উপকূলীয় জেলা বরগুনার বাসিন্দাদের রাজধানীসহ অন্যান্য জেলায় যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম নৌপথ। এ নৌপথে নতুন নতুন ডুবোচরে ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না যাত্রীদের। বরগুনা-ঢাকা নৌপথে প্রতিদিন ছয়টি লঞ্চ চলাচল করে। এ ছাড়া ঝালকাঠি থেকে সেখানে চারটি লঞ্চ যাতায়াত করে। তিনতলার বড় লঞ্চগুলো নদীতে নাব্য সংকটের কারণে প্রায়ই আটকা পড়ছে। নৌযানগুলো চরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে। অন্তহীন ভোগান্তির শিকার হয় এ রুটে চলাচলরত সাধারণ যাত্রীরা। ডুবোচর অধ্যুষিত এলাকায় ডুবোচরে পর্যাপ্ত সংকেত বাতি না থাকায় প্রতিনিয়ত আটকা পড়ছে বিভিন্ন ধরনের নৌযান। এই রুটের বাঁকেবাঁকে ডুবোচর, কোনপ্রকার সংকেত না থাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। নৌ রুটের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে পর্যাপ্ত বয়া ও বিকন বাতি না থাকার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও কার্যত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি এমন অভিযোগ লঞ্চ মালিকপক্ষের। প্রায়ই চলে নদী খননযজ্ঞ। খননকালিন কিছুদিন নৌচলাচলে অন্তরায় না হলেও স্বল্পদিনের মধ্যেই নদীতে দেখা দেয় নাব্য সংকট। সৃষ্টি হয় নতুন নতুন ডুবোচরের। এতে বেশি বিপদগ্রস্ত হয় বরগুনা-ঢাকা ও আমতলী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী লঞ্চ যাত্রীরা।
এক সূত্রে জানা গেছে, বরগুনার পায়রা নদীর ২৫ এবং বিষখালী নদীর ৩০টি পয়েন্টে ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। বরগুনা-ঢাকা নৌরুটে খাকদোন নদীর মোহনা থেকে বরিশাল পর্যন্ত বিষখালী নদীতে বাইনচটকি, বামনার রুহিতা ও বেতাগী অংশেও সৃষ্টি হয়েছে অনেক ডুবোচর। এসব ডুবোচরের আয়তন ৫ থেকে ১০ বর্গকিলোমিটার।
বেশকয়েক কিলোমিটারজুড়ে অনেক ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে পায়রা নদীতে আমতলী-বরগুনা ফেরিঘাট এলাকায়। নিত্য নতুন নতুন ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় এ স্থান দিয়ে ফেরিসহ নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। চর ক্রমে বিস্তৃত হয়ে পশরবুনিয়া, গুলিশাখালী, জাঙ্গালিয়া, আয়লা, বিঘাই ছাড়িয়ে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ, পায়রাকুঞ্জ, রাজগঞ্জ ও লেবুখালীতে ছড়িয়ে পড়েছে।
নৌপথে যাতায়াতকারী ও নৌযান চালকরা জানান, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বিষখালী ও পায়রা নদীর বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজিং নৌযানচালক বা স্থানীয় লোকজনকে সমন্বয় না করে নিজেদের মতো কাজ শেষ করে চলে যায় খনন কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানটি।
বিষখালী নদীর ডুবোচরে প্রায় ৪০০ যাত্রীসহ গতবছরের ১২ সেপ্টেম্বর আটকা পড়ে এমভি পূবালী-১। উদ্ধারকারী পাঁচ দিন পর উদ্ধার করা সম্ভব হয় লঞ্চটি। এর আগে ১৩ আগস্ট ভোরে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার চরপালট গুচ্ছগ্রামসংলগ্ন বিষখালী নদীতে ডুবোচরে আটকা পড়ে লঞ্চ অভিযান-১০। এতে লঞ্চে থাকা ৪৩৪ যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েন। পর দিন ১৪ আগস্ট রাতে জোয়ারের পানি বাড়লে চর থেকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন লঞ্চচালক। ইঞ্জিনের কম্পনে উল্টো দেবে যায় লঞ্চেরতলা। ৯ দিন পর উদ্ধারকারী জাহাজ লঞ্চটিকে উদ্ধার করে।
পূবালী লঞ্চের চালক সেন্টু হাওলাদার বলেন, ‘এত কিছুর পরও বিআইডব্লিউটিএ ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথে সংকেত বাতির ব্যবস্থা করেনি। একারণে লঞ্চ চালাতে ভয় হচ্ছে। এ নৌপথে পর্যাপ্ত বয়া, বিকন বাতি ও মার্কার সংকটের পাশাপাশি পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডুবোচর নির্ণয়ে সমস্যা হয়। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছি আমরা।’
পূবালী লঞ্চের মাস্টার জহিরল ইসলাম জানান, বরিশালের পর বরগুনা পর্যন্ত ঝালকাঠির গাবখান মোহনা ছাড়া আর কোথাও নৌ-সংকেত নেই। বিশেষ করে বিষখালী নদীর ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়ন এলাকা খুবই ভয়াবহ। এখানে রয়েছে অসংখ্য ডুবোচর। মোড় ঘুরতে গেলেই বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।
বরগুনা জেলা নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এড. সোহেল হাফিজ জানান, সিডরের সময় বঙ্গোপসাগরের তলদেশের বালু ওপরে এসে বিশাল বালির স্তুূপ তেরি করে। তার ওপর ধীরে ধীরে পলি জমে বর্তমানে বিশাল এলাকাজুড়ে ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে।
বরগুনা বিআইডব্লিউটিএ’র বন্দর কর্মকর্তা মামুন অর-রশিদ জানান, ডুবোচরের কারণে পায়রা ও বিষখালী নদীর স্বাভাবিক গতিপথ কমে গেছে। ড্রেজিং করে পায়রা নদী ও বিষখালী নদীর নাব্য ফেরাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন