জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার থেকে : কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার অনেক আগে থেকেই এখানে পৌর নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন স্থরের নেতাকর্মীদের মাঝে। ইতোমধ্যে নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক বিভিন্ন দলের প্রভাবশালী একাধিক নেতা ভোটের মাঠে নামছেন; এমন গুঞ্জন চলছে এখন পৌরসভার অলিগলিতে। বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি থেকেও মেয়র পদে প্রার্থী হতে একাধিক নেতার নাম লোকমুখে শোনা যাচ্ছে। তবে এখনো দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি খোলাসা করা হয়নি জনসম্মুখে। ইতোমধ্যে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে অন্তত ১৪ জন ও বিএনপির ৭ জন প্রার্থী জোর লবিংয়ে রয়েছেন। জানা গেছে, চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শ্রমিক নেতা ও দুইবারের পৌর কাউন্সিলর ফজলুল করিম সাঈদী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আলহাজ মো. নুরুল আবছার, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক প্যানেল মেয়র জাহেদুল ইসলাম লিটু, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আলম কমিশনার ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ওয়ালিদ মিল্টন, ইতোমধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা জামাল উদ্দিন জয়নাল। অপরদিকে নতুন বছরের প্রথম দিনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করে মেয়র পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা আতিক উদ্দিন চৌধুরী। তারপর আলোচনায় আসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শিল্পপতি শফিউল আলম বাহার ওরফে দুবাই আলম। তিনি মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নতুন করে যুক্ত হন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা এডভোকেট লুৎফুল কবির। চকরিয়া উপজেলা আইনজীবী সমিতির দুই বারের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট লুৎফুল কবির ইতোমধ্যে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন। আবেদনে তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিক যেসব কাজে সম্পৃক্ত আছেন তা তুলে ধরেছেন। এছাড়া অনেকের নাম পৌরবাসীর মাঝে উচ্চারিত হচ্ছে। তারা হলেন- চকরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক একেএম গিয়াস উদ্দিন, উপজেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা আমিনুর রশিদ দুলাল, কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ সাহাব উদ্দিন মাহমুদ ও আওয়ামী লীগ নেতা সাংবাদিক এসএম সিরাজুল হক। এসব প্রার্থীরা তৃণমূল ভোটারদের মন জয়ের পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন পেতে জেলা ও উপজেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা দীর্ঘ হলেও বেশিরভাগ প্রার্থী এবারই প্রথম পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। তাদের মধ্যে ৪ জন প্রার্থী ইতোপূর্বে পৌর নির্বাচনে অংশ নেন। এদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী ও চকরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ একেএম গিয়াস উদ্দিন গতবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। ঐ নির্বাচনে সাঈদী ৫ হাজার একশত ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন। অন্যদিকে আগের দুটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ছিলেন- পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আলম কমিশনার। আওয়ামী লীগের অপরাপর প্রার্থীরা এবারই প্রথম পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির টিকেটে এ পর্যন্ত নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে বর্তমান মেয়র ও পৌরসভা বিএনপির সভাপতি আলহাজ নুরুল ইসলাম হায়দার। তবে দলের মনোনয়ন নিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য বর্তমানে নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন আরও বেশ কজন নেতা। তারা হলেন পৌরসভা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফখরুদ্দীন ফরায়েজী, পৌরসভার বর্তমান প্যানেল মেয়র ও পৌরসভা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি জনপ্রিয় ছাত্রনেতা শহীদুল ইসলাম ফোরকান, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক এম মোবারক আলী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী আবু মিয়ার ছেলে সাবেক ছাত্রনেতা সাজ্জাদুল কবির চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা যুবদলের সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক ও চকরিয়া পৌরসভা বিএনপির বর্তমান কমিটির যুব বিষয়ক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা এএম আলী আকবর ও কক্সবাজার জেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক পৌরসভার সাবেক কমিশনার মুহাম্মদ কুতুব উদ্দিন। বিএনপির নেতাকর্মী জানিয়েছেন, পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থী দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর জনপ্রিয়তা যাচাই করবে। এরপর জনপ্রিয়তায় তুঙ্গে থাকা প্রার্থীকেই এখানে মনোনয়ন দেবে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সুপারিশে কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তবে বিএনপি অধিকাংশ নেতাকর্মীর দাবি, চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার ক্ষেত্রে এখানে মুখ্য ভূমিকা থাকবে ভারতের শিলংয়ে অবস্থানরত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের। তিনিই যাকে মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা দেবেন এখানকার বিএনপির সহযোগী সংগঠনসহ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই ভোটের মাঠে অংশ নেবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন