বিশ্বনাথের বুক চিরে বয়ে গেছে এক সময়ের খড়স্রোতা বাসিয়া নদী। এই নদীর যৌবন ছিল। এ নদী দিয়ে বড় বড় ইঞ্জিন নৌকা, ডিঙ্গি নৌকা, পালতোলা নৌকা ও লঞ্চ চলত। ছিল দেশিয় রুই, কাতলা, বোয়ল, মৃগেল আইড়সহ নানা প্রজাতির মিটাপানির মাছ। কালের পরিবর্তনে আর প্রভাবশালি দখলবাজরা বাসিয়া নদীর দুই তীর দখল করে কেউ নির্মাণ করেছেন বড় বড় দালান আবার কেউ আধাপাকা স্থাপনা। নদীর পূর্ব ও পশ্চিম তীরে রয়েছে কাঁচাবাজার এবং হোটেল রেস্তোরাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে হোটেল, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ময়লা আবর্জনা দেদারছে ফেলা হচ্ছে নদীতে। এসব ময়লা আবর্জনা পচে বিশ্বনাথ একটি দুগন্ধের শহরে পরিণত হয়েছে। বিশ্বনাথ বাজারে আসা পথচারি, শিশু ও স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা দুগন্ধের কারণে নাক, মুখ কাপড় দিয়ে চেপে বাসিয়া ব্রিজ পারাপার হতে হয়। শুধু তাই নয়, বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালতের দরজা জানালা বন্ধ করে থাকা দায়। যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি নদীর পাড়ে বসে ব্যবসা করছেন তারা কতটুকু নিরাপদে আছেন। এই দুগন্ধে একদিকে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ অপর দিকে নানা কঠিন রোগের জন্ম নিচ্ছে। তাই নিরুপায় হয়ে দুগন্ধ সহ্য করতে হচ্ছে ক্রেতা বিক্রেতাসহ সাধারণ মানুষের। এসব যেন দেখার কেউ নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় একাধিকবার আলোচনা করা হলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছেনা। শবজী ব্যবসায়ি তোতা মিয়া ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি লিটন জানান, পঁচা দুগন্ধে নানা রোগ জীবাণু ছড়ায় এটা আমার জানি। কিন্তু জীবন-জীবিকার তাগিদে এই দুগন্ধ সহ্য করতে হচ্ছে আমরা সাধারণ ব্যবসায়িদের। সাংবাদিক আশিক আলীর ৬ বছরের শিশু সিহাব প্রয়োজনে বিশ্বনাথ বাজরে এসে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করল এতো পঁচা গন্ধ কেন। বেশ কয়েকজন পথচারি জানান, দুগন্ধের কারণে বাসিয়া নদীর আশপাশে বা নতুন বাজারে যাওয়া খুবই মুশকিল। এক হোটেল ব্যবসায়ি বলেন, ময়লা ফেলার নিদিষ্ট কোন জায়গা নেই। তাই নদীতে ফেলতে হচ্ছে। বর্ষার সময় এই বাসিয়া ব্রিজে আড্ডা দিতে দেখা যেত নানা সয়সের লোকজনকে। এখন পঁচা গন্ধের কারণে ব্রিজে আর কাউকে আড্ডা দিতে দেখা যায়নি।
সচেতন মহল বলছেন, যারা বিলাস বহুল গাড়ি আর অফিস রয়েছে তারা এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। সাধারণ মানুষ দুগন্ধ ও পরিবেশ দুষনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উর্ধতন কতৃপক্ষের হস্থক্ষেপ চাইছেন।
তবে পৌর কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট স্থানে ময়লার ফেলা বা দুগন্ধ ছড়ানো বন্ধ করতে কোন ব্যবস্থা নেয়ার পদক্ষেপ এখনও গ্রহণ করতে পারেনি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুনু মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, এ ব্যাপারে পৌর প্রশাসকের সাথে কথা বলে শিঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে গত দু’বছর আগে নদী খননের নামে চরের ঘাস ও নদীর ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করে জনগণ ও সরকারের প্রায় কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। বাসিয়া নদীর দুই তীরে অবৈধ দখল উচ্ছেদে ইতিপূর্বে ৪ বার টেন্ডার প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারনে থমকে গেছে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন