চৈত্রের শুরুতে গরম বাড়তে থাকায় রাজধানীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করায় রোগীর চাপে হিমশম অবস্থা আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ঢাকা কলেরা হাসপাতালে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালে ৩৪১ জন রোগী এসেছেন পেটের পীড়া নিয়ে।
গত দুই দিনেই হাসপাতালে ২৪০৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় কিছুক্ষণ পরপরই অ্যাম্বুলেন্স ও ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনে রোগীরা আসছেন। হিসেব করে দেখা যায় গড়ে ঘণ্টায় ৩৪ জন করে ভর্তি হচ্ছেন। শয্যা সঙ্কুলান না হওয়ায় বাইরে অস্থায়ীভাবে তাঁবু টানিয়ে শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরেই চলছে এ অবস্থা।
গতকাল ডায়রিয়া সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেলে চিকিৎসকরা জানান, হঠাৎ করে গরম চলে আসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কারণে শিক্ষার্থীদের বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় গ্রহণ এবং অনিরাপদ পানির কারণে ডায়রিয়া রোগী বেড়ে গেছে। রাজধানীর উত্তর কাফরুল এলাকার নির্মাণশ্রমিক নজরুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার রাতে ভর্তি হয়েছেন আইসিডিডিআর,বিতে। তিনি জানান, পাতলা পায়খানা কোনোভাবেই না কমায় রাতে কলেরা হাসপাতালে এলে তাকে ভর্তি করে নেওয়া হয়।
আইসিডিডিআর,বির সহকারী বিজ্ঞানী ডা. শোয়েব বিন ইসলাম বলেন, প্রতি বছর গরমের মৌসুমে দৈনিক গড়ে ৭৫০ থেকে ৮০০ রোগী আসে হাসপাতালে। তবে গত কয়েকদিন ধরে তা ১২০০ ছাড়িয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, মোহাম্মদপুর এবং উত্তরা এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছে। রোগীদের বেশিরভাগই কলেরা আক্রান্ত। এবার আঠারো বছরের বেশি বয়সী রোগী বেশি।
কেরানীগঞ্জ থেকে দুই বছরের শিশু ওয়াজিদ ভূঁইয়াকে নিয়ে তার মা এবং নানা এসেছেন আইসিডিডিআরবির হাসপাতালে। ওয়াজিদের মা বলেন, ডায়রিয়া হওয়ার পর স্থানীয় চিকিৎসককে দেখিয়েছিলেন। কিন্তু কমছিল না। শিশু ডাক্তার দেখানোর পর ওষুধে কাজ হয়নি। সেইজন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।
পুরান ঢাকা গেণ্ডারিয়া এলাকার গৃহিনী নিশি তার দুই বছরের মেয়ে মোছা. সাফাকে নিয়ে গতকাল ভোরে কলেরা হাসপাতালে আসেন। তিনি জানান, সাফার জমজ ভাইয়ের ডায়রিয়া হয় গত রোববার। তাকে তিনদিন কলেরা হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার থেকে সাফারও ডায়রিয়া।
তিনি বলেন, বাসায় ওষুধ খাওয়ানোর পরও কোনো উন্নতি হচ্ছে না। আমাদের ওই গলিতে আরও অনেকের ডায়রিয়া হচ্ছে। আমার মনে হয় পানিতে কোনো সমস্যা আছে, এজন্য ডায়রিয়া হচ্ছে। আমার হাজবেন্ডেরও ডায়রিয়া হয়েছে।
আইসিডিডিআরবিতে গত মঙ্গলবার ১২৭২, গত বুধবার ১২৩৩ এবং গত বৃহস্পতিবার ১১৭৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এদিকে একই চিত্র ঢাকা শিশু হাসপাতালের। দূর দূরান্ত থেকে ডায়রিয়া রোগী হাসাপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পুষ্টি, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শফি আহমেদ জানান, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৮০০ থেকে এক হাজার শিশু আসে। তাদের ১০ শতাংশই এখন ডায়রিয়ার রোগী। এ বছর ৬ মাসের কম বয়সী শিশুরাও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ বয়সী শিশুরা মায়ের বুকের দুধ পান করে। সেজন্য ৬ মাসের কম বয়সের বাচ্চার ডায়রিয়া সাধারণত হয় না। কিন্তু এবার আমরা এমন রোগীও পাচ্ছি। হাসপাতালে আসছে, চেম্বারেও ডায়রিয়া নিয়ে আসছে অনেকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন