বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আজ ১৬১তম জন্মবার্ষিকী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর/ আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ তাই এত মধুর/ কত বর্ণে কত গন্ধে, কত গানে কত ছন্দে/ অরূপ, তোমার রূপের লীলায় জাগে হৃদয়-পুরু/ আমার মধ্যে তোমার শোভা এমন সুমধুর....। বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি পরতে পরতে এমনি রস মিশিয়ে এই সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

আজ পঁচিশে বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিস্ময়কর প্রতিভা। মাইকেল মধুসূদন দত্তকে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের আধুনিকতার প্রবর্তক। রবীন্দ্রনাথ সেই আধুনিকতাকে বিচিত্র বিন্যাসের মধ্য দিয়ে সহজ ও সুগমভাবে উপস্থাপন করেছেন সকল বাঙালির হৃদয়স্পর্শী করেন। তাঁর ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। আর তাঁর সঙ্গীত সুরপিয়াসী বাঙালির মনে বাজে নানা মাত্রায়। বাংলা ভাষার প্রতিটি শাখায় তাঁর বিচরণ অনন্য।
সাহিত্য সৃষ্টির পাশাপাশি তিনি বাংলা ভাষাকে করেছেন সহজ ও সর্বজনবোধ্য এবং একই সঙ্গে গতিশীল। যে ভাষাকে নিয়ে বাঙালি আজ বিশ্বপরিমণ্ডলে গৌরব করে সে ভাষা সৃষ্টির উৎসশক্তিও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ছিলেন অনন্ত জীবন এবং প্রকৃতির চিরন্তন সৌন্দর্যের কবি। বিশ্বকবির গানে জীবন ও জগতের সুর বাজে এভাবেই- ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু বিরহ-দহন লাগে/ তবুও শান্তি তবু আনন্দ তবু অনন্ত জাগে’।
বাংলা সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য এই কবির ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মানবিকতা, প্রেম ও শুভবোধের কবি আদর্শ পুরুষ রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসার অর্ঘ্য প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করছে নানা অনুষ্ঠান।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৬০ বছর আগে ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ কলকাতায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯১৩ সালে তাঁর গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। বাঙালির আত্মিক মুক্তি ও সার্বিক স্বনির্ভরতার প্রবক্তা, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষের মূল নায়ক কাব্যগীতির শ্রেষ্ঠ দ্রষ্টা ও ঋষি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
যাঁর লেখা, দর্শন, চিন্তা, চেতনা তথা বহুমাত্রিক আলোকচ্ছটায়, ঔজ্জ্বল্য ও মহিমায় বাঙালি জাতিসত্তা হয়েছে মহিমান্বিত ও গৌরবান্বিত। সেই কবিরই ১৬১তম জন্মজয়ন্তী আজ। আর তাই বাঙালির প্রাণে লেগেছে ভিন্ন হাওয়া। দিনটিও বাঙালি উদযাপন করবে হৃদয় উৎসারিত আবেগ ও শ্রদ্ধায়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দিবসটি আজ পালিত হবে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে।
বাঙালির এই কবি এমন এক সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন যখন রাষ্ট্র ছিল পরাধীন, চিন্তা ছিল প্রথাগত ও অনগ্রসর, বাংলাভাষা ছিল অপরিণত। তিনিই একাধারে এই ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বমানে উন্নীত করার পাশাপাশি জাতির চিন্তাজগতে আধুনিকতার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। বাঙালির মানস গঠনে পালন করেছেন অগ্রদূতের ভূমিকা। সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে অভিসারী হয়ে ওঠার প্রেরণা যোগানোর মধ্য দিয়ে বাঙালি মননকে বিশ্বমানে উন্নীত করে জাতিকে চিরকৃতজ্ঞতাবোধে আবদ্ধ করে গেছেন।
কবিতা, কথাশিল্প, নাটক, অনুবাদ, চিত্রকলা, সঙ্গীত, সুর সর্বক্ষেত্রেই তাঁর পথচারিতার পদচিহ্ন প্রবল প্রতাপে লেগে আছে বাঙালির জীবন, সংস্কৃতি ও সাহিত্যে। তিনি একসঙ্গে উনিশ ও বিশ শতকের দায়কে সামনে রেখে সৃষ্টি করেছেন সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, সুর প্রভৃতি। কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীতে সরকারি পর্যায় ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন আয়োজন করেছে নানা অনুষ্ঠান। পত্রিকাগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র, চ্যানেলগুলো প্রচার করেছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। এবার জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে-‘মানবতার সঙ্কট ও রবীন্দ্রনাথ।’
এ বছর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে। আজ বেলা আড়াইটায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি। স্বাগত বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর।
কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমি তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনী এবং কবির উপর নির্মিত ডকুমেন্টারি মাসব্যাপী প্রচারের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়াও ঢাকাসহ কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন