শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বর্জ্যইে জীবন-জীবিকা

এ পেশায় সৈয়দপুরের হাজারো নারী-পুরুষ

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে | প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০২২, ১২:০২ এএম

‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন। এ কথার মতো হয়তো তাদের ভাগ্যে অমূল্য রতন মিলবে না।’ কিন্তু মিলেছে তাদের জীবিকার সন্ধান। ফলে সংসার নামের চাকাটা চালিয়ে নিতে পারছেন তারা।
নীলফামারীর সৈয়দপুরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ফেলে দেয়া বর্জ্যরে মধ্যে খুঁজছেন কাক্সিক্ষত জিনিসটি। বিনিময়ে পুরুষরা পাচ্ছেন ৪০০ টাকা, নারীরা ১৮০ টাকা আর কিশোর-কিশোরীরা ১৫০ টাকা।
নীলফামারী সদরের ঠেলাপীরহাটের বিপরীতে একটি মাঠ পাঁচ মাসের জন্য ৬০ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছেন ফেনীর আব্দুল মান্নান পাটোয়ারী নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরে। জেলা সদরের সংগলশীতে উত্তরা ইপিজেডের অবস্থান। সেখানে রয়েছে ভ্যানচুরা পরচুলা কারখানা, লেদার সামগ্রী তৈরির কারখানা, কফিন তৈরিসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরির কারখানা। সেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো নারী-পুরুষের।
এসব কারখানার ফেলনা সামগ্রীর মধ্যে ব্যবহার উপযোগী কিছু জিনিসপত্র থেকে যায়। ফেলনা উপকরণগুলো বর্জ্য হিসেবে স্তূপ করে রাখা হয় কারখানার ভেতরেই। তবে বর্তমানে এগুলো টাকার বিনিময়ে বা সুসম্পর্কের খাতিরে ট্রাকে করে ওই মাঠের নিয়ে আসেন ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান। মাঠেই ডাম্পিং করা হচ্ছে এসব বর্জ্য। এরপর সেসব ফেলনা মাল থেকে কাক্সিক্ষত জিনিসপত্র বাছাই করছেন নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরীরা। এরপর ট্রাকে এসব ঢাকায় নেয়া হয় এবং ভালো দামে বিক্রি করা হয়। ফলে ফেলনা মাল বাছাই করেও এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
ফেলে দেয়া কারখানার বর্জ্যে ডাম্পিংয়ের পর বাছাইয়ের কাজ করছিল পাশের কাজীরহাট এলাকার কিশোর সাহিদ আলী (১৫)। সে জানায়, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে এখানে কাজে যোগ দিয়ে বিকেলে কাজ শেষ করে। ইজিবাইকে যাতায়াত করে থাকে সে। প্রতিদিন যাতায়াতে তার খরচ হয় ২০ টাকা। দিন শেষে সে হাজিরা পায় ১৫০ টাকা। সে জানায়, মূলত এখানে বাছাই করা হয় ফাইবার চুল, এক ধরনের উন্নতমানের টিস্যুসহ নানা ধরনের উপকরণ।
এখানে কাজ করছেন সৈয়দপুরের বোতলাগাড়ির আলেজান (৫৫), পোড়ারহাট এলাকার সখিনা খাতুন (৩৭), সংগলশী ইউনিয়নের আবেদ আলী (৪৫), শুকুর আলীসহ (৪৬) প্রায় ৩০ জন নারী-পুরুষ। তারা ডাম্পিংয়ের বর্জের ভেতরে খুঁজছেন ওইসব পণ্য। অনেক আন্তরিকতায় কাজ করছেন তারা। এখানে কাজ করতে পেরে সবাই খুশি। যদিও রোদে এসব খুঁজে বের করতে কষ্ট হয়। কিন্ত জীবনের প্রয়োজনে এসব কাজ করছেন তারা।
উত্তরা ইপিজেডের কারণে নীলফামারী অঞ্চলে কাজে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। এর বাইরে এ ইপিজেড পিছিয়ে পড়া নীলফামারীর জনগোষ্ঠীকে আলোর পথ দেখাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শফিকুল আলম ডাবলু বলেন, এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উত্তরা ইপিজেড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশি-বিদেশি অনেক স্বনামধন্য বিনিয়োগকারী এখানে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। তাদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন