সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকট চলছে এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায়। বিদেশি ঋণের বোঝায় ভেঙে পড়েছে দেশটির অর্থনীতি। তাই এখন বিশ্বজুড়েই আলোচনায় শ্রীলঙ্কার এই করুণ পরিণতি। একদিকে অর্থাভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারছেন না শ্রীলঙ্কানরা, অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার কিনতে ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলারের প্রস্তাব দিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষধনী ইলন মাস্ক। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে মানুষের মধ্যে। কেউ বলছেন, মাস্ক চাইলে একাই শ্রীলঙ্কার সব ঋণ শোধ করে দিতে পারেন।
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারের নয় শতাংশ শেয়ার কিনে কিছুদিন আগে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন ইলন মাস্ক। কিন্তু এরপর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়, ঠিক কী করতে চান টেসলা প্রধান। অবশেষ জানা গেছে তার উদ্দেশ্য। টুইটারের পুরো মালিকানা কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ এই ধনী।
মূলত টুইটারের বোর্ডে আসতে চেয়েছিলেন ইলন মাস্ক। কিন্তু সে বিবেচনা থেকে সরে এসে ৪ হাজার ১০০ কোটি (৪১ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারে টুইটারকে কেনারই প্রস্তাব দিয়ে দিলেন তিনি।
সম্প্রতি টুইটারের ৯ শতাংশ শেয়ার কেনার কথা জানান মাস্ক। ইলন মাস্ক টুইটার কেনার প্রস্তাব দেওয়ার পর এটির শেয়ারের দাম ১২ শতাংশ বেড়ে গেছে।
মাস্ক বলেন, ‘আমার প্রস্তাবটি সেরা ও চূড়ান্ত। এ প্রস্তাব যদি গৃহীত না হয়, তবে শেয়ারহোল্ডার হিসেবে আমার অবস্থান বিবেচনা করতে হবে।’ তিনি মনে করেন টুইটার পরিবর্তন হওয়া উচিত। বর্তমান কাঠামোয় টুইটারের উন্নতি সম্ভব নয়, তাছাড়া এটি মানুষের চাহিদাও পূরণ করতে পারবে না। এমন কথা জানিয়ে টুইটারের চেয়ারম্যান ব্রেট টেইলরের কাছে চিঠিও দিয়েছেন এলন মাস্ক।
ইলন মাস্কের এই প্রস্তাবের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে শ্রীলঙ্কা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কৌতুক করছেন, কেউ সমালোচনা। স্ন্যাপডিল সিইও কুনাল বাহল টুইট করেছেন, ইলন মাস্ক টুইটার কিনতে চান ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে। শ্রীলঙ্কার ঋণ ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। তিনি দেশটি কিনে নিতে পারেন আর নিজেকে ‘সিলন মাস্ক’ বলতে পারেন (সিলন শ্রীলঙ্কার পূর্বনাম)।
টুইটার কেনার বদলে শ্রীলঙ্কাকে কিনে নিতে ইলন মাস্কের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন মাসুদ জাহিদ নামে কলম্বোর এক বাসিন্দা। তিনি বলেছেন, আপনি এর (টুইটার) বদলে শ্রীলঙ্কা কিনতে পারেন? আমরা এই মুহূর্তে ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার দিয়ে চালিয়ে নিতে পারবো। তবে কেউ কেউ এ ধরনের পরিস্থিতিতে মোটেও খুশি নন। তাদের মতে, মাত্র একজন ব্যক্তি একটি দেশের সব ঋণ পরিশোধ করে দেওয়ার মতো ক্ষমতাবান হওয়া সম্পদ পুঞ্জিভূতকরণের প্রমাণ এবং এটি মোটেও শুভ নয়।
মূলত ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে ভুগছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা। দেশটির চারদিকে এখন শুধুই হাহাকার। চলছে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট। কাগজের অভাবে স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে শ্রীলঙ্কা। কারণ, কাগজ আমদানির মতো বৈদেশিক মুদ্রা তাদের কাছে নেই। বিদেশি ঋণের ভারে আজ জর্জরিত দ্বীপরাষ্ট্রটি। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় ঠেকেছে, তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয়ও মেটাতে পারছে না। যার ফলে জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে।
গত দুই বছরে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। চলতি বছর তাদের প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার বৈদেশিক ঋণের কিস্তি রয়েছে, যার মধ্যে জুলাই মাসেই রয়েছে ১০০ কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ডের কিস্তি। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় আপাতত সব ধরনের বিদেশি ঋণ পরিশোধ স্থগিত ঘোষণা করেছে দেশটি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন