শ্রীপুর (গাজীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা
গাজীপুরের শ্রীপুরের ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াল গড়ের প্রাকৃতিক শালবন কমে যাওয়ায় প্রায় অর্ধশত প্রজাতির বৃক্ষ ও বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির পথে। বন বিভাগের প্রায় অর্ধেক জমিই রয়েছে বেদখলে। বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে তাদেরই যোগসাজসে বনের জমি দখল করে কলকারখানা, বাড়িঘর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করায় বনাঞ্চল কমে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। বন বিভাগের কর্মকর্তারা সরকারের বিভিন্ন সময়ের পদক্ষেপ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের রোষানল থেকে রক্ষা পেতে তথাকথিত মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে থাকে। আর এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাচ্ছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। যার ফলে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে প্রাকৃতিক শালবন। ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে বেশিরভাগ বন্যপ্রাণী ও পশুপাখি। সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় বনায়ন করলেও বাড়ছে না প্রাকৃতিক বন। জানা গেছে, শ্রীপুর ও রাজেন্দ্রপুর ফরেস্ট রেঞ্জের আওতায় ১০টি বিট অফিসের অধীনে ৭০ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমি বেদখলে আছে। শুধুমাত্র কারখানা মালিকরাই ৬শ একর বন ভূমি দখল করে বিভিন্ন কলকারখানা নির্মাণ করে রেখেছে। শ্রীপুর রেঞ্জ অফিসের দেয়া তথ্যমতে, শ্রীপুর সদর বিটের অধীন পৌর এলাকার কেওয়া গ্রামের উস্টোরিয়া, সোলার সিরামিক্স, ইকো মিলস, গ্রীন ভিউ রিসোর্ট, বেড়াইদেরচালা এলাকার প্যারামাউন্ট, গ্রেট ওয়াল, মাধখলা এলাকার অরণ্য কুটির, মিতা টেক্সটাইল, মেঘনা গ্রুপসহ কয়েকটি শিল্প কারখানার কর্তৃপক্ষ প্রায় ৪২ একর জমি ও সাতখামাইর বিটের অধীনে আকন্দ গার্ডেন, ডিএস এগ্রো, কুঞ্জবিথী, তেলিহাটি এলাকার বাংলাদেশ বিল্ডিং, আলিফ অটো, ন্যাগ হ্যাচারি, শিশু পল্লী, মাওনা ফ্যাশন, ডিবিএল, রেক্স অটোব্রিকস, চায়না বাংলা, প্রাইম এইচএস এগ্রো কোম্পানির কর্তৃপক্ষ বন বিভাগের ৫৩ একর বন ভূমি এবং শিমলাপাড়া বিটের অধীনে আরএকে সিরামিক্স রোশওয়া, রিদিশা, ডিবিএল, হংকং, অটেন, হামিম, মুনফিডসহ বিভিন্ন কারখানার মালিকরা প্রায় ১১ একর বন ভূমি জবর দখল করে নিয়েছে। এদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের নয়নপুর এলাকায় ডিবিএল ও তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের আরএকে সিরামিক্সের বিশাল কারখানা পুরোটাই বন বিভাগের জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ইতোপূর্বে বন বিভাগ কর্তৃক ডিবিএল কারখানা উচ্ছেদ করা হলেও শক্ত খুঁটির জোড়ে তা পুনরায় স্থাপন করা হয়। অপরিকল্পিতভাবে বন নিধন করায় প্রায় পঞ্চাশ প্রজাতির বৃক্ষ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বনের পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় বহু আগেই বন ছেড়েছে মেছো বাঘ, শিয়াল, শুকর, বানর, সজারু, ময়না, পেঁচাসহ নানা প্রজাতির পশুপাখি। বিলুপ্ত হয়ে গেছে বনে থাকা উপকারী কীটপতঙ্গ। সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় রোপণ করা হয়েছে অনাবৃত বন ভূমিতে ভূমির উর্বরতা নষ্ট করে এমন বিভিন্ন প্রজাতির আকাশমনি, ইউকেলিপ্টাস, তেতুল, আগর গাছ। মেয়াদ শেষে এসব গাছ কাটা হলেও সৃষ্টি হয় না প্রাকৃতিক বন। বনে ঝোপঝাড় সৃষ্টি করতে গৃহীত বাঁশ, বেত প্রকল্পও অনেক ক্ষেত্রে মুখ থুবড়ে পড়েছে শুধুমাত্র বন বিভাগের অসাদু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে বাড়িঘর নির্মাণ করার কারণে। এ ব্যাপারে শ্রীপুর রেঞ্জ অফিসার মোজাম্মেল হোসেন তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বন বিভাগের জমি দখল করায় আদালতে মামলা চলমান আছে এবং খুব শীঘ্রই উচ্ছেদের আদেশ পাবেন বলে তিনি আশা করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন