সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ডনবাসের লড়াই ইউক্রেন যুদ্ধের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে

সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দখলের দ্বারপ্রান্তে রাশিয়া :: ইউক্রেনীয় বাহিনী দোনেৎস্কে ২৫টি গ্র্যাড ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে :: ইউক্রেনে লড়াইয়ে নিহত প্রাক্তন ব্রিটিশ সৈন্য

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০২২, ১২:০৩ এএম

রাশিয়া দিনের পর দিন ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে নিরলস আর্টিলারি বোমাবর্ষণ এবং বিমান হামলার মাধ্যমে বোমাবর্ষণ করে তার প্রতিবেশীর শিল্পকেন্দ্র দখল করার জন্য ধীর কিন্তু অবিচলিত অগ্রগতি করেছে। সঙ্ঘাত এখন চতুর্থ মাসে প্রবেশ করার সাথে সাথে এটি একটি উচ্চ-স্টেকের প্রচারণা যা যুদ্ধের পুরো পথকে নির্দেশ করতে পারে।
যদি রাশিয়া ডনবাসের যুদ্ধে জয়লাভ করে, তাহলে এর অর্থ হবে যে, ইউক্রেন কেবল অঞ্চলই হারাবে না বরং সম্ভবত তার সবচেয়ে সক্ষম সামরিক বাহিনীর একটি বড় অংশ হারাবে, মস্কোর জন্য আরো অঞ্চল দখল করার এবং কিয়েভকে তার শর্তাদি নির্দেশ করার পথ খুলে দেবে। প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলাক বিবিসিকে বলেছেন যে, ইউক্রেন প্রতিদিন ১০০-২০০ সৈন্য হারাচ্ছে। তবে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এর আগে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ পর্যন্ত বলেছিলেন।
এদিকে পূর্ব ইউক্রেনের সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দখলের জন্য তীব্র যুদ্ধ চলছে, শহরটির ৭০ শতাংশ এলাকাই এখন রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে, তারা ইতোমধ্যেই শহরটির কেন্দ্রস্থল থেকে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের তাড়িয়ে দিয়েছে। শহরটির চারদিকেই খণ্ডযুদ্ধ চলছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তবে ডোনেৎস্কের একজন রুশপন্থী স্বাধীনতাকামী সামরিক নেতা এদুয়ার্ড বাসুরিন বলেছেন, সেভেরোদোনেৎস্কে যে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা আছে - তাদের সামনে বিকল্প হচ্ছে ‘হয় আত্মসমর্পণ নয় মৃত্যু’।
গত রোববার রুশরা সেভেরোদোনেৎস্ক ও লিসিচানস্ক শহরের মধ্যে সংযোগকারী তিনটি সেতুর দুটিই উড়িয়ে দেয়। এখন তৃতীয় সেতুটি ধ্বংস করার জন্য রুশরা প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে। সেটা করতে পারলে সেভেরোদোনেৎস্ক ইউক্রেনের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তবে রুশপন্থী মিলিশিয়া নেতা বাসুরিন দাবি করেছেন যে, তৃতীয় সেতুটিও এর মধ্যে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
সেভেরোদোনেৎস্কের গভর্নর গতকাল বলেছেন, সম্ভবত আজ বা আগামীকালের মধ্যেই রুশরা পুরো শহরটি দখল করার চেষ্টা করবে। শহরটির কেন্দ্রস্থল থেকে ইউক্রেনের সৈন্যদের তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে । গত কয়েকদিন ধরে তাদের অবস্থানগুলোর ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষণ করা হয়। লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর সের্হি হাইদাই বলছেন, সেভেরোদোনেৎস্কের ৭০ শতাংশ এলাকাই এখন রুশ নিয়ন্ত্রণে। তিনি আরো জানান, বিশেষ করে শহরের আজোট নামের একটি রাসায়নিক শিল্প কারখানার ওপর প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে, যেখানে প্রায় ৫০০ বেসামরিক লোক আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি শিশু রয়েছে। কিন্তু প্রচন্ড গোলাবর্ষণের কারণে তাদের উদ্ধারের কোন চেষ্টা করা যাচ্ছে না।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, তার বাহিনী প্রতি মিটার মাটির জন্য লড়াই করে যাবে এবং তিনি আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র দেবার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
স্বঘোষিত ডোনেৎস্ক গণপ্রজাতন্ত্রের একজন সামরিক প্রতিনিধি এদুয়ার্ড বাসুরিন বলেছেন, সেভেরোডোনেৎস্কে যে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা আছে তাদের অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে হবে, নয়তো মরতে হবে। মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় তিনি বলেন, ইউক্রেনের সৈন্যরা এ শহর থেকে বেরুতে পারবে না, কারণ সবশেষ সেতুটিও এর মধ্যে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তৃতীয় সেতুটি ধ্বংসের এ দাবি বিবিসি নিশ্চিত করতে পারেনি এবং ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের দিক থেকেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
সেভেরোদোনেৎস্ক কেন গুরুত্বপূর্ণ? শহরটিকে দখল করার ওপর রাশিয়া খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে, কারণ সেভেরোদোনেৎস্ক এবং এর সংলগ্ন আরেকটি শহর লিসিচানস্ক মিলে পুরো জায়গাটি হচ্ছে শিল্পকারখানাসমৃদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক কেন্দ্র। এ দুই জোড়া শহর দখল করতে পারলে রাশিয়ার হাতে লুহানস্ক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে। এ অঞ্চলের কিছু অংশ ইতোমধ্যেই রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে আছে। এ লুহানস্ক এবং পার্শ্ববর্তী ডোনেৎস্ক - যা দক্ষিণ ইউক্রেনের মারিউপোল থেকে উত্তরে রুশ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত - মিলেই হচ্ছে ডনবাস অঞ্চল, যা রাশিয়া তাদের ভাষায় মুক্ত করতে চায়, এবং এটা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট পুতিনের শীর্ষ অগ্রাধিকার। আর মার্কিন কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে ডনবাসে রাশিয়া যদি সাফল্য পায় - তাহলে মস্কো পুরো এলাকাটিকেই একসময় নিজের অংশ করে নেবে।
পশ্চিমাদের পাঠানো বিপুল অস্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে রাশিয়া : রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তারা ডোনেৎস্ক অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সরঞ্জামের মজুত ধ্বংস করে দিয়েছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে কিছু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর পাঠানো অস্ত্রও আছে। মন্ত্রণালয়ে বলছে, উডাশনে রেল স্টেশনের কাছে ইউক্রেনের বাহিনীকে পাঠানো সামরিক সরঞ্জামের ওপর বিমান থেকে ছোঁড়া নির্ভুল নিশানার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হানা হয়।
শহরে মাত্র হাজার ১৫ লোক আছে : সেভেরোদোনেৎস্ক শহরটি বেশ কিছুদিন ধরেই রুশ বাহিনীর বোমাবর্ষণের শিকার হচ্ছিল। সেভেরোদোনেৎস্ক ও লিসিচানস্ক এই দুটি শহর কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিভারস্কি ডোনেটস নদীর দুই পারে অবস্থিত। এ নদীর ওপর তিনটি সেতু আছে। গত রোববার রুশরা তিনটি সেতুর দুটিই উড়িয়ে দেয়। এখন তাদের লক্ষ্য হচ্ছে তৃতীয় সেতুটি ধ্বংস করা। সেটা করতে পারলে সেভেরোদোনেৎস্ক ইউক্রেনের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। যুদ্ধের আগে শহরটির জনসংখ্যা ছিল ১ লাখ। এর মধ্যে মাত্র ১৫ হাজারের মতো লোক এখনো শহরে বাস করছে। শহরটিতে যেভাবে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে এবং রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ হচ্ছে তাতে এই বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া কার্যত অসম্ভব বলে বলা হচ্ছে।
ইউক্রেনীয় বাহিনী দোনেৎস্কে ২৫টি গ্র্যাড ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে : যৌথ যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় কেন্দ্রের দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক মিশন সোমবার জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী গ্র্যাড ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে দোনেৎস্ক অঞ্চলে বোমাবর্ষণ করেছে। মিশনটি বলেছে যে, শহরের কুইবিশেভস্কি জেলায় ছয় মিনিটের একটি আক্রমণে ইউক্রেনীয় বাহিনী ২৫টি গ্র্যাড ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ইউক্রেনীয় বাহিনী এদিন সকাল থেকে দোনেৎস্কে গোলাবর্ষণ করছে, এতে হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
মিশন অনুসারে, মস্কোর সময় ১৪:২৫-এ কুইবিশেভস্কি জেলায় সাতটি ১২২-মিমি শেল নিক্ষেপ করা হয়। ডিপিআর শহরগুলো সম্প্রতি ইউক্রেনীয় বাহিনীর তীব্র বোমা হামলার শিকার হয়েছে, যা ন্যাটো দেশগুলোর পরিষেবাতে ১৫৫ মিমি কামান ব্যবহার করে। কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো এর আগে ইউক্রেনকে এম৭৭৭ ১৫৫ মিমি হাউইটজার এবং গোলাবারুদ সরবরাহ করেছিল। ইউক্রেনীয় বাহিনীও ফরাসি সিজার আর্টিলারি সিস্টেম ব্যবহার করেছে বলে জানা গেছে।
ইউক্রেনে লড়াইয়ে নিহত প্রাক্তন ব্রিটিশ সৈন্য : ইউক্রেনের সেভেরোডোনেটস্ক শহরে রাশিয়ান বাহিনীর সাথে যুদ্ধে একজন প্রাক্তন ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয়েছে, তার পরিবার একথা ঘোষণা করেছে। শনিবার ফেসবুকে পোস্ট করা একটি বিবৃতিতে তার বাবা ডিন লিখেছেন যে, জর্ডান গ্যাটলি ‘অন্যান্য অঞ্চলে একজন সৈনিক হিসাবে তার কর্মজীবন চালিয়ে যেতে’ মার্চ মাসে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ছেড়েছিলেন এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের দেশকে রক্ষা করতে সহায়তা করেছেন।
‘গতকাল (১০ জুন) আমরা ইউক্রেনের সেভেরোডোনেটস্কে আমাদের ছেলে জর্ডানকে হত্যার মর্মান্তিক খবর পেয়েছি... সে তার কাজ পছন্দ করেছিল এবং আমরা তাকে নিয়ে খুব গর্বিত। সে সত্যিই একজন নায়ক ছিল এবং আমাদের হৃদয়ের মধ্যে থাকবে চিরতরে’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
গ্যাটলি পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের প্রধান কৌশলগত শহরের জন্য যুদ্ধে নিহত হন, যেখানে সাম্প্রতিক দিনগুলিতে লড়াই তীব্র হয়েছে। তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধে নিহত দ্বিতীয় ব্রিটিশ বলে মনে করা হয় এবং এপ্রিলে স্কট সিবিলি নামে একজন ব্রিটিশ সৈনিক, বিশ্বাস করা হয়েছিল যে, রাশিয়ান বাহিনীর সাথে লড়াই করে মারা গিয়েছিল। গ্যাটলি পরিবারের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে: ‘আমরা তার দলের কাছ থেকে তার জ্ঞানের সম্পদ, একজন সৈনিক হিসাবে তার দক্ষতা এবং তার কাজের প্রতি তার ভালবাসার কথা বলে বেশ কিছু বার্তা পেয়েছি।
ইরান সফরে যাবেন লাভরভ : রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ইরান সফর করবেন। ইরানের একজন মুখপাত্র গতকাল সোমবার একথা জানিয়েছেন। সায়ীদ খতীবজাদেহকে উদ্ধৃত করে ইয়াং জার্নালিস্ট ক্লাব জানিয়েছে, তার সফরের কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। সূত্র : বিবিসি বাংলা, তাস, এপি, দ্য গার্ডিয়ান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Apurba Sarker ১৪ জুন, ২০২২, ৬:৪৪ এএম says : 0
আমেরিকা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়ে তাদের গোপন উদ্দেশ্য (এক. অস্ত্র বিক্রি, দুই গোটা ইউরোপকে অস্থিতিশীল/ দুর্বল করা ) বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। ইউরোপে এখন প্রায় সত্তুর লাখ শরনার্থী ।আমেরিকা একজনও নেয়নি। এই যুদ্ধে এখন আর তাদের সেরকম আগ্রহ নেই। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি শেষ। তারা এখন চীন- তাইওয়ান যুদ্ধ বাধানোর মাধ্যমে তাইওয়ানে অস্ত্র বিক্রি করতে মনোসংযোগ করেছে। তাদের অস্ত্র কোম্পানিগুলো অস্ত্র তৈরি করে দিশা পাচ্ছেনা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিরাপত্তার অযুহাত তুলে যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়ে অস্ত্র বিক্রিই তাদের মুল উদ্দেশ্য।
Total Reply(0)
Zayan Ahmed Ziabur ১৪ জুন, ২০২২, ৬:৪৪ এএম says : 0
খুশি হচ্ছি,কারন এ জয় রাশিয়ার, আর এই হার মানে ইউক্রেনের হার নয়,এটা ন্যাটোর হার,আমেরিকার হার রাশিয়ার কাছে
Total Reply(0)
Md Hashibur Rahman ১৪ জুন, ২০২২, ৬:৪৫ এএম says : 0
পুরো ইউরোপ আমেরিকা মিলেও এক রাশিয়ার সাথে পারতেছেনা। হাস্যকর ব্যাপারটা। পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন রাশিয়া যেভাবে স্বাধিনতা কামি পুশিলিনদের সাহায্য করছে সেটা খুবই পজিটিভ দিক।
Total Reply(0)
Iqbal Hossain ১৪ জুন, ২০২২, ৬:৪৫ এএম says : 0
ইউরোপের পরাজয় !!! ইউরোপীয়দের বশ্যতা স্বিকার করতে হবেই হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন