বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

১২ দিনে ১৩ হাজার ডায়রিয়া রোগী

৬০ বছরের ইতিহাসে আইসিডিডিআরবিতে সর্বোচ্চ রোগী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০২২, ১২:৩৩ এএম

দেশে ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে : স্বাস্থ্য অধিদফতর
হাসপাতালের ফটক দিয়ে অসংখ্য রোগী ও তাদের স্বজনরা ঢুকছেন। রোগীদের অধিকাংশই সিএনজি ও অ্যাম্বুলেন্সে আসছেন। কিন্তু হাসপাতালের ফটকে গিয়ে পর্যাপ্ত হুইলচেয়ার পাচ্ছেন না। অনেক রোগীকে কোলে করে হাসপাতালের ভেতর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে জরুরি বিভাগের সামনে রোগী ও স্বজনদের ভিড় বেশি দেখা গেছে। রোগীদের তাৎক্ষণিকভাবে ভর্তি করতে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও দৌড়ঝাঁপ করছেন।

গতকাল রোববার সরেজমিনে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) এমনই চিত্র দেখা গেছে। ডায়রিয়ার রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সংস্থাটি। অনেক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত গিয়ে ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। কেউ আবার হাসপাতালের ফটকে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। কেউ ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও সুস্থ হওয়ার আগে তার সিট বাতিল করা হচ্ছে। আইসিডিডিআরবি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতালে শয্যা খালি নেই। হাসপাতালের বাইরে ৭টি তাঁবুতেও রোগীদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। ১২ দিনে ১৩ হাজার রোগী ভর্তি হয়েছে। রোগীদের বেশিরভাগ শিশু ও বয়স্ক। তবে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার বিষয়ে তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই।

যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগ থেকে চিকিৎসার জন্য আইসিডিডিআরবি আসেন নাজির হোসেন (৬০)। কিন্তু হুইলচেয়ার না পেয়ে তাকে মাটিতে রাখেন তার পরিচিতজন মাসুদ। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরও কোনো হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করতে পারেননি তিনি। পরে কোলে করে তাকে হাসপাতালের ভেতর নেওয়া হয়। মাসুদ বলেন, নাজির হোসেন তার সঙ্গে যাত্রাবাড়ীতে হকারি করেন। গতকাল রাত থেকে তার ডায়রিয়া। কিন্তু ঢাকায় তার পরিবারের কেউ নেই। তাই খবর পেয়ে নাজিরকে হাসপাতালে নিয়ে গেছি।

মালিবাগ এলাকায় ভিক্ষা করেন জহিরুল ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার থেকে তার ডায়রিয়া। গত শনিবার সকালে আইসিডিডিআরবিতে ভর্তি হন তিনি। গতকাল সকালে তাকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তখনো জহিরুলের ডায়রিয়া ভালো হয়নি। জানতে চাইলে জহিরুল বলেন, হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর ৪০ মিনিটের মধ্যে দুইবার টয়লেটে যেতে হয়েছে। কিন্তু আমাকে হাসপাতাল থেকে ডাক্তার বের করে দিয়েছে। সঙ্গে মাত্র তিনটা স্যালাইন ও এক পাতা ট্যাবলেট দিয়েছে।

জহিরুলের মতো এমন অসংখ্য রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার আগেই হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে কোনো চিকিৎসক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তারা রোগীদের চিকিৎসা দিতেই ব্যস্ত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইসিডিডিআরবির এক চিকিৎসক জানান, ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। ঘণ্টায় ৬০ জনের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। আইসিডিডিআরবির ৬০ বছরের ইতিহাসে এত রোগীর চাপ তারা দেখেননি। ফলে হাসপাতালের শয্যার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় তাঁবু টানিয়ে ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছে আইসিডিডিআরবি। এখন আইসিডিডিআরবিতে প্রায় ১৩০০ রোগী ভর্তি আছেন।
আইসিডিডিআরবি সূত্র বলছে, সারাবছর দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ ডায়রিয়া রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে রোগীর সংখ্যা কিছু বাড়ে। সাধারণত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা দ্রæত বাড়তে থাকে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে শেষ সপ্তাহে রোগী চ‚ড়ান্তভাবে বাড়ে। কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে।

এদিকে ডায়রিয়ার রোগী বাড়লেও বিশুদ্ধ পানি পান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ডায়রিয়া মোকাবিলা সম্ভব বলে নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র প্রফেসর ডা. নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, রোগের প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসা শুরু করা উচিত। ডায়রিয়াজনিত রোগ বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। আমরা একে মোকাবিলা করতে চাই।

নাজমুল ইসলাম বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ অন্যান্য লজিস্টিকের সরবরাহ রয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সচেতন রয়েছি।
এর আগে দেশে ডায়রিয়ার রোগী বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সংবাদ পাচ্ছি গ্রীষ্ম আসার আগেই পুরো দেশে ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীতে রোগী বেড়েছে বেশি।

উল্লেখ্য, গত ১৬ মার্চ রোগী ভর্তি হয় ১ হাজার ৫৭ জন, ১৭ মার্চ ১ হাজার ১৪১ জন, ১৮ মার্চ ১ হাজার ১৭৪ জন, ১৯ মার্চ ১ হাজার ১৩৫ জন, ২০ মার্চ ১ হাজার ১৫৭ জন, ২১ মার্চ ১ হাজার ২১৬ জন, ২২ মার্চ ১ হাজার ২৭২ জন, ২৩ মার্চ ১ হাজার ২৩৩ জন আর ২৪ মার্চ ১ হাজার ১৭৪ জন।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন