কুরআন ও হাদিসের আলোকে সার্বিক জীবন গঠনে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে শেষ হলো দুইদিন ব্যাপী তাবলীগী ইজতেমা। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে আয়োজিত ৩২তম বার্ষিক ইজতেমার ভাষণে আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বলেন, এলাহী বিধান অনুযায়ী সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালিত না হ’লে সুশাসন, ন্যায়-নীতি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়া আদৌ সম্ভব নয়। মানব রচিত বিধান পরস্পরে মারামারি, খুনাখুনি ও দলাদলিতে উদ্বুদ্ধ করে।
তিনি বলেন, আজকে মুসলিম উম্মাহ্র বিপর্যয়ের সবচেয়ে বড় কারণ হলো- পবিত্র কুরআন ও সাহি হাদিস থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া। তারা কুরআন-হাদিসকে একপাশে রেখে নিজস্ব দেশাচার, রসম-রেওয়াজ ও পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য অনুসরণকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে হাজারো শিরক-বিদ‘আত ও কুসংস্কার। অতএব ফিরে আসুন আল্লাহর বিধানের কাছে। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদিসের আলোকে সার্বিক জীবন গঠনে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ হউন। তিনি কুরআনী বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
প্রতিবারের মত এবারো ৩২ তম ইজতেমায় নিম্নোক্ত দাবি সমূহ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় যথাক্রমে: পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদিসের আলোকে দেশের আইন ও শাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে, মানুষের রক্তচোষা সূদভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা বাতিল করে অনতিবিলম্বে ইসলামী অর্থনীতি চালু করতে হবে এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুদি এনজিও ও মহাজনী দাদন প্রথা এবং অফিস-আদালত থেকে ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। দেশের বিভিন্ন শহরে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামী আকিদা ও সংস্কৃতি বিরোধী মূর্তি-ভাস্কর্য ও শহীদ মিনার নির্মাণ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। জঙ্গীবাদের মূলোৎপাটন এবং সামাজিক অনাচার সমূহ প্রতিরোধের জন্য শিক্ষার সর্বস্তরে বিশুদ্ধ ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। মাদরাসা ও স্কুল-কলেজের সিলেবাস থেকে ডারউইনের নাস্তিক্যবাদী বিবর্তনবাদসহ সকল প্রকার ইসলাম বিরোধী মতবাদ প্রত্যাহার করতে হবে। যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধে মদ-জুয়ার অবাধ সয়লাব এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়া থেকে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার ছড়াছড়ি স¤পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। এ সম্মেলন বাংলাদেশের সংবিধানকে পরিপূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষকরণের নামে একশ্রেণীর নাস্তিক্যবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার চক্রান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এ সম্মেলন ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ বন্ধ করে অবিলম্বে শান্তি ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানাচ্ছে। এ সম্মেলন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার উদ্দেশ্যে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।
উল্লেখ্য যে, গত ১০ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ টায় ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়ে ১২ মার্চ শনিবার বাদ ফজর শেষ হয়। ইজতেমায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাযার হাযার মুছল্লী ইজতেমায় যোগদান করেছেন। সংগঠনের আমীর প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত ইজতেমার বক্তব্য রাখেন ‘আহলেহাদিস আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর কেন্দ্রীয় গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল লতীফ, বাংলাদেশ আহলেহাদিস যুবসংঘ-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, সোনামণি পরিচালক ড. আব্দুল হালীম, মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী, মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল মাদানী, মাওলানা আব্দুল হাই মাদানী, মাওলানা মুখলেছুর রহমান মাদানী, ড. ইমাম হোসাইন, ড. আহসানুল্লাহ বিন ছানাউল্লাহ, মাওলানা আব্দুল মান্নান, মাওলানা শফীকুল ইসলাম, হাফেয আব্দুল্লাহ আল-মারূফ প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন