবার নুন আনতে পানতা ফুরোয় দেখে কষ্ট হতো। স্কুলের পড়ার খরচ তো দূরে থাক ভাইবোনদের কাপড়-চোপড় আর খাবার ও জোগাড় হচ্ছিল না দেখে কিশোর শাহজাহান নিজে আরো পতিত জমি বর্গা নিয়ে সবজিসহ নানান মৌসুমী কৃষি পণ্য চাষ করা শুরু করলো। শীতকালে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটোসহ নানান সবজি, বর্ষার পূর্ব থেকে আখ চাষ করে চলতি মৌসুমে তা বিক্রি করে। আস্তে আস্তে নিজের চাষাবাদ করা জমিও বাড়াতে লাগলো। এবার ছোট ভাই জাফর ও নিজামকে মাঠে নিজের সাথে কাজে লাগানো শুরু করলো। তাতেও হচ্ছে না দেখে জমিতে চাষাবাদ, ফলন পরিচর্যা ও বিক্রির কাজে সহযোগিতার জন্য কয়েকজন দিনমজুরকে কাজে লাগায় এতে ধীরে ধীরে গুছতে লাগলো বর্গাচাষি দরিদ্র কৃষক বাবার অভাব। ৩ ভাই মাঠে কৃষি কাজ করলেও ৪ বোনের স্কুলে পড়া বন্ধ করেনি ওরা। বোনদের স্কুল শেষে কলেজে পড়িয়ে একে একে বিয়ে দিচ্ছে ভাইরা। ২ বোন বিয়ে দেয়ার পর বাকি দুবোন এখন মীরসরাই ডিগ্রী কলেজে পড়ছে। বাবার ভাঙা কাঁচা ঘরের পাশেই নিজেদের জায়গায় আস্তে আস্তে পাকা ঘর নির্মাণ করা শুরু করলো এরপর। ২২ লাখ টাকা ব্যয় করে ইতিমধ্যে বর্গাচাষি কৃষকের সন্তানরা মাঠের কৃষিপণ্যের আয় দিয়েই নির্মাণ করলো সুন্দর পাকাঘর। এখনো বাহিরের প্রলেপ সহ আরো ১০ লাখ টাকার কাজ বাকি রয়ে গেছে বলে জানায় শাহজাহান। আর এক বছরের মধ্যে ঘরের কাজও শেষ হয়ে যাবে আশা করছে বড় ছেলে শাহজাহান। কৃষক শাহজাহানের আখ ক্ষেতে গেলে সে জানায় তার এসব গল্প। আখক্ষেতে তার সাথে কাজ করছিল ছোটভাই জাফর। আর এক ভাই নিজাম তখন বাজারে আখ বিক্রি করছিল সেদিন। এবার তাদের আখ ক্ষেত সম্পর্কে জানতে চাইলে বললো, এই আখ ক্ষেতটি ৮ গ-া জমিতে করা। এবার এই ক্ষেতে আয় হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। কিছু আখ ভালো হয়নি, আবার কিছু আখ খুবই ভালো হয়েছে। ভালো আখের দামও পাওয়া গেছে বেশ। সাধারণত একটি আখ ৩০- ৫০ টাকা বিক্রি হলেও উন্নতমানের রংবিলাস আখ সাইজেও অনেক বড় হয়েছে আবার খেতেও সুস্বাদু সেগুলো ১৫০ টাকা ও বিক্রি হয়। এই আখটি চায়না প্রজাতির বলে বাজারে বেশ কদর বলে জানায় শাহজাহান। বিভিন্ন তথ্য জানতে গল্প করতে করতে আসার সময় ওদের চাষ করা সুগন্ধি কালো জিরা ধান এর জমির পাশ দিয়ে হেঁটে আসতে মনে হচ্ছিল আমরা যেন হারিয়ে যাচ্ছি কোন সোনালী সুদিন এর পথে যেই দিনগুলো আমরা পেছনে ফেলে এসেছিলাম। কৃষক শাহজাহান আরো জানায়, আখ বিক্রির পরই ফুলকপি, বাঁধাকপি সহ শীতকালীন সবজিতে ব্যস্ত হবে এবার। কৃষক শাহজাহান এখনো বিয়ে করেনি কেন জানতে চাইলে বললো বাকি দুবোন বিয়ে দিয়ে, ঘরের কাজ শেষ করে বিয়ে করবো। একজন কৃষক যুবকের নিজের পায়ে স্বাবলম্বি হবার এমন আদর্শ আমাদের সমাজে অনেক বেকার যুবকদের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে। মীরসরাই উপজেলা কৃষি অফিসার বুলবুল আহমেদ বলেন এমন উদ্যমী যুবক অবশ্যই দেশের জন্য দৃষ্টান্ত। আমাদের দেশ ও জাতির জন্য এমন কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য আমাদের সহযোগিতার হাত সবসময়ই প্রসারিত থাকবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন