শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

৩২ নিত্যপণ্যের ১৯টির দাম বেড়েছে

কারসাজি ঠেকানো আইনের বাস্তবায়ন না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের ঠকাচ্ছে : গোলাম রহমান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০২২, ১২:০২ এএম

রমজান মাস চলে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু পণ্যমূল্য কমেনি; বরং আরো বেড়ে গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রাজধানীর বাজারের ৩২ ধরনের খাদ্যপণ্যের দামের ওঠা-নামার হিসাব রাখে। সংস্থাটির গত এক মাসের তথ্যে দেখা যায় এসময়ে বাজারে ৩২ খাদ্যপণ্যের মধ্যে বেড়েছে ১৯টি পণ্যের দাম। কমেছে শুধু একটি পণ্যের দাম। স্থিতিশীল রয়েছে ১২টির।

টিসিবি বলছে, এক মাসের ব্যবধানে বাজারে মোটা চাল, আটা, ময়দা, সয়াবিন, পাম অয়েল, মসুর ডাল, ছোলা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদ, আদা, জিরা, তেজপাতা, গুড়া দুধ, চিনি ও ডিমের দাম বেড়েছে। বাজারে শুধুমাত্র কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম, যা গত মাসের থেকে বর্তমানে কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে টিসিবির তথ্যে বাজারে একমাসের ব্যবধানে মুগডাল, অ্যাংকার ডাল, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনিয়া, রুই মাছ, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস, খেজুর ও লবণের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। অর্থাৎ এসব পণ্য রমজানে যে দামে বিক্রি হয়েছে, এখনো সেই দামেই বিক্রি হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে, সেগুলো সর্বনিম্ন দেড় শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ প্রায় ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। যার মধ্যে সবেচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এছাড়া বাজারে খোলা আটা-ময়দা, ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, ডিম, আদা, রসুন ও আলুর দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২৯ শতাংশ পর্যন্ত। এ সব পণ্যই একটি পরিবারের জন্য প্রতিদিনের অপরিহার্য।

খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্রেতাদের চরম বিপর্যয় অবস্থায় পড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে, সরবরাহ কম তাই দাম বাড়তি। ভুক্তভোগী ক্রেতারা ব্যবসায়ীদের এসব কারণকে অজুহাত বলছেন। তাদের অভিযোগ, ‘ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ক্রেতাদের পকেট কাটছেন।’ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি স্বীকার করেছেন ব্যবসায়ীরা কথা রাখেননি। তাদের বিশ্বাস করে ভুল করেছি। এরমধ্যে সয়াবিন তেল নিয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানে সারাদেশে ব্যবসায়ীদের গুদাম থেকে হাজার হাজার টন ভোজ্যতেল উদ্ধার হওয়ার পর ক্রেতারা ব্যবসায়ীদের ওপর আরও বিশ্বাস হারিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছেন, যার মধ্যে অন্যতম- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হয়েছে বলে দাবি তাদের। এছাড়া ডলারের দাম বাড়াসহ কিছু পণ্যের আমদানি-রপ্তানিতে জটিলতা তৈরি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ভোক্তারা এক কেজি পণ্য ক্রয় করতে গিয়ে আধা কেজি ক্রয় করে ঘরে ফিরছেন। উত্তর বাড্ডা বাজারে কেনাকাটা করতে আসেন মোছা. সামিয়া ইয়াসমিন। বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যতই বুঝ দিক, তাদের সিন্ডিকেট আমাদের কাছে পরিষ্কার। বাজারে জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ানো ব্যবসায়ীদের কারসাজি। বিশ্ববাজারে এক টাকা বাড়ার খবর পেলে তারা পাঁচ টাকা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা কী ধরনের ব্যবসা? পরে বিশ্ববাজারে কমলেও আমাদের এখানে ব্যবসায়ীরা আর দাম কমান না।’

যাত্রাবাড়ি আড়ত, ফকিরেরপুল বাজার, কাপ্তানবাজার ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ক্রতাদের দাবি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের যেমন নজরদারি, সেটা নেই। দেশে এখন যে নজরদারির চর্চা আছে, সেটা লোক দেখানো। পণ্যের দাম বেড়ে যখন বাজারে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তখন হুটহাট কিছু অভিযান চলে। যে পণ্যের দাম বাড়ে, শুধু সেই পণ্যের জন্য দু-চারজন বিক্রেতাকে মাঠপর্যায়ে জরিমানা করে দায়সারা হয়।

জানতে চাইলে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে দেশে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে যৌক্তিকভাবে যা বেড়েছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এখন সব ইস্যুকে সামনে রেখে বাড়তি মুনাফার সুযোগ খোঁজেন ব্যবসায়ীরা। তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়ীদের নানান অজুহাত, যার শেষ নেই। কারণে-অকারণে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের নাজেহাল করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের এ কারসাজি ঠেকাতে দেশে বেশি কিছু বিদ্যমান আইনেও আছে। তবে সেসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নেই।

বাজারে শুধু খাদ্যপণ্য নয়, বেড়েছে নিত্যব্যবহার্য অন্যান্য পণ্যের দামও। সাবান, টুথপেস্ট, ডিটারজেন্ট, নারিকেল তেল, সেভিং ফোম, টালকম পাউডার, রেজারসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। ব্যয় সামলাতে না পেরে অনেকেই নিত্যব্যবহার্য পণ্যের তালিকা কাটছাঁট করছেন বলেও জানিয়েছেন ক্রেতারা।
এছাড়া আটা-ময়দার দাম বাড়ায় রুটি, কেক, বিস্কুটের মতো বেকারি পণ্যের দামও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। আগে চায়ের দোকানে যে রুটি (বনরুটি) ও পিস কেক ৮ টাকা করে বিক্রি হতো, তা এখন ১০ টাকা। আবার ৩০ টাকা দামের ফ্যামেলি রুটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। পরাটা, সিঙ্গারা, সমুচা সবকিছুই দাম বেশি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন