শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

সড়ক পাশের ৫ হাজার গাছ কর্তন অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. আবু শহীদ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) থেকে

ফুলবাড়ীতে ১নং এলুয়াড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলানা মো. নবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ওই ইউনিয়নের গ্রামীণ রাস্তার দু’পাশের প্রায় ৫ হাজার গাছ কর্তনের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়ন পরিষদের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা রাস্তার দু’পাশে লাগানো এসব গাছ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে সুবিধাভোগীদের বরাত দিয়ে চেয়ারম্যান সাহেব কেঁটে সাবাড় করলেও প্রশাসন এখনও নীরব। বেআইনি পন্থায় গত ১ মাস যাবত এসব গাছ কাটার মহোৎসব চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়ায় হতবাক এই এলাকার মানুষ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ১নং এলুয়াড়ী ইউনিয়নের খাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশ দিয়ে ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খাজাপুর গ্রামের অম্বরিশ রায় চৌধুরীর বাড়ি থেকে ইসাহাক আলীর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৩শ গাছ, রোকেয়ার মোড় থেকে বারাই পাকা রাস্তা পর্যন্ত প্রায় ১৮শ’ গাছ, বারাই লিংক সড়ক থেকে পশ্চিমদিকে বড়গাছা মানিকের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ১৫শ’ গাছ এবং হারিজের মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে ফরিদপুর/শ্রীরামপুর হয়ে রাজখ-ার ভেতর দিয়ে শালগ্রাম মোবাইল টাওয়ার পর্যন্ত প্রায় ১৪শ’ গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে। এদিকে গাছ লাগানোর প্রাথমিক পর্যায়ের সমিতি ঊষার আলোর সভানেত্রী (বর্তমানে বিলুপ্ত) শ্যামলী রানী জানান, বড়গাছা এলাকার গাছগুলো কাটার ব্যাপারে ২ মাস আগে সমিতিতে মিটিং করে চেয়ারম্যানের নিকট গাছ কাটার রেজুলেশন তারা পেশ করেন। এরই প্রেক্ষিতে ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা মো. নবিউল ইসলাম তাদেরকে গাছ কাটার অনুমতি দেন। সেই মোতাবেক গত ১ মাস আগে ওই এলাকার গাছগুলো কেটে বিক্রি করে চেয়ারম্যান সাহেবকে ইউনিয়ন পরিষদের ২৫ ভাগ বুঝিয়ে দেন সমিতির সদস্যরা। একইভাবে খাজাপুর যুবক উন্নয়ন সমিতির (বর্তমানে বিলুপ্ত) মদন জানান, চৌধুরীপাড়া থেকে ইসাহাকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে লাগানো গাছগুলো কর্তনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব সমিতির সকল সুবিধাভোগীরা চেয়ারম্যান সাহেবের নিকট পেশ করলে তিনি গাছ বিক্রির জন্য ক্রেতা ঠিক করতে বলেন। পরবর্তীতে সমিতির সদস্যরা ক্রেতাদের নিয়ে গাছের মূল্য নির্ধারণের জন্য চেয়ারম্যানের শরণাপন্ন হন। এরপর চেয়ারম্যান নিজে গাছ বিক্রি করে সমিতির সদস্যদের ন্যায্য পাওনা মিটিয়ে দেন এবং পরিষদের ২৫ ভাগ টাকা রসিদ বই ছাড়াই কেটে নেন। এ বিষয়ে বনবিভাগের মধ্যপাড়া রেঞ্জের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, সামাজিক বনায়নের গাছ কাটতে হলে অবশ্যই বনবিভাগের কাছে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করতে হয়। চিঠি প্রাপ্তির পর বনবিভাগ গাছের মূল্য নির্ধারণসহ যাবতীয় কর্মপন্থা ঠিক করলেই কেবলমাত্র গাছ বিক্রির প্রক্রিয়া করা যায়। কিন্তু এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো প্রকার চিঠি প্রদান করা হয়নি। এ বিষয়ে ১নং এলুয়াড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা নবিউল ইসলাম বলেন, ‘গাছ কাটার বিষয়ে আমি কাউকে কোনো অনুমতি দেইনি’। তবে সমিতি ভিত্তিক রাস্তার দু’পাশে লাগানো গাছগুলো কর্তনের জন্য সমিতির সদস্যদের দাবি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি গাছ কাটার বিষয়টিতে জড়িত নই, তারপরেও বিরোধী দলের চেয়ারম্যান হওয়ার কারণে আমাকে নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করা হচ্ছে। গাছ কাটার বিষয়ে কিছু না জানলেও গাছ বিক্রির শতকরা ২৫ ভাগ টাকা ইউনিয়ন পরিষদের নামে কীভাবে জমা নিয়েছেন, প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি (চেয়ারম্যান সাহেব) কোনো সদুত্তর দেননি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. এহেতেশাম রেজা বলেন, গাছ কাটার বিষয়ে চেয়ারম্যান সাহেব আলোচনা করেছেন মাত্র, কিন্তু গাছ কাটার কোনো প্রকার অনুমতি তাকে দেয়া হয়নি। কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমতি ছাড়া চেয়ারম্যান সাহেব গাছগুলো কীভাবে কাটলেন বিষয়টি তিনি তদন্ত করে দেখবেন বলে ইনকিলাবকে জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন