মোঃ আবুল খায়ের, পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষের জন্য একমাত্র স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও বাড়েনি স্বাস্থ্যসেবার মান। উল্টো বেড়েছে রোগীদের দুর্ভোগ। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আর.এম.ও, কনসালটেন্টসহ অনুমোদিত ২২ পদ এর বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ১৩ জন ডাক্তার। এরমধ্যেও আর.এম.ও সহ ডেপুটেশনে আছেন ৩ জন। এদের মধ্যে ৪ জন ছাড়া ইউএইচ এন্ড এফপিও সহ বাকি ডাক্তাররা থাকেন উপজেলা সদর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দুরে রংপুর জেলা সদরে। কনসালটেন্টের ১০ পদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মেডিসিন, অর্থপেডিক্স, কার্ডিওলোজি, রেডিওলোজি, ই.এন.টি পদগুলো দীর্ঘদিন ধরেই শূন্য। ডেপুটেশনে থাকা চর্মরোগের কনসালটেন্ট ডাঃ মোস্তফা কবীর সুজন, আর.এম.ও ডাঃ ওবায়দুল আলম এবং ডাঃ মৃদুল কুমার সরকার ৩ জনই সপ্তাহে ৩ দিন পীরগঞ্জে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখেন। এ হাসপাতালে ডাক্তারদের আসা যাওয়ার কোন নিয়মনীতি নেই। মেডিকেল টাইম সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হলেও রংপুর শহরে বসবাসরত ডাক্তারদের অনেকেই সকাল ১১টার আগে হাসপাতালে পৌঁছতে পারেন না। আবার তারা দুপুর ১টার আগেই চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। এছাড়াও কয়েকজন ডাক্তার আবার হাসপাতালে আসেন একদিন পরপর। জানা গেছে, হাসপাতালে নতুন অত্যাধুনিক একটি এক্স-রে মেশিন থাকলেও ৩ বছর ধরে তা অজ্ঞাত কারণে বন্ধ রয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে অপারেটর থেকেও নেই, আছেন ট্রেনিংয়ে। সনোলজিস্টের অভাবে পড়ে আছে অত্যাধুনিক ফোর-ডি আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন। অথচ হাসপাতালে কর্মরত প্রায় সকল ডাক্তারই পার্শ্ববর্তী প্যাথলজিগুলোতে বসে দিব্যি আলট্রাসনোগ্রামের রিপোর্ট করছেন। এ ব্যাপারে কথা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোখলেছুর রহমান জানান, আলট্রাসনোগ্রাম করতে ডাক্তাররা অনারিয়াম চান, আমি কোথা থেকে অনারিয়াম দেব? আবাসিক ম্যাডিকেল অফিসারের দায়িত্বে থেকেও ডাক্তার জিয়াউর রহমান বেলা ২টা থেকেই হাসপাতাল গেট সংলগ্ন একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রাত ১০টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, চেম্বার করার অধিকার রয়েছে তার। তিনি আরও বলেন, আমি প্রয়োজন হলেই যথাসময়ে হাসপাতালে হাজির হই। এদিকে ২০১৩ সালে অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার নির্মাণ করে ওই বছরই মাত্র একটি সিজার করার পরপরই অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার এবং গাইনি ডাক্তারের অভাবে সেটিও বন্ধ রয়েছে গত ৩ বছর ধরে। হাসপাতালে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও একটি বিকল হয়ে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। বকি দুটি সচল তাকলেও ড্রাইভার একজন থাকায় রোগীদের রংপুরে নিয়ে যেতে জনগণকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া করতে হয়। হাসপাতাল চত্বরে মজুদ করে রাখা মাইক্রোবাসগুলোতে অ্যাম্বুলেন্স লেখা থাকলেও সেগুলোতে অক্সিজেনসহ অ্যাম্বুলেন্সের কোন শর্তই পূরণ নেই। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উন্নত মানের একটি জেনারেটর থাকলেও রহস্যজনক কারণে বিদ্যুৎ চলে গেলে সেটি চালু করা হয় না। ফলে বিদঘুটে অন্ধকারে এক ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তখন রোগীর অভিভাবকদের ছুটতে হয় মোমবাতির খোঁজে। কয়েকজন ডাক্তার হাসপাতালে আসেন একদিন পরপর এ ব্যাপারে কথা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোখলেছুর রহমান জানান, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, শূন্যপদগুলো পূরণ না হলে কাক্সিক্ষত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ডেপুটেশনে থাকা ডাক্তারদের পীরগঞ্জ মেডিকেলে ফেরৎ নিয়ে আসা জরুরি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও নৈশপ্রহরী, নার্স ও কর্মচারী সঙ্কটের কারণে নানামুখী সমস্যা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। এসব বিষয়ে স্থানীয় অনেক সুধী মহলের ভাষ্য হচ্ছে- ওসি থানায় থাকেন, ইউএনও উপজেলা পরিষদ চত্বরে থাকেন। তদ্রƒপ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার মত দায়িত্বশীল পদে থেকেও ডাঃ মোখলেছুর রহমান সরকারসহ ডাক্তাররা ক্যাম্পাসে না থাকায় অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত পীরগঞ্জবাসী। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন