রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

আখাউড়ায় এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৬, ৯:৪৯ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় এসএসসি দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বিদ্যালয়গুলো নানা অজুহাতে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বোর্ডের নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা আদায় করছেন। এতে গরিব অসহায় পরীক্ষার্থীরা ফরম পূরণে হিমশিম খাচ্ছে। এ নিয়ে অভিভাবকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মন রক্ষার্থে কেউ এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করছে না। এ সুযোগে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিদ্যালয়গুলো। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সনের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে উপজেলার কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় একজন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে আড়াই হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার টাকা নিয়ে ফরম পূরণ করছেন। এতে অসহায় গরিব পরীক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। একাধিক পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়। জানা যায়, উপজেলার ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা নিচ্ছে আখাউড়া উত্তর ইউনিয়নের আমোদাবাদ শাহ আলম উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের নিকট থেকে ৩ হাজার ৫ টাকা এবং মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা বিভাগের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩৩/৩৪শ’ টাকা আদায় করেছে। তবে টাকা আদায়ের কোনো রসিদ দেয়া হচ্ছে না। আমোদাবাদ গ্রামের কৃষক মো. জহির মিয়ার ১ ছেলে ও ১ মেয়ে আমোদাবাদ শাহ আলম বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী। তিনি ৩ হাজার ৪শ’ টাকা দিয়ে ছেলের ফরম পূরণ করেছেন। কিন্তু টাকার অভাবে বিজ্ঞান বিভাগে পড়–য়া মেয়ের ফরম পূরণ করতে পারেননি। বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতির দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তার মেয়ের ফরম পূরণের টাকা যোগাতে পারেননি। শাহ আলম উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী ইকরাম হোসেন, শাহীন চৌধুরী, সামসুল আরেফিন, শারফিন মীর জানান, তারা প্রত্যেকেই ৩ হাজার ৫শ’ টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করেছে। তারা বলেন, শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির লোকজনের কাছে আমরা অসহায়। তাদের সাথে বেশি কিছু বলা যায় না। একই অভিযোগ উপজেলার রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়, দেবগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, হীরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়সহ উপজেলার ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫টি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন খাত দেখিয়ে ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়,  কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ১৫/১৬শ’ টাকা ফরম পূরণে নেয়ার কথা। বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী পরীক্ষার ফরম পূরণ ফি প্রত্যেক বিষয়ে ৮০ টাকা, ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি ৩০, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ফি ৩৫, মূল সনদ ফি ১শ’, বয়েজ স্কাউট ও গার্ল গাইড ফি ১৫, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫ টাকা এবং কেন্দ্র ফি ৩শ’ টাকা। কিন্তু বোর্ডের বেঁধে দেয়া এ নিয়ম মানছে না আখাউড়া উপজেলার বিদ্যালয়গুলো। আখাউড়া পৌর শহরের নাছরীন নবী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. মিজানুর রহমান জানান,  তিনি ২ হাজার ৫শ’ টাকা দিয়ে তার মেয়ের ফরম পূরণ করেছেন। পৌর শহরের দেবগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক কামরুল হাসান জানায়, তিনি ৩ হাজার টাকা দিয়ে তার কাছ থেকে ফরম পূরণ করেছেন।  শিক্ষকদের হাতে ব্যবহারিক নম্বর থাকায় তাদেরকে কিছু বলা যায় না। আমোদাবাদ শাহ আলম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী মো. তারেক বলেন, সবার কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা নেয়া হয়নি। তবে ফরম পূরণে কত টাকা নেয়া হয়েছে এ ব্যাপারে তিনি সঠিক কোনো তথ্য দেননি। এ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী ৭২ জন বলে তিনি জানান। নাছরীন নবী স্কুলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, তারা ২ হাজার ৫শ টাকায় ফরম পূরণ করেছেন। আখাউড়া রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রাধাকৃষ্ণ নুরনিয়া জানান, তারা ২ হাজার ২২শ’ টাকা নিয়েছেন। ফটোকপি, বোর্ডে আসা-যাওয়াসহ অতিরিক্ত কিছু খরচ মেটাতেই তারা কিছু টাকা বেশি নিয়েছেন। রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে ২২৬ জন পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছে বলে তিনি জানান। এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আখাউড়া মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার কাছে কেউ এধরনের অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এব্যাপারে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ জানান, বোর্ডের নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত টাকা নেয়ার এখতিয়ার নাই। যদি কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকে তাহলে অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন