সয বাধা অতিক্রম করে পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফের কর্মী ও সমর্থকরা ইসলামাবাদের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। তারা পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও ব্যারিকেড উপেক্ষা করে চেয়ারম্যান ইমরান খানের রাজধানীতে লং মার্চের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট গতকাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআইকে ইসলামাবাদের এইচ-৯ এলাকায় আজাদি মার্চ বিক্ষোভ করার অনুমতি দিয়েছে এবং পিটিআই নেতা ও কর্মীদের বাড়িতে অভিযান বা গ্রেফতার না করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি বর্তমানে আটক আইনজীবীদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান সরকারের সাথে একটি চুক্তির গুজব অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন যে, এ ধরনের কোনো সম্ভাবনা ‘একদম নেই’। তিনি যোগ করেছেন, পার্টি নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় রাজধানী ছেড়ে যাবে না। ‘আমরা ইসলামাবাদে থাকব যতক্ষণ না বিধানসভা ভেঙে দেয়া এবং নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।’ তিনি সব শহরের জনগণকে পিটিআই-এর পদযাত্রায় যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইমরান এর আগে খাইবার পাখতুনখোয়ার ওয়ালি ইন্টারচেঞ্জে পৌঁছেন এবং পরে ইসলামাবাদ চলে যান। দলের অন্য নেতারা নিজ নিজ এলাকা থেকে ফেডারেল রাজধানীর উদ্দেশে রওনা হন। সোয়াবিতে অভিযুক্ত দলীয় সমর্থকদের সাথে কথা বলার সময় তিনি তার সমর্থকদের বলেন যে, তারা ইসলামাবাদের ডি-চক যাবেন এবং ‘কেউ আমাদের থামাতে পারবে না’।
বর্তমান সরকারকে ‘চোরের দল’ হিসাবে উল্লেখ করে, পিটিআই চেয়ারম্যান দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে, দলের সমর্থকদের আটক করা হচ্ছে এবং হয়রানি করা হচ্ছে। ইমরান বলেন যে, সরকার ভীত, কারণ তারা গত তিন দশক ধরে ‘জাতীয় সম্পদ লুণ্ঠন’ করে চলেছে। ‘তারা যাই করুক না কেন, আমরা সব অবরোধ পেরিয়ে ডি-চকে পৌঁছব।’ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী যোগ করেছেন যে, বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হবে। প্রতিবাদ করা দলের সাংবিধানিক অধিকার ছিল বলে ধরে রেখে তিনি যোগ করেছেন যে, তিনি দেশকে একত্রিত করবেন এবং ‘একটি জাতিতে পরিণত করবেন’। এ দেশ আমদানি করা সরকারকে মেনে নেবে না। এদিকে, পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট গতকাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআইকে ইসলামাবাদের এইচ-৯ এলাকায় আজাদি মার্চ বিক্ষোভ করার অনুমতি দিয়েছে এবং পিটিআই নেতা ও কর্মীদের বাড়িতে অভিযান বা গ্রেফতার না করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি বর্তমানে আটক আইনজীবীদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। বিচারপতি ইজাজুল আহসানের নেতৃত্বে বিচারপতি মুনিব আখতার ও বিচারপতি সৈয়দ মাজাহার আলী আকবর নকভির সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ ইসলামাবাদ হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের (আইএইচসিবিএ) সভাপতি মোহাম্মদ শোয়েব শাহীনের করা পিটিআই-এর মিছিলের আগে রাজধানীতে অবরোধ অপসারণ আবেদনের শুনানির পর এই আদেশ দেন।
এর আগে গতকাল ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে করা লংমার্চ ভেস্তে দিতে লাহোরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) এর কর্মীদের উপর হামলা চালায় পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের ইসলামাবাদে পৌঁছাতে বাধা দিতে সরকার কর্তৃক বাট্টি চকে মোতায়েন করা কন্টেইনারগুলোর ঠেলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে এ হামলা চালায়। পিটিআই সমর্থকরা লাহোর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার রুটে রাখা কন্টেইনারগুলি সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করার পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পিটিআই নেতা ইয়াসমিন রশিদ, হাম্মাদ আজহার এবং শাফকাত মেহমুদ কর্মীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এ সময় দলীয় সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে। সংঘর্ষের পর পিটিআইয়ের অন্তত ১২ কর্মীকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।
পাঞ্জাবের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়াসমিন রশিদকেও স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা সংক্ষিপ্তভাবে থামিয়ে দেয়া হয়েছিল, দলটি দাবি করেছে যে, পুলিশ ‘তার গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেয়ার’ চেষ্টা করেছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা এই ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে, একজন কথিত পিটিআই সমর্থক সাবেক মন্ত্রীর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করছেন। পুলিশ অবশ্য বাধা দিলেও অল্প সময়ের জন্য ইয়াসমিনকে আটক করতে সক্ষম হয়। একটি টুইটে, পিএমএল-এন সহ-সভাপতি মরিয়ম নওয়াজ অভিযোগ করেছেন যে পাঞ্জাব পুলিশ পিটিআই লাহোরের অফিস-কর্মকর্তা জুবায়ের নিয়াজি এবং বাজাশ নিয়াজির গাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধার করেছে। উদ্ধার হওয়া ক্যাশের ছবি শেয়ার করে তিনি বলেন, ‘এটা তথাকথিত লংমার্চের কুৎসিত চেহারা। এগুলোই উদ্দেশ্য।’
ফায়ারব্র্যান্ড পিএমএল-এন নেতার মতে, পুলিশ পিটিআই সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। বর্তমান জোট সরকার মঙ্গলবার রাজধানীতে বুধবার পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফকে তার ‘আজাদি মার্চ’ অনুষ্ঠিত হতে বাধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই শঙ্কা জাগিয়েছে যে, যদি ‘রক্তাক্ত মার্চ’ অঙ্কুরে না ঠেকানো হয়, এটি ‘সরকার পতন ঘটাতে পারে’। সূত্র : ট্রিবিউন, ডন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন