কুমিল্লার মুরাদনগরে প্রশাসনের নাকের ডগায় মাটি বহনকারী ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলে জনসাধারণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অনবরত অবৈধ ট্রাক্টর দিয়ে পলি মাটি বহন করায় রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, অন্যদিকে কমে যাচ্ছে রাস্তার স্থায়ীত্ব। রাস্তাগুলো ক্ষত-বিক্ষত হয়ে ধুলোময় রাস্তায় পরিণত হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলে পাকার ওপর কাদার আবরণ তৈরি হয়ে রাস্তাটি পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে অবৈধ ট্রাক্টর রাস্তাগুলোকে মরণফাঁদে পরিনত করছে। বিষয়গুলি দেখেও যেন না দেখার ভান করছে প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কুলুবাড়ি-মধ্যনগর সড়ক দিয়ে হঠাৎ করে প্রায় একমাস ধরে জমি থেকে মাটিকাটার উৎসব পড়েছে। প্রতিদিন মধ্যনগর থেকে ওই মাটি অবৈধ ৩৫/৪০টি ট্রাক্টর দিয়ে ছিলমপুর ইত্যাদি ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পাকা সড়ক ধুলাময় হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ে পথচারীরা। এতে করে জনস্বাস্থ্য মারাত্নক হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়ছে। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক শিশু শিক্ষার্থী, অ্যাম্বুলেন্স, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, সিএনজি ও ভ্যানসহ বিভিন্ন প্রকার যান চলাচল করে। বেপরোয়া গতির ট্রাক্টরের কারণে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা প্রতিনিয়ত আতংকে থাকে। পাকাসড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ হয়ে দু’পাশ ডেবে গেছে। এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাগুলো স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়। ফলে নানান যানবাহন সিøপ কেটে পাশের খালে কিংবা খাদে পড়ে যেতে প্রায়ই শোনা যান।
এ বিষয়ে ইত্যাদি ইটভাটার মালিক মাইনুদ্দিনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে বেশ কয়েকজন ট্রাক্টর মালিক বলেন, আমরা সকলকে ম্যানেজ করেই মাটি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। রাস্তাগুলোর বেহাল দশার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, গাড়ি চলাচল করার জন্যই সরকার রাস্তা করে দিয়েছে। ভেঙে গেলে আবার নতুন করে করবে।
রাস্তার পাশের একাধিক বাড়ির মালিক বলেন, ধুলোবালিতে আমরা অসুস্থ্য হয়ে পড়ছি। কার কাছে গেলে স্বস্তি পাব এমন কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না। শোলাপুকুরিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য আবুল খায়ের ও মধ্যনগর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, অবৈধ ট্রাক্টর চলাচলে বাঁধা দেয়ায় আমরা চাঁদাবাজি মামলার হুমকির শিকার হয়েছি।
এ সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী সিএনজি চালক সোহেল মিয়া বলেন, ইটভাটার মাটি রাস্তায় পড়ে থাকে, সরানো হয় না। সামান্য বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কোন কোন সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় আমাদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমুল আলম বলেন, ধুলাবালিযুক্ত রাস্তায় অবাধে মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়াও এই ধুলাবালি নাশিকা দিয়ে প্রবেশ করায় জনসাধারণের মাঝে শ্বাসকষ্ট রোগ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কুমিল্লা আদালতের এসিস্ট্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটর এড. সৈয়দ তানভীর আহমেদ ফয়সাল বলেন, অবাধে মাটিকাটা অবৈধ, পরিবেশ নষ্ট করছে অবৈধ ট্রাক্টরে, লাইসেন্স বিহীন শিশু চালকের হাতে ঝড়ছে প্রাণ। জনগণের চলাচলের রাস্তা নষ্ট করে অবৈধভাবে ট্রাক চলাচল আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে পুলিশ ও প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় জনজীবনে দুর্ভোগ শুধু বাড়বেই।
প্রশিক্ষণ, কাগজপত্র ও রোড পারমিট ছাড়া অনুমোদনহীন গাড়ী লাইসেন্সবিহীন অপ্রাপ্তরা চালানোর কারনেই এ ধরণের দুর্ঘটনা ঘটছে। ফিটনেস বিহীন এবং দক্ষ চালক ছাড়া কোন ভাবেই যেন যানবাহন রাস্তায় নামতে না পারে এ ক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসন আরো কঠোর হতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে।
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ইতোমধ্যে মধ্যনগর থেকে ছিলমপুর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তাটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামত করা হয়েছে। জনসাধারণের স্বার্থে রাস্তাটি রক্ষার্থে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি পরিবহন বন্ধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বলেন, ওই রাস্তায় ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ করে দেয়ার কথা। না হয়ে থাকলে বিষয়টি আমি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন