শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

পরশুরাম আশ্রয়ণ প্রকল্পে মানবেতর জীবন

মো. ওমর ফারুক, ফেনী থেকে | প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০২২, ১২:০৩ এএম

ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নে ভূমিহীন, গৃহহীন এবং হতদরিদ্র মানুষের জন্য ২৬ বছর আগে তৎকালীন সরকারের দেয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থা। এখানে ১৩০টি পরিবারের লোকজন বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ঘর হস্তান্তরের পর থেকে সংস্কারহীনতার অভাবে এসব আশ্রয়ন প্রকল্পের প্রতিটি ঘরের টিনগুলো মরিচা ধরে ঝরে পড়ছে। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে শৌচাগারগুলো। টিউবওয়েল থাকলেও পানির দেখা মেলেনা অনেক বছর। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে না পারা সমাজের নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র মানুষগুলো তারপরও ছাড়তে পারছেনা আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো। ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাধ্য হয়ে ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রকল্প পরিদর্শনে এসে আশ্বাস দিলেও ১৯৯৬ সালে উদ্বোধনের পর আর কোন সংস্কার কাজ এখানে হয়নি।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন সরকারের উপহার হিসেবে ভূমিহীন, গৃহহীন এবং হতদরিদ্র মানুষের জন্য ১৯৯৭-১৯৯৮ সালে পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের দক্ষিণ গুথুমা শান্তি পাড়া ও জামবিল এলাকায় দু’টি আশ্রয়ন প্রকল্প স্থাপন করা হয়। শান্তিপাড়ায় ৭টি ব্যারেকে ৭০টি পরিবার ও জামবিল এলাকায় ৬টি ব্যারেকে ৬০টি পরিবার মাথা গোঁজার ঠিকানা পায় এসব আশ্রয়ন কেন্দ্রে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে বসতি করেছে এসব এলাকায়। কিন্তুু দিন ফিরছেনা আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারী হতদরিদ্র মানুষগুলোর। দু’একটি পরিবার আর্থিকভাবে কিছুটা স্বচ্ছতা লাভ করে আশপাশে নিজস্ব বসতি নির্মাণ করে নিজেদের পরিচয় পরিবর্তন করেছেন। যারা এখনো আশ্রয়নের বাসিন্দা রয়েছেন তারা ঝরাজীর্ণ এসব ঘরে জোড়াতালি দিয়ে কোনরকমে পরিবার নিয়ে দিনাতিপাত করছেন।
আশ্রয়নের বাসিন্দারা জানান, ঘরের টিনগুলো মরিচায় ধরে ঝরে ঝরে পড়তে থাকে। শৌচাগারগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়। পানি না ওঠায় চাপাকলগুলোও পরিত্যক্ত হয়ে যায়। প্রকল্পের বাসিন্দারা জনপ্রতিনিধি ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আবাসন প্রকল্প এলাকায় সংস্কারের দাবি জানিয়েও কোন ব্যবস্থা পায়নি। এমতাবস্থায় নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী ঘরগুলো জোড়াতালির সংস্কার করে কোন রকমে দিনাতিপাত করছে। অনেকেই ব্যক্তিগত অর্থায়নে অগভীর নলকূপ বসিয়ে খাবার পানির ব্যবস্থা ও রিং বসিয়ে শৌচাগারের ব্যবস্থা করে দিনাতিপাত করছেন।
প্রকল্প এলাকার সর্দার আবুল হোসেন জানান, এসব আশ্রয়নে ১৩০ পরিবার বসবাস করে। বছরের পর বছর প্রকল্পের শেডগুলো সংস্কার না হওয়ায় বর্ষায় এখানে বসবাসকারীদের দুঃখের শেষ নেই। তিনি আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘরগুলো পুর্নির্মানের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
বক্সমাহমুদ ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর গফুর জানান, দক্ষিণ গুথুমা ও জামবিল আশ্রয়ন প্রকল্পের সমস্যার কথা কারো অজানা নয়। সম্প্রতি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে শেডগুলো সংস্কারের জন্য প্রকল্প দিতে লিখিতভাবে আবেদন করেছি। সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হলে অন্তত মানুষগুলো শান্তিতে পরিবার নিয়ে ঘুমাতে পারবে।
এ বিষয়ে ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান জানান, পরশুরামের দক্ষিণ গুথুমা ও জামবিল এলাকায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলোর সমস্যার বিষয়ে তিনি জানতে পেরেছেন। তিনি এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন যে সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি যাচাই বাচাই করে সমস্যা চিহ্নিত হলে, পর্যাপ্ত বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি লিখে তাদেরকে সহযোগিতা করার ব্যবস্থা করেন।
এদিকে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা শমসাদ বেগম জানান, পুরাতন আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলোর বিষয়ে উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন