রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে উদাসীন, স্প্রেতেও মরে না যশোর পৌরবাসী মশার যন্ত্রণায় দিশেহারা

শাহেদ রহমান, যশোর থেকে | প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০২২, ১২:০২ এএম

যশোর পৌরবাসী মশার জন্য দিশেহারা। পৌর কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে উদাসীন, তাই শেষ ভরসা ছিল বাজারের কয়েল ও স্প্রে। কিন্তু তাতে মশা মরছে না। নামি-দামি ব্রান্ডের কয়েল জ¦ালিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না মশার উপদ্রব্য। এখন দিনেও মশা উপদ্রব্য বেড়েছে। এতে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
শীত মৌসুমের পর থেকেই মশার উৎপাত বাড়তে থাকে। এখন তা চরমে উঠেছে। দিনের বেলায়ও অফিস কিংবা বাসা বাড়িতে কয়েল জ¦ালিয়ে রাখতে হচ্ছে। সন্ধ্যা নামতেই ঝাঁকে ঝাঁকে ঘরে ঢুকে পড়ছে মশা।
পালবাড়ীর তেতুঁলতলার বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম জানান, ‘গরমে মশারির ভেতর ঘুমানো যাচ্ছে না। যেকারণে দিন-রাতে কয়েল জ¦ালিয়ে রাখছি। কিন্তু মশা মরছে না। মশার কামড়ে সারা শরীর ফুলে উঠছে। অসহনীয় যন্ত্রণায় দিশেহারা হয়ে পড়েছি। পরিত্রাণের উপায়ও খুঁজে পাচ্ছি না।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের অধিকাংশ ড্রেনে জমে থাকা ময়লা- আবর্জনার পানিতে অবাধে প্রজনন কেন্দ্র বানিয়েছে মশা। এসব ড্রেন পরিস্কারে পৌর কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। পানির প্রবাহ না থাকায় মশার প্রজনন বেড়ে গেছে।
মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা মামা রফিক জানান, মশার কামড়ে আমার একমাত্র সন্তানের শরীরে ঘা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসক জানিয়েছেন, মশার বিষে শিশুর এ অবস্থা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মার্চ মাসের প্রথম দিকে শহরের কিছু এলাকায় স্প্রে করতে দেখেছি। কিন্তু মশার উৎপাত কমেনি। বিষ ছড়ানো নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
খড়কি কবরস্থান এলাকায় একটি মেসে ভাড়া করে থাকেন কলেজছাত্র জাহিদ, শামীম ও সবুজ। তারা বলেন, ২৪ ঘন্টাই ১৫ টাকার কয়েল পুড়ছে, কিন্তু মশার উপদ্রব্য ক্রমাগতভাবে বাড়ছেই। তাদের অভিযোগ প্রথম শ্রেণির পৌরসভা যশোর কিন্তু মশা মারার মতো শক্তি-সামর্থ্য নেই, এটি দুঃখজনক।
যশোর বেজপাড়ার মনিরুজ্জামান নামে এক বাসিন্দা জানান, সারাদেশে গত দুই-তিন বছর ধরে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এর আগে যশোরেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তাই আগেভাগেই দায়িত্ব প্রাপ্তদের মশার জন্ম ও বংশ বৃদ্ধির কোনো সুযোগ না দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ বলে মত দেন তিনি।
যশোর পৌরসভা মশক নিধন অভিযান চালায় মার্চের মাঝামাঝি সময়ে।
খড়কির বাসিন্দা আখতার হোসেন শ্রমিকদের সর্দার। তার নেতৃত্বে ৯টি ওয়ার্ডে বিষ স্প্রে করেন শ্রমিকরা। এ কাজে ফগারমেশিন, হ্যান্ড স্প্রে ও পাওয়ার মেশিন ব্যবহার করার কথা, কিন্তু শুধুমাত্র হ্যান্ড স্প্রে করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক জানান, আকিক নামে যে বিষ দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ, তার এক বোতলের দাম ৭১৫ টাকা। কিন্তু কয়েক দফা হাত বদলের সময় সিংহভাগ চোরাইপথে বিক্রি হয়ে যায়। বিশেষ করে গরু ও মুরগীর ফার্ম মালিকরা ৭১৫ টাকা দামের বোতল কিনে নেন ৩শ’ টাকায়। বরাদ্দের সবটুকু বিষ স্প্রে করা হলে মশার ‘ছা’ও থাকার কথা না।
পৌর কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকি না থাকায় শ্রমিকরা সিংহভাগ বিষ বিক্রি করে সামান্য পরিমাণ বিষ স্প্রে করে। যেকারণে মশা কমে না। যশোর পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন জানান, মার্চের মাঝামাঝি সময়ে মশক নিধন অভিযান পরিচালিত হয়েছে। আপাতত নতুন করে স্প্রে করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি অকপটে স্বীকার করলেন আমরা যে বিষ স্প্রে করি তাতে মশা মরে না। এরমধ্যে মশক নিধনের পরিকল্পনাও নেই- যোগ করেন আজমল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন