শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে
কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় ১২১৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খোলা আকাশের নীচে ও ঝুঁকিপুর্ণ ভবনে চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ ও মেরামতের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আবেদন করেও কোন কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। দ্রুত এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মেরামত অথবা নতুন ভবন নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করা না হলে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। সরজমিনে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের বড় মহিষমুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ঐ বিদ্যালয়ের দুইটি ভবনের মধ্যে একটি ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। গত এক মাস ধরে ঐ ভবনে ফাটলের পাশাপাশি পলেস্টার খসে পড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে ভবনের ছাদের দুইটি বীম ধসে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ অবস্থায় ঐ ভবনে অবস্থিত পঞ্চম শ্রেণি ও শিশু শ্রেণির ক্লাসসহ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষটির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে খোলা আকাশের নীচে শিক্ষার্থীদের পাঠদানসহ ৫ম শ্রেণির সমাপনী মডেল টেস্ট পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। বড় মহিষমুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিয়া আক্তার জানায়, আমাদের ক্লাস রুমের ছাদ খসে পড়ছে। আমরা ভয়ে ক্লাসে ঢুকতে পারি না এজন্য স্যারেরা আমাদের মাঠের মধ্যে ক্লাস নেয়। একই ক্লাসের রনি কুমার বিশ্বাস জানায়, ক্লাস রুমের বাইরে ক্লাস করা ও পরীক্ষা দিতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। পড়া-লেখার ক্ষতি হচ্ছে। আমরা নতুন ভবন তৈরি করে চাই। ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবক রাহেনা বেগম জানান, বাচ্চাকে স্কুলে পাঠিয়ে দুঃচিন্তায় থাকতে হয়। কখন বিল্ডিং ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এজন্য স্কুলে এসে বাচ্চার খোঁজ নিয়ে যাই। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আখের আলী বকসী জানান, দুইটি ভবনের মধ্যে একটি ভবনের দুইটি বীম ও পলেস্টার খসে পড়তে থাকায় ঐ ভবনের অফিস রুম ও ক্লাস বন্ধ করে দিয়ে স্কুল মাঠের গাছ তলায় ১ মাস ধরে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট দাবি করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন ক্লাস রুম ও অফিস রুমের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। বড় মহিষমুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোস্তফা ফজলুল রাব্বী জানান, বিদ্যালয়ের দুইটি ভবনের মধ্যে ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে নির্মিত ভবনটিতে ফাটলের পাশাপাশি ছাদ ও ওয়ালের পলেস্টার ও বীম খসে পড়ছে। যেকোন মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এই আশঙ্কায় ভবনটিতে ক্লাস ও অফিস রুমের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ে ১৮৩জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি ভবনে ক্লাস নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে লিখিত অভিযোগ করেছি। অন্যদিকে রাজারহাট উপজেলার উমর মজিদ ইউনিয়নের মজিরন নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের একটি মাত্র একতলা বিশিষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলার ১৩৯টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হলেও উলিপুরের বড় মহিষমুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাজারহাট উপজেলার মজিরন নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নাম নেই সেই তালিকায়। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এনামুল হক জানান, আমরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট থেকে উলিপুর উপজেলার ৩৫টি, সদরের ৩টি, নাগেশ্বরীর ২৯টি, ফুলবাড়ী উপজেলার ১০টি, ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় ২৯টি, রাজারহাট উপজেলায় ১২টি ও রৌমারী উপজেলায় ২১টিসহ মোট ১৩৯টি খোলা আকাশের নীচে পাঠদান ও ঝুকির্পুণ বিদ্যালয়ের তালিকা পেয়েছি। শুধু চিলমারী ও রাজিবপুর উপজেলার তালিকা পাওয়া যায়নি। আমরা এসব বিদ্যালয়ের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে এ বছরের ১৩ অক্টোবর প্রেরণ করেছি। এখনও এ সংক্রান্ত কোন চিঠি পাওয়া যায়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন