শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

জীবন যুদ্ধে হার মানেনি বিধবা জরিনা

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৬, ৯:২৮ পিএম

জীবন যুদ্ধে হার মানেনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বড়ালু এলাকার মেয়ে জরিনা আক্তার। একটি বেসরকারি এনজিও থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বেকারি পণ্য তৈরি করে স্থানীয় বড়ালু বাজারে বিক্রি করে জরিনা এখন সাবলম্বী। ছয় ভাই এক বোনের মধ্যে জরিনা ছিল সবার বড়। বাবা অসুস্থ থাকার কারণে ১৫ বছর আগে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানার নারাইশ এলাকার কাইয়ুম মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় জরিনার। বিয়ের পর তারা ঢাকাতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো। জড়িনার স্বামী কাইয়ুম মিয়া ঢাকাতে ইলেকট্রনিক্স কারখানায় কাজ করত। বিয়ের পর তাদের দুজনের সংসারে শান্ত ও শাকিব নামে দুজন ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের ৪ বছর হতে না হতে জরিনার স্বামী কাইয়ুম মিয়া বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। জরিনার শশুর-শাশুড়ি কেউ বেঁচে না থাকার কারণে জরিনা তার দুই ছেলেকে নিয়ে তার বাপের বাড়িতে চলে আসতে বাধ্য হয়। বাবা মারা যাওয়ায় জরিনা তার মাকে ও দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করে। জরিনার ভাই তার বউ নিয়ে আলাদা বাসায় থাকায় বৃদ্ধ মায়ের সংসারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে জরিনার ওপর। সংসার চালানোর তাগিদে জরিনা আক্তার ইট ভাঙা, জোগালি, গার্মেন্টসে কাজ করতো। অভাবের সংসারে ছেলেদের লেখা-পড়া ও বৃদ্ধ মায়ের ওষুধের খরচ, সংসারের ব্যয়ভার চালাতে গিয়ে জরিনা আক্তারকে দিশেহারা হয়ে পড়ে। ৩ বছর আগে একটি বেসরকারি এনজিও সংস্থা থেকে কিছু কর্মকর্তা এসে প্রশিক্ষণের জন্য জরিনা আক্তারের নাম লিখে নিয়ে যায়। সেখানে জরিনা আক্তারকে ফুড প্রসেসিং এর উপর ৭ দিনের একটি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণে জরিনা আক্তার গজা, মিষ্টি, সিঙ্গারা, পুড়ি, সমুচা, লবঙ্গ, পুডিং, আচার, চিকেন ফ্রাই, সবজি রোলসহ ইত্যাদি বানানো শিখেছিলেন। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত ১২৬০ টাকা ও নিজের জমানো ৩ হাজারসহ মোট ৪ হাজার ২শ’ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে। গজা, মিষ্টি, সিঙ্গারা, পুড়ি, সমুচা, লবঙ্গ, পুডিং, আচার, চিকেন ফ্রাই এগুলো তৈরি করে এলাকার স্থানীয় দোকানগুলোতে পাইকারীভাবে বিক্রি করে। জরিনা আক্তার প্রতিদিন প্রায় ১শ’টি দোকানে এইসব বেকারি পণ্য বিক্রি করে থাকে। এসব বেকারি পণ্য বিক্রি করে জরিনা আকতার প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার টাকা আয় করছেন। বর্তমানে জরিনা আক্তারের মূলধন হচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। জরিনা আক্তার ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তার ব্যবসাকে আরো বড় করার চেষ্টা করছে। এসবের পাশাপাশি জরিনার আক্তারের ৮টি ছাগল, ২টি গরু, ১৫টি চীনা হাঁস, ২০টি মুরগী ও ৩০টি কবুতর রয়েছে। হাঁস মুরগী ও পশু পালন করে জরিনা আক্তার প্রতিমাসে প্রায় ৮-১০ হাজার টাকা আয় করেন। জরিনা বলেন, তিনি কোন ব্যাংক বা এনজিও থেকে আরো বেশি টাকা ঋণ পেলে এ ব্যবসাটিকে আরো বৃহৎ আকারে করতে পারবে। তখন তিনি নিজ এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এসব বেকারি পণ্য তৈরি করে বিক্রি করতে পারবে। জরিনা আক্তার তার এ ব্যবসা দিয়ে ৮-১০ জন গৃহবধূর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। জরিনার মতো আরো যারা আছেন, তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জীবনে চলার পথে কখনো কোন কাজে হাল ছাড়া উচিত না। জীবনে চলার পথে অনেক বাঁধা আসবে তাই বলে থেমে থাকলে চলবে না, বাঁধা অতিক্রম করেই এগিয়ে যেতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন