বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

পানির নিচে স্কুল আঙিনা, গাছের তলায় পাঠদান

এম.এম হায়দার আলী, তালা (সাতক্ষীরা) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম


বন্যাকবলিত তালা উপজেলায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারো নিচু রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর অনেক রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জেগে উঠলেও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগস্ত হওয়ায় এখনো পানিতে তলিয়ে আছে গোনালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে গত ৪ মাস ধরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাঁদাপানি মাড়িয়ে খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় পড়াশুনা করতে হচ্ছে। চলতি ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষার ভালো ফলাফল নিয়ে চিন্তিত, অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা। সূত্রমতে, সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত হওয়া কপোতাক্ষ পাড়ের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের এখনো হাঁটু-কাঁদা মাড়িয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। অনেক বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে এখনো পানি রয়েছে। তাই ক্লাস করতে  হচ্ছে অন্যের বাড়ি অথবা রাস্তার উপর। এরই মধ্যে বার্ষিক এবং সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। তাই ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার সফলতা নিয়ে  চিন্তিত অভিভাবকরা। এমনই অবস্থার মধ্য দিয়ে গত ৪ মাস ধরে চলছে জলাবদ্ধ এলাকার শিক্ষা কার্যক্রম। সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটলেও কপোতাক্ষ পাড়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অন্যান্য স্থানের তুলনায় ৪/৫ মাস পিছিয়ে পড়ছে। সেইসাথে পিছিয়ে পড়ছে শিশুদের আগামী দিনের স্বপ্ন। সরেজমিনে তালার গংঙ্গারামপুর, গোনালী, হরিচন্দ্রকাটি, কানাইদিয়া, খরাইল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বসতভিটার পাশাপাশি কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে আছে। গঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষের মধ্যে পানি, তাই পার্শ¦বর্তী একটি ধানের চাতলে চলছে পাঠদান। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা প্রতিভা রানী ঘোষ জানান, স্কুলমাঠে শ্যালো মেশিন বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চলছে। বর্তমানে ৯৫ জন ছাত্রছাত্রীর বিপরীতে ৩ জন শিক্ষিকা রয়েছেন, তবে বছরের পর বছর জলাবদ্ধ থাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এলাকার সচেতন অভিভাবকরা তাদের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ছেলেমেয়েদের অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়। ১৪৮নং গোনালী সরকারি বিদ্যালয়টি পানিবেষ্টিত একটি দ্বীপের মতো দাঁড়িয়ে আছে। ৫ জন শিক্ষক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ১১৮ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে পার্শ্ববর্তী রজব আলী গাজীর বাড়িতে চলছে পাঠদান। এমন অবস্থায় প্রতি বছরের ৫/৬ মাস যাবৎ চলে পাঠদান কার্যক্রম। প্রধান শিক্ষিকা লতিফা খানম জানালেন, সুপেয় পানিসহ স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে মারাত্মক সংকট চলে আসছে এ ক’মাস। তালা টেকনিক্যাল কলেজকক্ষে এখনো পানি, তালা উপজেলা সদরের একটি ভাড়া ভবনে চলছে ক্লাস। টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাফিজুল ইসলাম জানান, এখনো বেতন হয়নি শিক্ষকদের, তারপরও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া এগিয়ে নিতে অনেক টাকা ব্যয়ে ভবন ভাড়া করে ক্লাস চালাতে বাধ্য হয়েছি। হরিচন্দ্রকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস চলছে পানির মধ্যে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ একটি ভবনে। লাড়িপাড়া, খরাইলসহ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে এখনো পানি, আসা-যাওয়ার পথে হাঁটু-কাদা। তালা শহীদ কামেল মডেল হাইস্কুলসহ ভবানীপুর, কেসমতঘোনা, মাঝিয়াড়া, খানপুর, কাজীডাংগা, ইসলামকাটি এলাকার আরো কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারপাশ পানিবেষ্টিত থাকায় এখনো শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসেনি। ফলে জলাবদ্ধতার কবলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষা অফিসের হিসাব মতে, এবছর কপোতাক্ষের উপচে পড়া পানিতে তালা উপজেলার ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১১ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এবং ৩টি কলেজ পানিবন্দি হওয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তালা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার বেশকিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিবন্দি হওয়ায় শিশুদের লেখাপড়ায় বিঘœ ঘটেছে, তবে আমরা বিপদকালীন সময়ে অন্যত্র ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করেছি। সর্বোপরি দীর্ঘবছরের প্রকট আকার ধারণ করা এ এলাকার সমস্যার সমাধানপূর্বক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার স্বার্থে সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি মাত্র।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন