ফেনীতে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ফসল ঘরে তোলা নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষক। কৃষকরা বলছেন, শ্রমিকের অতিরিক্ত মজুরি, রোগবালাই আক্রমণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। এছাড়া ধানের বাজার দর কম হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়তে হবে বলে দাবি করছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ৩০ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যেখানে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩০ হাজার ১১৫ হেক্টর। সূত্র আরও জানায়, আবাদকৃত ফসলের মধ্যে ৪ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড এবং ২৫ হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমিতে রুপসী জাতের ধান রোপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার ৪৫ শতাংশ ধান কর্তন হয়েছে।
পরশুরাম উপজেলার বীরচন্দ্র নগর গ্রামের কৃষক মো. হাফেজ উদ্দিন বলেন, গত ৭ দিন আগে ১৩শ’ টাকা করে ৬ জন শ্রমিক দিয়ে ৬০ শতক জমির ধান কর্তন করেছি। সাথে সকালের নাস্তাসহ তিনবেলা খাবারের খরচ। অন্যদিকে বাজারে একমণ ধান ৬৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে হলে আমাদের মতো ক্ষুদ্র কৃষকরা টিকতে পারবে না। আরেক কৃষক হাসমত আলী বলেন, গত কয়েকদিন জমিতে পোকার আক্রমণে বেশির ভাগ জমির ধান চিটা হয়ে গেছে। সাথে ২ মণ ধান বিক্রি করেও একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি দেয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এমন ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব না।
সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ এলাকার কৃষক মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, সুদিনের আশায় কৃষকরা বারবার স্বপ্ন দেখে ফসল বুনলেও কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কখনো বা ফসল রোগাক্রান্ত আর ফলন মন্দা। অন্যদিকে শ্রমিকের অধিক মজুরি দেয়ার পরও বাজারে মেলে না ধানের ন্যায্যমূল্য। ধানের দাম প্রসঙ্গে নুরুল ইসলাম নামের এক ধান ব্যবসায়ী বলেন, ধানের দাম কমানোর বিষয়ে আমাদের হাত নেই। মিলাররা যেভাবে ক্রয় করে আমরাও সে অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করি। বর্তমানে ধানের জাত ভেদে সাড়ে ৬শ’ টাকা থেকে ৭৮০ টাকা পর্যন্ত ক্রয় হচ্ছে বলে তিনি জানান।
পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সামছুল হুদা বলেন, ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ ধান কর্তন হয়েছে। আশা করি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রোগবালাইয়ের কারণে কৃষক বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকের মজুরি তুলনামূলক কিছুটা বেশি হলেও কৃষক ধান কাটায় বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন। এতে কৃষকদের সরকারও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। তিনি বলেন, কৃষকদের ধান কাটায় প্রায় ১২ রকমের মেশিন রয়েছে। এগুলো ক্রয়ে সরকার কিছু অংশ ভুর্তুকি দিচ্ছে। কিন্তু কৃষকরা কয়েকজন মিলে গ্রুপ করতে না পারায় তাদের অর্থ সংকট হয়। যার ফলে এ প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন