দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে বেহাল হয়ে পড়েছে রামগঞ্জ উপজেলার প্রায় একশ’ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক। খানাখন্দে ভরা এসব সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হয়। ধুলোবালিতে ভরা ভাঙা এই সড়কগুলোতে চলাচলের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও রয়েছে। কোন কোন সড়ক দীর্ঘ ১২ থেকে ১৫ বছরে একবারও সংস্কার না হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাম-গঞ্জের স্কুল-মাদরাসা ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। রামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামীণ সড়কগুলো যেন মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। নিত্যদিন পিছু ছাড়ছে না ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সড়কের বেহাল দশার কারণে গাড়ির টায়ার দ্রুত নষ্ট হওয়াসহ বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চালকরা। এই সড়কগুলির দ্রুত সংস্কার এলাকার সকলের প্রাণের দাবি।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নোয়াগাঁও ইউনিয়নের করইতলা বাজার থেকে নোয়াপাড়া আকুয়ালী মার্কেট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘ ১৫ বছরেরও সংস্কার হয়নি। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় পুরো সড়ক জুড়ে খানাখন্দে ভরা। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী। তার ওপর স্থানীয় লোকজনের মাছ চাষের কারণে পুকুর পাড়ের গাছপালা ভেঙে পানিতে পড়ার কারণে কোথাও কোথাও সড়কটি সরু হয়ে সাধারণের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। একই ইউনিয়নের পানিয়ালা বাজার থেকে হোটাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়ক, আসারকোটা আলার বাড়ি থেকে দোয়াগাজী বাড়ি পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সড়ক, আশারকোট সর্দার বাড়ি থেকে কোমরতলা পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সড়ক, করইতলা বাজার থেকে বারঘরিয়া পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘ ১৫ বছরের ও সংস্কার হয়নি।
স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে প্রাপ্ততথ্য মতে, কাঞ্চনপুর উচ্চ বিদ্যালয়- চৌধুরী বাড়ি এক কিলোমিটার, মুন্সিবাড়ির-নিচহরা-নবীগঞ্জবাজার চার কিলোমিটার, নিচহরা উচ্চ বিদ্যালয়-রাঘবপুর এক কিলোমিটার, মুন্সিবাড়ি-সেফালিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়-কাঞ্চনপুর উচ্চ বিদ্যালয় পাঁচ কিলোমিটার, নিচহরা উচ্চ বিদ্যালয়-সোনাপুর চার কিলোমিটার, মুন্সিবাড়ির দর্জা-পূর্ব সেফালিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুই কিলোমিটার, ফতেহপুর ওইদ্বারা দিঘিরপাড়-কামারহাট বাংলাবাজার-নাগের দিঘিরপাড় সাত কিলোমিটার, ডা¹াতলী বাজার-রামগঞ্জ বাজার ছয় কিলোমিটার, সোনাপুর-গুপ্টি ছয় কিলোমিটার, শ্যামপুরবাজার-শাহাপুর তিন কিলোমিটার, মধ্যকরপাড়া-দাশের মসজিদ এক কিলোমিটার, শাহজকি সড়ক-মধ্য করপাড়া বড়বাড়ি এক কিলোমিটার, পশ্চিমকরপাড়া-নূরে মদিনা দাখিল মাদরাসা তিন কিলোমিটার, শাহজকি সড়ক-সমিতির বাজার তিন কিলোমিটার, করপাড়া পাঁচহাজীবাড়ি-হাটখোলা এক কিলোমিটার, আন্দিরপাড় বাজার-ছমার ভিটা এক কিলোমিটার, লামচর বেপারীবাড়ি-ফতেহপুর দিঘিরপাড় এক কিলোমিটার, নাগমুদ বাজার-দুলার বাড়ি এক কিলোমিটার, নাগরাজারামপুর-নাগমুদ তিন কিলোমিটার, টিউরিবাজার-ভাটরাবাজার ৪ কিলোমিটার, নাগমুদ বাজার-আকরতমা-চিতোষী সড়ক ৪ কিলোমিটার, ভাটরাবাজার-দক্ষিনপাড়া এক কিলোমিটার, দল্টাকলেজ-নান্দিয়ারা ৩ কিলোমিটার, উত্তর দল্টা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-হাসিমপুর-ভাটরাবাজার ৪ কিলোমিটার, দল্টা কলেজ-জাফরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিন কিলোমিটার, চিতোষী সড়ক-নান্দিয়ারা দুই কিলোমিটার, বাউরখাড়া বড় শেখের বাড়ি-বেতুমিয়ার বাড়ি চার কিলোমিটার, বিষ্ণপুর মেইন রোড-টুকুন আলী মুন্সি বাড়ি দুই কিলোমিটার সড়কসহ প্রায় একশ’ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা।
দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার বিহীন এসব সড়কের বেশির ভাগ অংশে খানাখন্দে ভরা, একটু বৃষ্টি হলেই জমে থাকে পানি। এতে চলাচলে দুর্ভোগে পড়ে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। বিভিন্ন সময় এসব সড়ক সংস্কারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চেষ্টা-তদবির করেও কোনো ফল পায়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
অটোরিকশা চালক ও নোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সিরাজ মিয়া জানান, ভাঙ্গাচুরার সড়কের কারণে আমরা রিকশা চালাতে পারিনা। একবার যাতায়াত করলে নাট বল্টু খুলে যায়। অনেক সময় দুইটি রিকশা একসাথে পারাপার হতে গিয়ে পুকুর বা সড়কের পাশের ডোবানালাতে পতিত হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। ট্রলি চলাচলের কারণে সড়কটিতে খানাখন্দে ভরা। ট্রলি চলাচলে বাধা দিতে গেলে তারা আমাদের হুমকি দেয়।
রামগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহীদুল হাসান বলেন, রামগঞ্জ উপজেলায় এত পাকাসড়ক যে আমরা তা সংষ্কারের হিমশিম খাচ্ছি। পাকা করার জন্য অনেক সড়কের তালিকা করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন