রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে আগামী কয়েকমাসে এক লাখ সাইত্রিশ হাজারের মতো সৈন্য বাড়তে পারে। প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এ সংক্রান্ত একটি ডিক্রি জারি করেছেন। বর্তমানে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে নিয়মিত সৈন্য সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। এছাড়া আরো নয় লাখ বেসামরিক স্টাফ রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের ডিক্রি এমন এক সময়ে আসলো যখন রাশিয়ায় সামরিক বাহিনীতে জনবল বাড়ানোর জন্য দেশজুড়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। এই ডিক্রির মাধ্যমে সৈন্যদের নগদ অর্থের প্রণোদনাও দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন খবরে জানা যাচ্ছে, নিয়োগকারীরা রাশিয়ার বিভিন্ন কারাগার পরিদর্শনে যাচ্ছেন। সেখানে গিয়ে কয়েদিদের মুক্তি করা এবং নগদ অর্থের প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবীদের দ্বারা ব্যাটালিয়ন গঠন করা হচ্ছে। এসব ব্যাটালিয়ন সামরিক বাহিনীর অংশ হবে। তবে ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে স্বেচ্ছাসেবী ব্যাটালিয়ন গঠন করার জন্য পর্যাপ্ত লোক পাওয়া যাচ্ছে না বলে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের জারি করা ডিক্রিতে দেশটির সামরিক বাহিনীতে লোকবলের সংখ্যা বিশ লাখ ঊনচল্লিশ হাজার সাতশ আটান্ন জন বলা হয়েছে। এর মধ্যে এগারো লাখ পঞ্চাশ ছয়শত আটাশ জন নিয়মিত সৈন্য। নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য ফেডারেল সরকারের বাজেট থেকে অর্থ বরাদ্দের জন্য বলা হয়েছে। ২০২৩ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে এটি কার্যকর হবে। রাশিয়াতে বর্তমানে ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী পুরুষদের সামরিক বাহিনীতে এক বছর কাজ করার জন্য সরকার চাইলে ডাকতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের যোগ দেয়া বাধ্যতামূলক। তবে কারো যদি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকে কিংবা উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি হবার মাধ্যমে যোগ নাও দিতে পারে কিংবা তাদের কাজের মেয়াদ কমিয়ে আনতে পারে। নতুন নিয়োগের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা বাড়ানো হবে নাকি সমারিক বাহিনীর জন্য বেসামরিক লোকদের বাধ্যতামূলক ডাকা হবে - সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। তবে রাশিয়ার আইন অনুযায়ী এ ধরণের ব্যক্তিদের যুদ্ধে যাবার ক্ষেত্রে চার মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক।
জাপোরিঝজিয়া প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ থেকে বিচ্ছিন্ন ইউক্রেন : রুশ বাহিনীর দখলে থাকা জাপোরিঝজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে ইউক্রেনের জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে দেশটির পরমাণু সংস্থা। বিবিসি জানায়, এই প্রথম ইউক্রেনের জাতীয় গ্রিড থেকে জাপোরিঝজিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হল। এটি ইউরোপের সর্ববৃহৎ পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যেটির কাছে রুশ বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনের সেনাদের তুমুল লড়াই চলছে। যা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
জাপোরিঝজিয়ার কাছে গোলা হামলায় সৃষ্ট অগ্নিস্ফুলিঙ্গের কারণে বিদুৎ কেন্দ্রটির দুটি সক্রিয় পাওয়ার ইউনিটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশেপাশে তেজষ্ক্রিয়তার মাত্রা এখনও স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে। ইউক্রেনের মোট বিদ্যুতের এক পঞ্চমাংশের যোগান আসতো জাপোরিঝজিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। ফলে জাতীয় গ্রিড থেকে এটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ইউক্রেনের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
গত মার্চ মাস থেকে রুশ বাহিনী ওই পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দখল নিয়ে আছে। কিন্তু ইউক্রেনের কর্মীরাই সেটি পরিচালনা করে আসছেন। সম্প্রতি ক্রেমলিন ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলকে জাপোরিঝজিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করার অনুমতি দেবে। সেটি না হওয়া পর্যন্ত সেখানে আসলে কী ঘটেছে বা ঘটছে তা অনুমান করা কঠিন।
জার্মানিকে না দিয়ে গ্যাস পুড়িয়ে ফেলছে রাশিয়া : স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে রাশিয়া তাদের একটি গ্যাস স্থাপনায় প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাস পুড়িয়ে ফেলছে যার আর্থিক মূল্য প্রায় এক কোটি ডলার। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের নতুন এই স্থাপনাটি ফিনল্যান্ড সীমান্তের কাছে, সেন্ট পিটার্সবার্গের উত্তর-পশ্চিমে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গ্যাস এর আগে নর্ডস্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইন দিয়ে জার্মানিতে রপ্তানি করা হতো। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে রাশিয়া এই পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। মস্কো বলছে কারিগরি ত্রুটির কারণে গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে। কিন্তু জার্মানি বলছে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও গ্যাস আমদানি কমিয়ে দেয়ার পর, রাজনৈতিক কারণেই মস্কো গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এর জের ধরে ইউরোপ জুড়ে জ্বালানির মূল্য নজিরবিহীন হারে বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
ইউক্রেনীয়রা ভাল, কিন্তু তাদের সরকার খারাপ : বেলারুশিয়ান প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো গতকাল বলেছেন, ইউক্রেনের জনসংখ্যার সিংহভাগই চরমপন্থী জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে না। এটি করে কিয়েভের নেতৃত্ব যা নাৎসিবাদের সমতূল্য। ‘আমার জন্য, ইউক্রেনীয়দের প্রতি আমার খুব ভালো মনোভাব আছে, তাদের সম্পর্কে খারাপ কিছু নেই... তারা মোটেও নাৎসি নয়,’ বেলটিএ এজেন্সি তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘নাৎসিরা তারাই যারা ক্রমানুসারের শীর্ষে রয়েছে, যারা ধূমপান করে, মদ্যপান করে, নাক ডাকে এবং তারপর টিভি বা ইন্টারনেটে অনেক বাজে কথা বলে। প্রকৃতপক্ষে, সাধারণ লোকেরা ভাল মানুষ, তারা আমাদের মতো একই ধরনের মানুষ।’ সে কারণেই, তার কথায়, তিনি ইউক্রেনীয় জনগণকে স্বাধীনতা দিবসে অভিনন্দন জানানো প্রয়োজন বলে মনে করেন এবং ইউক্রেনীয় রাজনীতিবিদদের প্রতিক্রিয়া বেশ অদ্ভুত বলে মনে করেন। ‘কেউ কেউ ক্ষুব্ধ ছিল, কিন্তু আমি সেদিকে কোন মনোযোগ দেইনি,’ লুকাশেঙ্কো বলেছেন। সূত্র : বিবিসি নিউজ, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, এপি, তাস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন