শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

ফুলবাড়ীতে দর্জিপাড়ায় বেড়েছে ব্যস্ততা

মো. আবু শহীদ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৬ এএম

করোনা মহামারীর পর অনেকটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে সবকিছু, ব্যবসায়ীরাও এর বাইরে নয়, ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাড়াতে ঈদুল ফিতর কে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর শহরের দর্জিপাড়ার কারিগররা।

দিন-রাত সেলাই মেশিনের শব্দে ঈদে আগমণী বার্তা বইছে মানুষের মাঝে। এই ঈদে ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ, ছোট বড় সকলে নতুন জামা কাপড় পরে। সেই পছন্দসই নিত্য-নতুন ডিজাইনের নতুন পোশাক বানাতে দর্জির দোকানগুলোতে ভিড় শুরু করছেন তারা।

সরেজমিনে পৌর বাজারের বস টেইলার্স, ডন টেইলার্স, সোসাইটি টেইলার্স, ভিআইপি টেইলার্স, মা টেইলার্সসহ বিভিন্ন টেইলার্সের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব টেইলার্সেই নতুন জামা কাপড় তৈরি করতে ভিড় জমাচ্ছেন নারী, পুরুষ, শিশুসহ নানা বয়সের গ্রাহকরা। উৎসব আসলেই দর্জির দোকানগুলোতে যেমন নারী-পুরুষের পদচারণা বাড়তে থাকে দীর্ঘ করোনা প্রার্দুভাব কাটিয়ে এবার আবারও বিপণী বিতানগুলোতেও তরুন-তরুণী ও বিভিন্ন বয়সের নারীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তৈরিকৃত পোশাক অনেক সময় শরীরের সাথে পুরোপুরি মানানসই হয় না, ফলে অনেকে পিস কাপড়ে দর্জির সেলাই করা পোশাকের প্রতি আগ্রহ থাকে বেশি। এদিকে দর্জিরা এখন নতুন অর্ডার না নিয়ে, পূর্বের গ্রাহকদের সময়মতো অর্ডার দেয়ায় ব্যস্ত।

ক্রেতারা জানান, ছেলেমেয়েদের চাহিদা অনুযায়ী ভাল কাপড় কিনে পছন্দের পোশাক তৈরির জন্য দর্জির দোকানে এসেছেন। কেউ পছন্দ করেন তৈরিকৃত পোশাক, আবার নিজ পছন্দের ডিজাইনে তৈরি করা পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এক্ষেত্রে তরুণ-তরুণী আর বিভিন্ন বয়সের নারীর সংখ্যাই বেশী।

দর্জি কারিগর নূর আলম, উষা রানী ও পিংকি রায় জানান, বিভিন্ন কাজের ওপর ভিত্তি করে কাজের মজুরি পান তারা। তবে এবার কাজের মজুরি বাড়িয়ে দিয়েছেন টেইলার্স মাস্টাররা। এ কারণে কারিগররাও এবার মজুরি বেশি পাচ্ছেন।

বস টেইলার্সের স্বত্বাধীকারী মো. মাজেদুর রহমানসহ অন্যান্য টেইলার মাস্টাররা জানান, সারা বছর উৎসব বাদেও স্কুল ড্রেস তৈরির অর্ডার হয়ে থাকে, তবে করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকটাই ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়েছে তাদের। এ বছর ঈদ কে সামনে রেখে ক্রেতারা কাপড় কিনে বিভিন্ন দর্জির দোকানে তাদের পছন্দের পোশাক বানাচ্ছেন। এতে করে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াবেন তারা। একই কথা বলেন কাপড় ব্যবসায়ী শওকত আলীসহ বিভিন্ন বিপনি বিতানের ব্যবসায়ীরা। এবছর কাপড়ের দাম একটু চড়া, পাইকাড়ী বাজারে সিন্ডিকেটের কারনেই অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর মূল্য বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে দাবি কাপড় ব্যবসায়ীদের।

এদিকে দর্জি কারখানাগুলোতে অতিরিক্ত কারিগর নিয়োগ করে গভির রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক পোশাক তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কারিগরা। যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পোশাক সরবরাহ করা যায়। কারিগরদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় মানসম্পন্ন বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক তৈরির জন্য গ্রাহকরাও ছুঁটছেন শহরের পছন্দ মত মানসম্পন্ন টেইলার্সে।

বিভিন্ন দর্জির দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের অর্ডার নিতে ব্যস্ত। কেউ কেউ অর্ডার নিচ্ছেন, কেউ অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

আনন্দ টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী আনন্দ চন্দ্র সরকার জানান, এবার সাধারণত রমজানের আগেই থেকে কাজের চাপ বেড়ে গেছে। ফলে অর্ডার কম নেয়া হয়েছে। ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে মজুরি নেয়া হচ্ছে। একইভাবে প্রিন্স টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী ধীরেন্দ্র নাথ ও লক্ষণ টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী লক্ষণ চন্দ্র রায় বলেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক ফ্যাশন ডিজাইনের পোশাক বানানোর কারণে ক্রেতারা এখানে আসেন। ঈদে বাড়তি চাপ থাকে। তবে পর্যাপ্ত কাজ পাওয়ায় বর্তমানে অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

দর্জির দোকানে আসা কয়েকজন জানান, এবছর কাপড়ের দাম বেশি পাশাপাশি তৈরি মজুরিও বেড়ে গেছে, সে কারণে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ফুলবাড়ী ব্যবসায়ী সমিতি নেতা সহকারী অধ্যাপক মো. শেখ সাবির আলী জানান, করোনার কারণে দু’বছর ধরে ব্যবসায় চরম সংকটে পড়তে হয়েছে। তবে সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ায়, এবছর কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করছে ব্যবসায়ীরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন