স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনার পর কুষ্টিয়া জেলায় অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান তৎপরতা শুরু হয়েছে। গত শনিবার পর্যন্ত জেলায় ১১টি অবৈধ ক্লিনিক ও ১৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বেশকিছু ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের সর্তক করে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও চিকিৎসার নামে প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার দায়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস বলছে, জেলায় বৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৪৭টি। এরমধ্যে ক্লিনিক ৭৩টি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭৪টির অনুমোদন রয়েছে। আর অবৈধ ক্লিনিক ২৭টি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৩১টি তাদের হিসেবে। তবে নিবন্ধনহীন এ তালিকার কয়েকগুণের অধিক ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে এ জেলায়। সেগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে অভিযানও চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
এদিকে জেলায় কয়েকশ’ অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার শহরের অলিগলি ও গ্রামগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মতো গজে উঠেছে। এতে তাদের অপচিকিৎসায় শিকার হয়ে বছরে প্রায় শতাধিক প্রসুতি নারীর মৃত্যু হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ে জেলার কুমারখালি, ভেড়ামারা, খোকসা ও মিরপুর উপজেলায় অভিযান পরিচালিত হয়েছে। নিবন্ধন আছে নবায়ন করা হয়েছে- এমন ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক রয়েছে ৬২টি। এই অভিযানের ফলে এখন প্রায় প্রতিদিনই সিভিল সার্জন অফিসে ভিড় জমাচ্ছেন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা।
নাম-প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা জানান, নিবন্ধন নিতে বা নবায়ন করতে একটি প্রতিষ্ঠানকে সিভিল সার্জন অফিসে নগদ টাকা দিয়েও মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। অনেকেই আবেদন করেও নবায়ন করতে পারছেন না। লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ার জটিলতার দায়ভার সম্পূর্ণভাবে সিভিল সার্জনের ওপর বর্তায়। তাই আগে তাকে জরিমানা করতে হবে। তারপর আমাদের।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নিবন্ধন নিতে বা নবায়ন করতে সময় লাগে ক্লিনিক মালিকদের কথাটি সঠিক নয়। তারা নানা অজুহাত দিয়ে নিবন্ধন নবায়ন করা থেকে বিরত থাকছেন। নিবন্ধন নীতিমালা মেনে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বৈধতা পায়। এর ব্যত্যয় হলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অভিযান চালানো হচ্ছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
কলেজ শিক্ষক শেহাব উদ্দীন আহাম্মেদ বলেন, কুষ্টিয়া অঞ্চলে অনুমোদনহীন বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসকের বদলে ক্লিনিক মালিক, নার্স, আয়া অপারেশনে অংশ নেওয়ার নজির আছে। কয়েক ডজন প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর পর ক্লিনিক সিলগালা ও মামলা হলেও এখন চলছে বহাল তবিয়্যতে।
কুষ্টিয়ার সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল আলম টুকু বলেন, অবৈধ ক্লিনিকের অপচিকিৎসায় এ জেলায় বহু প্রসূতি নারীর মৃত্যুর জন্য দায়ী। দেরি হলেও যেহেতু স্বাস্থ্য বিভাগ নির্দেশ দিয়েছে। সেহেতু যাদের বৈধতা নেই তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হবে। বৈধতা না থাকলে সর্তক করার প্রশ্নই আসে না। ঢিলেঢালা অভিযান সাধারণ মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. রাজিব মৈত্র বলেন, জোড়ালো অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এসব অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে সাধারণ প্রান্তিক জনগণ বিভিন্নভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তাদের অপচিকিৎসা দ্বারা। জীবন যাচ্ছে এর সঙ্গে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মানুষ।
তাই অবশ্যই জোড়ালোভাবে অভিযান চালানো উচিত। যেনো লাইসেন্সবিহীন কোনো ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলতে না পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন