সৈয়দ শামীম শিরাজী, সিরাজগঞ্জ থেকে
সিরাজগঞ্জ শহরের স্বনাম ধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইসলামিয়া সরকারি কলেজ ও মাল্টিলেটারাল স্কুলের বিশাল খেলার মাঠটি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে গত ৫ বছর ধরে মাছ চাষ করছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। এতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় যুবক-কিশোররা খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এটি দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেও কোন কাজে আসছে না। এ দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সামনে বড় আকারের একটি খেলার মাঠ থাকলেও তা বছরের অধিকাংশ সময় থাকে পানিতে নিমজ্জিত। এ কারণে খেলাধুলা, শরীর চর্চা ও বিনোদনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সরজমিনে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দু’টিতে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই প্রতিষ্ঠান দু’টির শিক্ষার্থী ও এলাকার কয়েকজন যুবকরা জানায়, মাঠটি বছরের অধিকাংশ সময় জলাবদ্ধ থাকায় আমরা খেলাধুলা করতে পারছি না। আমাদের কাছে এ মাঠটি হৃদয়ের স্পন্দন। এ মাঠে খেলাধুলা করে মামুন, শাকিলসহ অনেকেই বর্তমানে ঢাকায় জাতীয় ও ক্লাবলীগে খেলছেন। আমরা মাঠটি দখল মুক্ত করে খেলার উপযোগী হিসেবে দেখতে চাই। স্থানীয় ওয়ার্ড আ.লীগের কোষাধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন বলেন, গত ৫ বছর পূর্বেও মাঠটি খেলাধুলার উপযোগী ছিলো। এরপর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ী হিল্টন খন্দকার মাঠের পাশে অবস্থিত স্কুলের একটি পুকুর লিজ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করে আসছেন। তিনি মাছ চাষের পরিধি বাড়ানোর জন্য মাঠের এক পাশে পাম্প বসিয়ে পুকুরের পাশাপাশি কলেজের মাঠটিতেও পানি দিয়ে ভরে রাখেন। এছাড়া পুকুরের চারপাশের ড্রেনের মধ্যে বালির বস্তা ফেলে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ওই মাছ ব্যবসায়ী ড্রেনের কয়েকটি স্থানে ভেঙে ওই মাঠে পানি ঢোকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এতে করে সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠটি পুকুরে পরিণত হয়। এ সুযোগে মাছ চাষি হিল্টন কলেজ মাঠটি পুকুর হিসেবে ব্যবহার করে দেদারসে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। ইসলামিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র ইসমাইল সিরাজী জানায়, বছরের অধিকাংশ সময় কলেজ মাঠে পানি দিয়ে মাছ চাষ করায় আমাদের খেলাধুলা ও শরীর চর্চায় বিঘœ ঘটছে। এ ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষ উদাসীন। কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট এসব সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য একাধিকবার দাবি জানালেও কোন লাভ হয়নি। ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃক নিযুক্ত কোচ একরামুল হক মামুন বলেন, গত ৫ বছর ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী মাছ চাষি হিল্টন খন্দকার মাঠটি কৌশলে দখল করে মাছ চাষ করছেন। ঐতিহ্যবাহী এ কলেজ মাঠে আমরা নিয়মিত খেলাধুলা করেছি। এখন মাছ চাষের কারণে তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। মাঠটি মুক্ত করতে জেলা প্রশাসক, পৌর মেয়রসহ নানা জায়গায় ধর্ণা দিয়েও কোন ফলপ্রসূ সমাধান পাওয়া যায়নি। যখন দেশের যুবক-কিশোররা খেলাধুলা ও চিত্র-বিনোদনের অভাবে মাদক, জঙ্গীবাদসহ সামাজিক নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তখন মাঠ দখল করে মাছ চাষ সুস্থ সমাজ গঠনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। অদৃশ্য কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি দাবি জানান। এ ব্যাপারে মাছ চাষি হিল্টন বলেন, আমি মাল্টিলেটারাল স্কুলের পুকুরটি ৩০ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে আসছি। কিন্তু লোকসান হওয়ায় কলেজ ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পরে দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে ওই খেলার মাঠসহ পুকুরটিতে মাছ চাষ করছি। এজন্য স্থানীয়ভাবে অনেককে ম্যানেজ করতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আরো কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গাজী শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষের অসচেতনতার কারণে এ মাঠটির বেহাল দশা। এর খেসারত দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও এলাকার যুবকদের। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন। পৌর মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা বলেন, মাঠটি সংস্কারের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। এটি স্কুল ও কলেজের মাঠ, আমার পক্ষে এটি সংস্কারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে, ড্রেন ভেঙে মাঠে পানি ঢুকানোর বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে মাল্টিলেটারাল স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের সাথে বেশ কয়েক বার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে, ইসলামিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. এসআইএমএ রাজ্জাক মাঠ লিজ দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি-বাদলের কারণে অল্প কিছু দিনের জন্য মাঠে পানি থাকে। তবে মাঠটি সংস্কারের মাধ্যমে খেলার উপযোগী করার লক্ষে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হলেও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন