দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। হিমালয়ের পাদদেশ ঘেষা এই জেলাটিতে হাজার হাজার মানুষ পাথরকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহ করছে। এমনকি কেউ বাড়ি-গাড়ি অট্টালিকাও করেছেন। কেউ পাথর উত্তোলন করছে, কেউ ভাঙছে, কেউ ট্রাকে লোড-আনলোড করছে, কেউ আবার তাদের আহরিত পাথর বিক্রি করছে। কেউ ব্যবসা করছে, কঠিন পরিশ্রমের পর দিন শেষে তারা পাথরেই যেন স্বপ্ন বুনে চলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার মহানন্দা নদীপাড়ের বাংলাবান্ধা, পাগলিডাঙ্গী, সন্যাসীপাড়া, উকিলজোত, খয়খাটপাড়া, ইসলামপুরসহ আশপাশের প্রায় ৪০টি গ্রাম ও পঞ্চগড় সদর, বোদা, দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষের জীবন-জীবিকা এই পাথরের ওপর নির্ভর। কঠিন পাথরের সঙ্গেই বাঁধা এই মানুষগুলোর জীবন।
পঞ্চগড়ে করতোয়া, ডাহুক, চাওয়াই, মহানন্দা তালমাসহ বিভিন্ন নদী থেকে নুড়ি পাথর আহরণ করে শ্রমিকরা। সকাল থেকে বিকাল অবধি পাথর সংগ্রহ করে পারিশ্রমিক পায় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। যুগ যুগ ধরে নদী থেকে নুড়ি পাথর তুলছেন এখানকার পাথর শ্রমিকরা। এই পাথর বিক্রি করেই সংসার চালায় তারা।
তাদের কাছে জীবন মানেই এই পাথর। যত বেশি পাথর তুলতে পাররে তত বেশি মজুরি। একইভাবে ট্রাকে লোড-আনলোডের শ্রমিকরাও যত বেশি গাড়ি লোড করতে পারবেন, ততবেশি টাকা পাবেন। সমান তালে কাজ করছে নারী-পুরুষ মিলে। শুধু দেশে পাথর উত্তোলনই নয়, বছরে লাখ লাখ টন পাথর প্রতিবেশি দেশ থেকে আমদানি করে মেশিনে ভেঙে পাথরগুলো চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে ক্রমাগত ছুটে চলছে শত শত ট্রাক।
তেঁতুলিয়া উপজেলার সন্যাসীপাড়া গ্রামের পাথরশ্রমিক রাকিব হোসেন বলেন, পাথর সংগ্রহের আয়ে চলে পরিবারের খাদ্য-বস্ত্রসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা। কখনো পাথর তোলা বন্ধ হয়ে গেলেই পরিবারে নেমে আসে দূর্ভোগ। একই কথা বলেন, শ্রমিক সাইফুল, আকবর আলী, ইসমাঈল, মুসা, ওসমানসহ অনেকেই।
পাথর ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ জানান, পাথরের ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ ভালোই চলছি এবং এখানে আরো ১০-১২ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক, গোলাম কিবরিয়া জানান, নদীর বুকে নুড়ি পাথর তুলে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে হাজারও শ্রমিক। স্বপ্ন বুনছে সুখ ও শান্তিময় আগামির।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন