জাতীয় পতাকার আদলে ধান চাষের পর এবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ধানের মাঠে বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও স্মৃতিসৌধ গড়ে তুলে দেশে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার শিক্ষক নূরে আলম সিদ্দিকী। তিনি ধানশাইল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি ইতোপুর্বে ধান ক্ষেতে জাতীয় পতাকা তৈরি করে আলোড়ন সৃস্টি করেছিলন। লাল রঙের ধান গাছ হয় না। তবে ঘন বেগুনি রঙের এক ধরনের গাছ আছে। আর এ ধানের নাম ‘পার্পল লিফ রাইস’। তিনি ফসলের মাঠে সবুজ ও বেগুনি ধানের চারা দিয়ে তৈরি করেছেন এসব।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরা বেগুনি রঙের ধানের আবাদ শুরু হয় গাইবান্ধায়। ধানের নাম ‘পার্পল লিফ রাইস’। এই ধানগাছের পাতা ও কাণ্ডের রং বেগুনি। চালের রংও বেগুনি। কৃষকদের কাছে এ ধানের পরিচিতি বেগুনি ধান বা রঙিন ধান হিসেবে।
নলকুড়ার সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী ফরসা বলেন, এমন দৃশ্য আগে দেখিনি। দেখে ভালো লাগছে। তাই সেলফি তুলছি। আমরা শুনেছি মাস্টার সাব (কৃষক) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে কাজটা করেছেন। তিনি প্রশংসার দাবিদার। শতবর্ষী ডা. আব্দুল বারী বলেন, খুবই ভালো লাগে। এই দৃশ্য তৈরিতে সুনাম হয়েছে তার। কালিনগর থেকে আসা আলহাজ শরিফ উদ্দিন সরকার বলেন, বন্ধুদের কাছে শুনে এসেছি দৃশ্য দেখতে। খুবই ভালো লাগলো দেখতে।
প্রতাবনগরের আলহাজ রেজায়ুর রহমান মাস্টার বলেন, নূরে আলম মাস্টার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এমন করে ধান লাগিয়েছে দেখতে দেশের জাতীয় পতাকার মত। আগামীতে আমিও চাষ করবো ইনশাআল্লাহ।’
চাষি প্রধান শিক্ষক নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, ইউটিউবে গতবছর ‘পার্পল লিফ রাইস’ ধান চাষ দেখে আগ্রহ জাগে। শালচূড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হান্নানের মাধ্যমে বীজ সংগ্রহ করি। পরীক্ষামূলকভাবে ১০ শতাংশ জমিতে ধান রোপণ করেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ ধানও ভালো হয়। এবারও মোট ৫০ শতাংশ জায়গায় রোপণ করি। মাঝে বেগুনি ধানের বীজও রোপণ করি।’
‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে আমার ধান ক্ষেতকে জাতীয় পতাকা ও বাংলাদেশের মানচিত্র’র আকৃতিতে রুপান্তর করতে দুই জাতের ধান রোপণ করেছি। পাশাপাশি দুইজমিতে বেগুনি ও সবুজ ধান দিয়ে তা তৈরি করেছি। দেশের প্রতি ভালোবাসা ফুটিয়ে তুলতে সব করছি। সামনের বড় আকারে করবো। কৃষকরা ধান বীজ চেয়েছে। দৃশ্য দেখার জন্য মানুষ প্রতিদিনই আসছেন ক্ষেতে, দেখছেন ক্ষেত, তুলছেন ছবি।
ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, উপজেলায় এ ধানের চাষ আগের বছর প্রথম হয়েছিলো। ধানের পুষ্টিমান বেশি। ভাত খেতেও সুস্বাদু। পরিদর্শন করে দেখেছি ক্ষেতটিতে ধানের চারায় বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও স্মৃতিসৌধ করায় সুন্দর হয়েছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, কৃষি অফিসার ও চেয়ারম্যান সাবের কাছ থেকে বিষযটি জেনে আনন্দিত হয়েছি এবং অবসর পেলেই একবার দেখে আসবো। এ ধরণের ফসলের খেতে শিল্পির মত করে ধান চাষের জন্য কৃষককে ধন্যবাদ জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মুহিত কুমার দে জানান, শেরপুরে আগে থেকেই বেগুনি ধান চাষ হচ্ছে। এবার বেশি চাষ হয়েছে। ধান ডায়াবেটিস রোগীদের বেশ জন্য উপকারী। ক্ষেতের মধ্যে বেগুনি ধানের চারার আদলে বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও স্মৃতিসৌধ তৈরি করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। যারা বেগুনি ধানের আবাদ করেছেন আমরা তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। প্রাকৃতিক কোনো সমস্যা না হলে এবার শেরপুরে এধানের বাম্পার ফলন হবে ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন