গত এক বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন ব্লকে এক ডজনের বেশি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেও অগ্নিকান্ডের রহস্যের কোনো কিনারা হয়নি। এতে তুর্কি একটি হাসপাতালসহ হাজার হাজার শেড পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ক্ষতির সম্মুখীন হয় লাখো রোহিঙ্গা। সর্বশেষ অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার ৪ নম্বর ক্যাম্পে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বারবার এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা রহস্যজনক বলেই মনে করছেন সচেতন মহল। এর পেছনের রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় হতাশায় ভুগছে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পের সাহায্য সংস্থা ও উপকারভোগী রোহিঙ্গারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু তুরস্ক পরিচালিত একটি হাসপাতালসহ বিভিন্ন ব্লকের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এপর্যন্ত ৭ বার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকান্ডের পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র থাকা অস্বাভাবিক নয়। এ বিষয়ে তুর্কি কর্তৃপক্ষ ত্রিফলআরসি ও ক্যাম্প ইনচার্জদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বারবার। তবে এ ব্যাপারে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। অবশ্য ত্রিফলআরসির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানানো হলেও এ পর্যন্ত অগ্নিকান্ডের পেছনের রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। এই কারণে তুর্কি কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। আগামীতে এভাবে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটতে থাকলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তুরস্কের সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে থাকলে বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে উখিয়া টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে তাদের আশ্রয় দেয়। এসময় বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা কামনা করলে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সাথে এগিয়ে আসে তুরস্ক সরকারও। এমনকি তুরস্কের সরকার প্রধান রিসিপ তাইয়্যেব এরদোয়ানের স্ত্রী এমিলি এরদোয়ান সরাসরি এসে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়ে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
২০১৮ সাল থেকেই তুরস্ক সরকার বাংলাদেশ সরকারের সাথে জিটুজি চুক্তির মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিক্ষা, চিকিৎসা, সেনিটেশন ও শেড নির্মাণসহ বিভিন্ন মানবিক খাতে মোটা অংকের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি সরাসরি তুর্কি ইন্টেরিয়র মিনিস্ট্রি এবং বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখাশোনা করে থাকে। ‹আপাদ› নামে একটি তুর্কি সংস্থা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। টিকা, দিয়ানাত এবং কিজলয়া নামের আরো তিনটি তুর্কি সংস্থা জিটুজি চুক্তিতে ক্যাম্পে কাজ করে যাচ্ছে।
এছাড়াও আই ডবলএইচ, ইয়ারদেমেকী, সাদকা ও বশীর নামে আরো চারটি বেসরকারি তুর্কি সংস্থা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন খাতে মানবিক সহায়তার কাজ করে থাকে। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ৯ নম্বর ক্যাম্পে ৩০ শয্যার একটি ফিল্ড হাসপাতাল, ৫ নম্বর ক্যাম্পে আড়াই হাজার শেড, ৮ ডবিøউ ক্যাম্পে ১৩ শত শেড, ক্যাম্প ১২ তে ৬০০ শেড, ১৬ নম্বর ক্যাম্পে সাড়ে ৫০০ শেড ও ৯ নম্বর ক্যাম্পে এক হাজার ২০০ শেড নির্মাণ করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন