শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

টাঙ্গাইলে সূত্রহীন শিশু তিশাকে গনধর্ষণ ও হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০২২, ২:৩৮ পিএম

টাঙ্গাইলের বাসাইলে সূত্রহীন (ক্লু-লেস) ২য় শ্রেনির ছাত্রী তিশা (৯) কে গনধর্ষণসহ হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করার দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) টাঙ্গাইল। গনধর্ষণ ও হত্যাকান্ডে জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ সোমবার এ তথ্য প্রকাশ করে পিবিআই। পিবিআই জানিয়েছে শিশু তিশার প্রতি বিকৃত যৌন লালসা তাদের মনে পোষণ করে। সেই জেরে তিশাকে গনর্ধষণ ও হত্যা করার জন্য ওড়না দিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে পালিয়ে যায় আসামীরা।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলো- টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ভাটপাড়া এলাকার স্বপন মন্ডলের ছেলে গোবিন্দ মন্ডল (১৯), একই এলাকার আনন্দ মন্ডলের ছেলে চঞ্চল চন্দ্র মন্ডল (১৭) ও লালিত সরকারের ছেলে বিজয় সরকার (১৬)। আসামীরা শিশু তিশাকে গনর্ধষণ ও হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা পিবিআই এর কাছে স্বীকার করেছে।
টাঙ্গাইল পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানায়, গত ২৬ মে সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার বন্দে ভাটপাড়া গ্রামের মো: আবু ভূইয়ার কন্যা শহীদ ক্যাডেট একাডেমির ২য় শেনির ছাত্রী তিশা আক্তার (৯) কে বসত ঘরের উত্তর পাশের রুমে ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই সংবাদের ভিত্তিতে পিবিআই এর একটি চৌকস ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সংগ্রহ করে। পরে পিবিআই টিম জানতে পারে ঘটনার দিন সকালে মো: আবু ভূইয়ার স্ত্রী সম্পা বেগম তার ছেলে ৫ম শ্রেনির ছাত্র মো: শুভ ভূইয়া (১২) ও ২য় শ্রেনির ছাত্রী মেয়ে তিশা আক্তারকে (৯) স্থানীয় শহীধ ক্যাডেট একাডেমিতে নিয়ে যায়। দুপুরে স্কুল ও কোচিং শেষ হলে তিশা বাড়িতে চলে আসে। ছেলে শুভ সময় মত বাড়িতে না আসায় তার মা তাকে খুঁজতে বের হয়। এসময় তিশা বাড়িকে একাই ছিলো। পরে শুভকে এলাকার ফজলুর দোকানে বসে থাকতে দেখে। এসময় শুভকে জুস কিনে দেয় এবং পাশের অমত মেম্বারের দোকান হতে বিস্কুট কিনেন ও দোকানদারের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এতে প্রায় ঘন্টাখানিক সময় দেরি হয় তাদের বাড়িতে ফিরতে। বাড়িতে ফিরে মা ও ভাই দেখতে পায় বসত ঘরের উত্তর পাশের রুমে তিশা খাটের উপর ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলে আছে। এসময় মা ও ভাই তিশাকে বাঁচানোর জন্য ফাঁসের ওড়না খুলে দেয়ে। পরে তাদের ডাক চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসে এবং তিশাকে অচেতন অবস্থায় প্রথমে বাসাইল উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। এসময় দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তিশাকে টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার্ড করে। কিন্তু তিশার অবস্থা ভালো না থাকায় টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন চিকিৎসকরা। মেয়ের মা সম্পা বেগম মেয়েকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলে পথিমধ্যে এ্যাম্বুলেন্সটি নষ্ট হয়। এতে শিশু তিশার অবস্থা আরো থারাপ হতে থাকে। ফলে মেয়েকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ মে বিকেলে শিশু তিশা মারা যায়। বাসাইল থানা পুলিশ তিশার লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত ও ময়না তদন্ত শেষে ২৯ মে তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়। এ ঘটনায় পিবিআই টাঙ্গাইল তাদের ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে। এ ঘটনায় ২৯ মে বাসাইল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। পরবর্তীতে ৪ জুন তিশার ময়না তদন্ত রির্পোটে গনধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়। ওইদিনই তিশার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে বাসাইল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা নেওয়া হয়। পরে পিবিআই টাঙ্গাইল গনধর্ষণ ও হত্যা মামলাটি নিজ উদ্যোগে তথ্য প্রযুক্তি, ঘটনার পারিপাশির্^কতা ও বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নি:) খন্দকার আশরাফুল কবিরের নেতৃত্বে একটি চৌখস দল অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সাথে জড়িত তিন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামী গোবিন্দ মন্ডল পেশায় একজন পিকআট ড্রাইভার, বিজয় সরকার তার সহযোগী ও চঞ্চল একজন অটো মেকানিক। এদের মধ্যে একজনকে বাসাইল পৌরসভার কাঁচাবাজার এলাকায় ও অপর দুই আসামীকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা এ ঘটনার সাথে জড়িত হওয়ার কথা স্বীকার করে এবং তারা জানায়, তিশা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ও পুজায় চমৎকার নাচ করতো। তার নাচের প্রতিভায় সবাই মুগ্ধ ছিল। পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় আসামিরা সকল অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতো। তখন থেকে আসামিরা শিশু তিশার প্রতি বিকৃত লালসা তাদের মনে মনে পোষণ করে এবং বিভিন্ন ভাবে তিশাকে উতক্ত্য করতো। পরে তারা তিশার মায়ের গতিবিধি অনুসরণ করতে থাকে। একদিন আসামিরা জানতে পারে তিশার মা তিশাকে বাড়িতে একা রেখে ছেলেকে আনতে যায়। এই সুযোগে ঘটনার দিন বাড়িতে কেউ না থাকায় তিশার রুমে প্রবেশ করে তার হাত, মুখ, পা চেপে ধরে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষনের ফলে তিশা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তখন আসামিরা ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তিশার গলায় তার মায়ের ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
পুলিশ সুপার আরো জানায়, এ বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
শিশু তিশার মা সম্পা বেগম বলেন, আমার ওই ছোট্ট মেযেটিকে কখনো ফুলের টোকাও দেয়নি। ওরা আমার অবুঝ মেয়েকে যে অমানবিক নির্যাতন করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে তাদের একই রকমভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হোক। আমি এর বিচার চাই।
মেয়ের বাবা মো: আবু ভূইয়া বলেন, যারা আমার মেয়ের সাথে এ ধরনে কাজ করেছে তাদের কঠিন শাস্তি চাই। বিচার বিভাগের মাধ্যমে এমন একটি শাস্তি চাই যা দেখে আর কেউ যেন এমন করার সাহস না পায়।
নিহত শিশু তিশার বড় ভাই শিশু শুভ কান্না জড়িত কন্ঠে ছোট্ট বোনটির হত্যাকারীদের বিচার দাবী করে বলে, আমি সব সময় বাড়িতে আমার ছোট বোনকে খুঁজে বেড়াই। কিন্তু ওকে কোথাও পাই না। তখন আমার অনেক কষ্ঠ লাগে। আমার বোনকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
আজিজ ৯ জুন, ২০২২, ১১:৫৯ পিএম says : 0
এই ধরনের ঘটনা খুব কষ্টদায়ক। কোরআনের আইন যত কায়েম হবে না ততদিন এগুলো বন্ধ হবে না। এখানে মায়ের ভূল ছিল যে তার মেয়ের সুন্দর্য প্রদর্শন করা।
Total Reply(0)
Asikoor ১০ জুন, ২০২২, ৬:৪৭ এএম says : 0
The mother spent one hour outside, leaving the 9 year girl alone at home it is totally wrong.
Total Reply(0)
Mahmuda Shelly ১১ জুন, ২০২২, ১:১৫ পিএম says : 0
প্রথমত আমি পিবিইকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। নিজেদের তাগিদ অনুভব করে কর্তব্যে অবহেলা না করে শিশু তৃষার ধর্ষক ও খুনীদের দ্রুততার সাথে গ্রেফতার করেছেন এবং যথাযথ আইনিপদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। আমি বিগত ৩৫ বছর যাবৎ নারী ও শিশুর প্রতি সহিংস ঘটনার বিরুদ্ধে নিরলস ভাবে কাজ করছি। দীর্ঘ জার্নিতে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে বলেই আপনাদের আমি কুরনিশ জানাচ্ছি। সারাদেশে যেভাবে নারী ও শিশুর প্রতি নিপীড়ন নির্যাতন সহিংসতার ঘটনা ঘটছে তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং চিকিৎসকরা সত্য ও সঠিক রিপোর্ট দিতে কালবিলম্ব করে নায়তো কোনও না কোনও ভাবে প্রভাব বিস্তার করে। ফলে আসামিরা পার পেয়ে যায় এবং আক্রান্ত নারী বা শিশু ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। আপনারাই পারেন সকল অত্যাচার নিপীড়ন নির্যাতন ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। কেননা পুরো সহিংস ঘটনা উদঘাটন রাষ্ট্র আপনাদের উপর ন্যাস্ত করেছেন। সুতরাং রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ আপনারা সত্য বাস্তব নিরপেক্ষ তদন্ত অব্যাহত রেখে অসহায় নারী, শিশুদের ন্যায় বিচার পেতে এভাবেই নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাবেন। "শান্তিশৃঙ্খলার প্রতীক হিসেবে ডিফেন্স" এই শ্লোগান যেন অব্যাহত থাকে। পরিশেষে তিন ধর্ষক আন্ডারএইজের কারনে কোনও ভাবেই প্রচলিত আইন অনুযায়ী সর্বচ্চ শাস্তি থেকে রেহাই না পায়। আপনাদের প্রতি আবারও শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।????????☝️????
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন