মুহাম্মদ আবু মুসা, জয়পুরহাট থেকে
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আলুপ্রধান জেলা জয়পুরহাটে এবার মৌসুমের শুরু থেকেই আলুবীজের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে নির্ধারিত মূল্যের অনেক বেশি দিয়ে আলুবীজ কিনছেন কৃষকরা। আবার তিন বস্তা বীজের সাথে নির্ধারিত কোম্পানির সরবরাহ করা বোরন ও জিংক কিনতে কৃষকদের বাধ্য করা হচ্ছে। জয়পুরহাটের কালাই ও ক্ষেতলাল উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে আলুবীজ নিয়ে কৃষকের এমন দুরবস্থার খবর পাওয়া গেছে। কৃষকদের অভিযোগ, সঠিক সময়ে আলুবীজ পাওয়া না গেলে তারা উৎপাদিত আলুর লাভজনক মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন। এজন্য লাভের আশায় নির্ধারিত মূল্যের অনেক বেশি দিয়েও তারা আগাম চাষের জন্য আলুবীজ সংগ্রহে ডিলারদের পেছনে হন্যে হয়ে ঘুরছেন। জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার এক লাখ একর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে আলুবীজের চাহিদা প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) আলুবীজের চাহিদা ১০ হাজার মেট্রিক টন হলেও বরাদ্দ মিলেছে প্রায় ৮০০ মেট্রিক টন। যার ৫৭০ মেট্রিক টন আলুবীজ সরবরাহ করা হয়েছে বিএডিসির ১১৪ জন ডিলারের মাধ্যমে। বিএডিসির এসব সরবরাহ করা কাডিনাল, ডায়মন্ড, অ্যাস্টারিকস ও ক্যারেজ জাতের প্রতি কেজি আলুর মূল্য এ গ্রেড ৩০ টাকা ও বি গ্রেড ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর গ্র্যানুলা আলুর প্রতি কেজি এ গ্রেড ২৬ ও বি গ্রেড ২৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সঙ্কট থাকায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলুবীজ পাচ্ছেন না কৃষকরা। ডিলারদের কাছে অগ্রিম টাকা জমা দিয়ে দিনের পর দিন ঘুরেও ৩০ টাকা কেজির আলুবীজ তাদের কিনতে হচ্ছে ৪০ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে বিভিন্ন প্রকার আলুবীজ বাজারে ব্যাপকভাবে আমদানি হলেও কৃষকের কাছে বিএডিসির পরই ব্র্যাক আলুবীজ নির্ভরযোগ্য। কৃষক পর্যায়ে ব্র্যাকের প্রতি কেজি ডায়মন্ড জাতের আলুবীজের মূল্য ৪০-৪২ টাকা এবং অ্যাস্টারিক ৪৩-৪৫ টাকা কোম্পানি নির্ধারণ করলেও সঙ্কটের কারণে বাজারে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা কেজিতে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ব্র্যাকের ১২০ কেজি (৩ বস্তা) আলুবীজের সাথে তাদের সরবরাহ করা বোরন ও জিংক কিনতেও বাধ্য করা হচ্ছে কৃষকদের। বীজের সঙ্কট থাকায় কৃষকরাও নিরুপায় হয়ে ব্র্যাকের সরবরাহ করা বোরন ও জিংকের প্যাকেট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। ক্ষেতলালের মুন্দাইল গ্রামের কৃষক সালাউদ্দিন আহম্মেদ অভিযোগ করেন, সরকার আলুবীজের মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও ডিলাররা সঙ্কটের ধোঁয়া তুলে ইচ্ছে মতো দাম হাঁকছেন। ডিলাররা ৪০ কেজির এক বস্তা আলুবীজের দাম নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা চার থেকে পাঁচশ’ টাকা বেশি নিচ্ছেন। তিনি জানান, ব্র্যাক কোম্পানি আলুবীজের সাথে তাদের সরবরাহ করা বোরন ও জিংক কিনতে বাধ্য করছেন কৃষকদের। চাহিদার সুযোগ নিয়ে বীজের সাথে বোরন, জিংকও বিক্রি করছেন তারা। ডিলাররা দুই প্যাকেটের দাম নিচ্ছেন আড়াইশ’ থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত। ইটাখোলা বাজারের বেসরকারি বীজ ডিলার হাবিবুর রহমান জানান, ব্র্যাকের অফিস থেকেই নিয়ম করে দিয়েছে বীজের সাথে বোরন ও জিংক বিক্রি করার জন্য। এজন্য তার মতো ব্র্যাকের অন্য ডিলাররাও ৩ বস্তা বীজ নিলে কৃষকদের কাছে ব্র্যাকের এক প্যাকেট বোরন ও এক প্যাকেট জিংক বিক্রি করছেন। কৃষকরা নিতে না চাইলে তাদের বীজ না দেয়ার নির্দেশনা ব্র্যাক থেকেই দেয়া হয়েছে বলে তিনি তার প্রমাণপত্র তুলে ধরেন। বগুড়া অঞ্চলের (বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলা) বীজ ডিলার সমিতির সভাপতি আজাহার আলী ম-ল জানান, বগুড়া অঞ্চলের জন্য বিএডিসির ৩ হাজার ১০০ মেট্রিক টন আলুবীজ বরাদ্দ হয়। জয়পুরহাটে ওই বরাদ্দের মাত্র ৫৭০ মেট্রিক টন আলুবীজ ১১৪ জন ডিলারের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। কৃষকদের চাহিদার কারণে বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ডিলাররা সরকারি মূল্যের অনেক বেশি দিয়ে আলুবীজ সংগ্রহ করে তা বাজারে বিক্রি করছেন। এজন্য কৃষকদের বেশি মূল্যে আলুবীজ কিনতে হচ্ছে। ব্র্যাকের আঞ্চলিক বিক্রয় কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ জানান, কৃষকদের স্বার্থ বিবেচনা করেই ৩ বস্তা আলুবীজের সাথে দুই প্যাকেট বোরন ও জিংক বিক্রির জন্য ডিলারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জয়পুরহাট জেলার বিএডিসি’র সিনিয়র সহকারী পরিচালক শফিউল আলম জানান, জেলায় শুধু বিএডিসির আলুবীজের চাহিদা ১০ হাজার মেট্রিক টন। সেখানে ১১৪ জন ডিলারের মাধ্যমে ৫ টন করে মোট ৫৭০ মেট্রিক টন আলুবীজ সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া কিছু কৃষকদের মাঝে ২ টন হারে সরাসরি সরবরাহ করা হয়েছে। সবকিছু মিলে বিএডিসি থেকে এবার জেলায় প্রায় ৮০০ মেট্রিক টন আলুবীজের বরাদ্দ পাওয়া গেলেও জেলায় বিএডিসি ও অন্যান্য জাতের আলুবীজের চাহিদা প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন