টানা দুইদিন দফায় দফায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন সাংবাদিকসহ আহত হন শতাধিক লোক। দফায় দফায় টানা দুইদিন চলা এ সংঘর্ষে ওই এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। প্রশ্ন উঠেছে, ইটপাটকেল ছোড়া, ককটেল বিস্ফোরণের পাশাপাশি রামদা, হকিস্টিক, লাঠি-রড নিয়ে হেলমেট পরে বেপরোয়া মারধর করলো কারা? তবে হামরাকারী যারাই হউক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া বলে বলে জানিয়েছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমে।
পুলিশ ক্লুলেস ঘটনা খুঁজে বের করে এবং রহস্য উন্মোচন করে জানিয়ে তিনি বলেন, নিউমার্কেটের সংঘর্ষের ঘটনাতো সবার সামনে ঘটেছে। এ বিষয়ে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি এ কথা বলেন। গতকাল রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পুলিশের বার্ষিক আজান, কেরাত ও রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ শেষে তিনি এ কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, শুধু সিসিটিভি ফুটেজ নয়, প্রত্যেক সাংবাদিকের ক্যামেরায় ফুটেজ আছে। একটু ধৈর্য ধারণ করুন, পুলিশ তদন্ত করছে, নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, যারা এ ধরনের আচরণ করেছেন তারা যারাই হোন ভবিষ্যতে এ ধরনের আচরণ থেকে সতর্ক থাকবেন। সংঘর্ষে দুর্ঘটনা ঘটেছে, আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এসব বিষয়ে পুলিশের যেসব আইনগত ব্যবস্থা সেগুলো আমরা অবশ্যই দেখবো। নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলজের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ থেকে সবাইকে বিরত থাকার জন্য আহŸান জানাচ্ছি। এ ধরনের ঘটনা সবারই পরিহার করা উচিৎ। এ ধরনের কাজ দেশ পরিপন্থি। দেশ ও দেশের বাইরে জাতি হিসেবে এ ধরনের ঘটনা যথাযথভাবে রেপুটেড করে না। সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদেরকে রাজনৈতিক বিবেচনায় করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, এ বিষয় আমার জানা নেই। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ যারা হামলা ও অন্যায়ের শিকার হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের জন্য আমাদের তরফ থেকে যা করা দরকার আমরা তার সবকিছু করবো।
এদিকে, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের দাবি, হামলা যারা চালিয়েছেন তারা তাদের লোক নয়। হামলাকারীরা তৃতীয় পক্ষের কেউ। অ্যাম্বুলেন্সে হামলা করার ঘটনাগুলো তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতির দাবি আরও জোরদার করেছে। এমনকি ব্যবসায়ী নেতারাও বলছেন, সাংবাদিকদের ওপর ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলা কোনো ছাত্র বা ব্যবসায়ীর কাজ হতে পারে না। এখানে তৃতীয় পক্ষ থাকতে পারে। ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষও সংঘর্ষের পেছনে উসকানির কথা বলেছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সংঘাত বাধিয়ে কে কীভাবে ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছিল, তার কারণ খুঁজছে পুলিশ।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ বেশ কয়েকজন হকারকে চিহ্নিত করেছে, যারা সহিংসতায় জড়িত ছিলেন। একাধিক ফুটেজে ঘুরেফিরে তাদের চেহারা দেখা গেছে। সাংবাদিকদের ওপর ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলাসহ বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ ও পথচারীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন তারা। দফায় দফায় টানা দুইদিনের বেশি সময় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কারা উত্তাপ ছড়িয়েছে, তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এর মধ্যে নানা বয়সী কয়েকশ লোক হেলমেট পরে সংঘাতে জড়ালে তাদের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় কতটুকু রাজনৈতিক ইন্ধন কাজ করেছে, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে ঢাকা নিউমার্কেটের দুই ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারীদের বাগবিতÐা থেকে সূত্রপাত হওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনার প্রভাব মুহূর্তেই কীভাবে বিরাট এলাকার কমপক্ষে ২২টি মার্কেটে ছড়িয়ে পড়েছে, তার কারণ অনুসন্ধান করছেন গোয়েন্দারা।
এদিকে,গত বুধবার সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত তিনজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা হলেন ঢাকা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের নাসিম, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের লিটন ও পদার্থবিদ্যা বিভাগের আবদুল্লাহ আল মাসউদ। চিহ্নিত তিনজনই ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী বলে জানা গেছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার সময় নাসিমের গায়ে নিজের নাম লেখা জার্সি। মাসউদের সবুজ রঙের টি-শার্ট পরা। আর মেরুন রঙের শার্ট পরা যুবকের নাম লিটন। তিনজনই ঢাকা কলেজের ফরহাদ হলের ছাত্র। অনুসন্ধানে জানা যায়, নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত ওই মার্কেটের দুটি ফাস্টফুডের দোকানের দুই কর্মচারীর ঝগড়া থেকে। ভিডিও ফুটেজে বাপ্পী নামে একজনকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি নিউমার্কেটের ওয়েলকাম ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারী।
রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ অনেকের সঙ্গে কথা বলেছে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যবসায়ী ও ছাত্রদের কাছ থেকে তৃতীয়পক্ষের কথা আমরাও শুনেছি। অতি উৎসাহী বেশ কয়েকজন হামলাকারীকে আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার পর র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যারা এ ঘটনায় উসকানি দিয়েছে ও সরাসরি হামলা চালিয়েছে তাদের গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন