বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

পঞ্চগড় এখন অশান্ত বাড়ছে হত্যাকাণ্ড

পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০২ এএম

এক সময়ের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ এলাকা পঞ্চগড়। হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠেছে জেলাটি। গত ষোল মাসে সাতাশটি হত্যার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। বেশিরভাগই ঘটনা ছিনতাই, জমির বিরোধ, পারিবারিক কলহ, মাদক সেবনের কারণে ঘটেছে। হত্যার সাথে জড়িতরা কিশোর ও যুবক। একের পর এক সংঘটিত হচ্ছে নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এছাড়াও চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা ও মাদকসেবন, অপহরণসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে গেছে মানুষ। তারা ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বাড়ছে আতঙ্ক। যদিও অধিকাংশ অপরাধীদের হত্যাকাণ্ডের পর অল্প সময়ের মধ্যে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তার পরও ন্যায় বিচারের অনিশ্চিয়তায় ভুগছে ভিকটিমের পরিবারবর্গ।

বিভিন্ন সংবাদপত্রে পাওয়া খবর ও গোয়েন্দা শাখার তথ্য অনুযায়ী, গত বছর জানুয়ারি মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০ জনকে হত্যার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১, মার্চে ৪ ও এপ্রিল মাসে ২ জনকে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে।
সর্বশেষ বোদা উপজেলায় ২০ এপ্রিল যৌতুকের টাকা না পেয়ে মরিয়ম বেগম (২৫) কে ইফতারির সাথে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় মরিয়মের বাবা কিনার উদ্দীন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ স্বামী আনিছুর রহমানকে আটক করেন।
এর আগে তেঁতুলিয়া উপজেলায় ঠুনঠুনিয়া গ্রামে মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১ জুলাই দুলাল (১৯) কে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এ ঘটনায় (২৪) বছরের এক যুবককে আটক করে পুলিশ। দেবনগর ইউনিয়নে ব্যাটারি চালিত ভ্যান ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে আলমগীর হোসেন নামের এক যুবককে ২৭ মার্চ রাতে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এ ঘটনায় পুলিশ ইউসুফ ও রফিকুল ইসলাম কে আটক করেন। জমি সংক্রান্ত বিরোধে চানমিয়া কে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় এগারোজনকে আসামি করে বিজ্ঞ আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার ঘাটিয়ারপাড়া এলাকায় ৫ মার্চ গোলাম আযম (৫৩) এক ব্যবসায়ীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাড়িতেই হত্যা করে। এ ঘটনায় সন্দেহজনক তার স্ত্রী ও পুত্র কে আটক করে পুলিশ। হারিভাসা এলাকায় (১৩) আগস্ট রোকেয়া বেগম (৪০) নামের এক নারীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। শহরের মিঠাপুকুর এলাকার জয়তুন নেশা ৩ এপ্রিল তার ছেলে শহিদুল ইসলাম মাদকের টাকা না পেয়ে গলায় ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।
২ ডিসেম্বরে শাবানা আক্তার আসমা (২২)কে গলা টিপে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তার স্বামী আতিকুর রহমান, সোলেমান আলী, ননদ খাদিজা বেগমকে আটক করে পুলিশ।
বোদা উপজেলায় ১৮ ডিসেম্বর লতিফুল (২২) নামে এক অটোচালকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে অটো ছিনতাইয়ের জন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে। রবিন (৩৫) কে ১৪ জুলাই জমি সংক্রান্ত জেরে হত্যা করে। এ ঘটনায় ১৩ জনকে বিবাদী করে বোদা থানায় মামলা দায়ের করে। জমি সংক্রান্ত জেরে ১০ ফেব্রুয়ারি সুফিয়া বেগমকে হত্যা করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
খোরশেদুর রহমান চৌধুরী বাবলা (৫৫) কে জমি সংক্রান্ত জেরে ২১ এপ্রিল হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। জমির বিরোধে সংঘর্ষে ১৪ জুলাই রবিন (৩৫) কে হত্যার অভিযোগে ১৩ জনকে আসামি করে বোদা থানায় মামলা দায়ের করে।
দেবীগঞ্জ উপজেলার জাহানারা বেগম (৩০) নামের এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা হয়েছে। পরে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে থানায় মামলা দায়ের করে ভিকটিমের বাবা হাছেন আলী। দুইজন আটকের পর জামিন পেলেও, ওই ঘটনার পর এলাকার দু’জন যুবক পলাতক রয়েছেন। চর তিস্তাপাড়া এলাকার জাহেদা বেগমকে জমি সংক্রান্ত জেরে ১৮ জুন হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ইসরাইল হোসেনকে আটক করে পুলিশ।
আটোয়ারী উপজেলায় ফাহিদ হাসান সিফাত (১৮) নামের এক যুবককে মেরে মাটি চাপা দেয়। পরে ওই ঘটনায় মতিউর রহমান (১৯) কে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গত ২১ এপ্রিল ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে মাকে বশিলা দিয়ে কুপিয়ে আঘাত করে, পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার ছেলে যতীন চন্দ্রকে আটক করে পুলিশ। যৌতুকের টাকা না পেয়ে ১ সেপ্টেম্বর বানেছা বেগম (২১) কে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে, স্বামী শাহীন আলমসহ তিনজনের নামে থানায় মামলা দায়ের করে। আরোও ১৩ এপ্রিল পাট ক্ষেতের উপর দিয়ে যাতায়াতকে কেন্দ্র করে মারপিট হয়। পরে মইনুল ইসলাম মোটরসাইকেল যোগে আটোয়ারী রওয়ানা দিলে পথে আনিছুরের লোকজন তাকে পিছনে ধাওয়া করলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় থানায় হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করে।
দেবীগঞ্জে জাহানারা হত্যার বাদী হাছেন আলী জানান, মেয়ে হত্যার চৌদ্দ মাসেও অপরাধীরা ধরা ছোয়ার বাইরে। পুলিশ এখনো আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়নি। আবার আমাকেই পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি আপোষ করার কথা বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিশোর-যুবক দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের বিপথগামী হওয়ার আগেই সামাজিক আন্দোলন জরুরি। অভিভাবকরাও রয়েছেন বেখেয়াল। সন্তান কোথায় সময় কাটায়, কী করে, তার কোনও খোঁজ নেন না তারা।
আইন সহায়তা ফাউন্ডেশন (মানবাধিকার সংস্থা) পঞ্চগড় জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রসুল বকস মানিক জানান, মূলত সামাজিক, অর্থনীতি ও রাজনীতি অবস্থা মানুষের মনের ওপর যখন বিরূপ প্রভাব পড়ে ঠিক তখনই মানুষ খুনের মতো ঘটনা ও উগ্র আচরণ করে। এজন্য প্রয়োজন আইনের সঠিক প্রয়োগ ও বিচার দ্রুত সম্পাদন করা। নৃশংস কাজ থেকে মানুষের ধ্যান ধারনা সরিয়ে নিয়ে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন