বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

মোবাইল ছিনতাইয়ের মামলা না নিলে বা গড়িমসি করলে ব্যবস্থা : ডিএমপি

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০২২, ১২:৩০ পিএম | আপডেট : ৫:১৮ পিএম, ৯ এপ্রিল, ২০২২

ছিনতাই বা ডাকাতি হওয়ার পরও কোনো থানা মামলা নিচ্ছে না বা মামলা নিতে গড়িমসি করছে- এমন কিছু হলে অভিযোগ করুন। ডিএমপি কমিশনারের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, এসব ক্ষেত্রে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব ঘটনার সঙ্গে তালিকাভুক্ত কিশোর গ্যাং-এর সদস্যদের সংশ্লিষ্টতাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আজ শনিবার (৯ এপ্রিল) বেলা ১১টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড ডিবি-দক্ষিণ) মো. মাহবুব আলম এ কথা বলেন ।

গত কয়েকদিনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা রমনা ও লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে দেশীয় অস্ত্রসহ ছিনতাইচক্রের ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ৬ ও ৮ এপ্রিল রাজধানীর হাজারীবাগ, চকবাজার, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও শাহবাগ থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন— আব্দুর রহমান শুভ (২২), ইয়াছিন আরাফাত জয় (১৯), বাবু মিয়া (২৮), ফরহাদ (২১), হৃদয় সরকার (২৪), আকাশ (২০), জনি খান (২২), রোকন (১৮), মেহেদী হাসান ওরফে ইমরান (২৭), মনির হোসেন (৪১), জুয়েল (২২), জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে মাইকেল (৩৬), আজিম ওরফে গালকাটা আজিম (৩৫), শাকিল ওরফে লাদেন (২৪), ইমন (২২), রাজিব (২৫), রাসেল (৩২), মিন্টু মিয়া ওরফে বিদ্যুৎ (৩৯), মাসুদ (৩০), তাজুল ইসলাম মামুন (৩০), সবুজ (৩০), জীবন (২৫), রিয়াজুল ইসলাম (২৫), মুন্না হাওলাদার (১৯), শাকিল হাওলাদার (২০), ফেরদৌস (২২) ও আবুল কালাম আজাদ (৩৪)।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে লোহার রড, দা, ছোরা, চাকু, চেতনানাশক ট্যাবলেট ও মলম জব্দ করা হয়। ডিবি দক্ষিণের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, রোজা ও ঈদকে কেন্দ্র করে ছিনতাই, মলম ও টানা পার্টির দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। ডিবি পুলিশও দস্যুতা, ছিনতাই-ডাকাতি চুরির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযান পরিচালনা করে। তিনি বলেন, ডিএমপি কমিশনারের দিকনির্দেশনায় রমজান ও ঈদুল ফিতরের নিরাপত্তা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ডাকাতি, দস্যুতা, চুরি ও অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য প্রতিরোধে গোয়েন্দা রমনা ও লালবাগ বিভাগ বিশেষ অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ডাকাতি ও দস্যুতার প্রস্তুতিকালে ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এই ২৭ জনই পেশাদার ছিনতাইকারী, ডাকাতদলের সদস্য ও অপরাধী। আজ তাদের মধ্যে ২২ জনকে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ২৭ জনের বিরুদ্ধেই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদকসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, তারা দলবদ্ধভাবে ঢাকা শহরের ব্যস্ততম বাস স্টপেজে অবস্থান করে কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে। পরে যাত্রীবেশে বাসে উঠে টার্গেট করা ব্যক্তিকে সুকৌশলে চেতনা নাশক মলম প্রয়োগের মাধ্যমে অচেতন করে। এরপর ভিকটিমের সঙ্গে থাকা নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব আলম বলেন, ঢাকায় ডিজিটাল ডিভাইস বেশি চুরি বা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে রাস্তায় যারা ছিঁচকে চোর-ছিনতাইকারী আছে, তারা মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার টান দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়; তাদের অধিকাংশই মাদকসেবী।

মাহবুব আলম জানান, এখন আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে চুরি হওয়া মোবাইল পুনরায় ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এগুলো করার জন্য একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। বিশেষ করে হাতিরপুলের ইস্টার্নপ্লাজা, মোতালেব প্লাজা এবং গুলিস্তান এলাকাযর বিভিন্ন দোকানে মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। এসব কাজ যারা করে আমরা বিভিন্ন সময় তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিয়েছি, বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। তিনি বলেন, এবার আমরা পরিকল্পনা করেছি, যারা এ ধরনের চোরাই মোবাইলের কারবার করেন, আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে পুনরায় বিক্রি করেন, যাদের মাধ্যমে এসব হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করব। কারণ, চক্রটির সদস্যদের বিরুদ্ধে শুধু ছিনতাই মামলা নয়, মাদক মামলাও রয়েছে।

ছিনতাই ও চুরি করা মোবাইল বিভিন্ন মার্কেটে যাচ্ছে, বিক্রি হচ্ছে— এমন তথ্য ডিবি পেয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়েছি শুধু দেশি মার্কেট শপিংমলগুলোতে নয়, চোরাই মোবাইল যাচ্ছে দেশের বাইরেও। বিশেষ করে ছিনতাই হওয়া আইফোনগুলো দেশের বাইরে পাঠানো হয়।

ছিনতাই করা মোবাইল বিকিকিনিতে কারা জড়িত- জানতে চাইলে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, অনলাইনে যে কেউ বিক্রি করতে পারে। যেমন— বিক্রয় ডটকমে যদি কেউ বিজ্ঞাপন দেয় তাহলে সেখানে ক্রেতা পাবে। যারা এ ধরনের মোবাইল কেনেন তারা হয়রানির শিকার হন। তাই উচিত হলো, প্রকৃত ডিস্ট্রবিউটরদের কাছ থেকে মোবাইল কেনা। অভিযোগ রয়েছে, রাস্তায় ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে থানায় গেলে পুলিশ মামলা নিতে চায় না— এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, এমনটা হতে পারে। অনেকে চুরি হয়েছে নাকি হারিয়ে গেছে তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন না। তখন স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ চুরির মামলা না নিয়ে হারিয়ে যাওয়ার জিডি নেয়। ক্ষেত্র বিশেষে ছিনতাইয়ের পর মামলা রেকর্ড না হওয়ার প্রবণতা আছে, এটা সত্য। বিশেষ করে মোবাইলের ক্ষেত্রে। তবে পরে তদন্তে যদি এটা জানা যায় যে মোবাইলটা ছিনতাই হয়েছিল বা টানা পার্টির কাজ, তখন মামলা হয়।

মাহবুব আলম বলেন, যদি কোনো বিশেষ অভিযোগ পাওয়া যায় যে কোনো থানা মামলা নিচ্ছে না বা নিতে গড়িমসি করছে, ডিএমপি কমিশনারের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং সেটা আমরা নিচ্ছি। এ পর্যন্ত কতগুলো মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি; মোবাইল উদ্ধার করছি, থানা পুলিশও উদ্ধার করছে। সংখ্যাটা বলা যাচ্ছে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন