শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

পদ্মা সেতুর উৎসব বন্ধ করে বন্যা দুর্গতদের ত্রাণের ব্যবস্থা করার আহ্বান বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২২, ২:০১ পিএম

পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসব বন্ধ করে বন্যা দুর্গতদের ত্রাণের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বানের পানিতে ভাসছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলার ৯০ ভাগের বেশি অঞ্চল। মহা দুর্যোগের করাল গ্রাসে যখন মানুষ বিপর্যস্ত বিপন্ন তখন নিশিরাতের মাফিয়া সরকার মহাদূর্নীতির এপিটাফ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের উৎসব আনন্দে আত্মহারা। বন্যায় ভাসছে দেশ আর সরকারপ্রধান ভাসছে আনন্দে। প্রতিদিন আনন্দ মিছিল করছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশী নাচগানের লোক নিয়ে এসে কনসার্ট করছে। কি বিভৎসতা! কি অমানবিকতা! তিনি বলেন, আমাদের দাবী পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসব বন্ধ করুন। এই লোক দেখানো ভোজবাজী বন্ধ করুন। আমরা দাবি করছি বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলোকে দুর্গত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হোক এবং কোনো বিলম্ব ছাড়া এই অঞ্চলগুলোর জনগণের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হোক। আমরা অবিলম্বে সরকারকে বন্যা কবলিত এলাকাগুলো গিয়ে দুর্গত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করে এবং বন্যা যেন না হয় সেটার ব্যবস্থা করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
রোববার (১৯ জুন) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আত্মপ্রচারে নিমগ্ন নিশিরাতের বেপরোয়া সরকারের চরম ব্যর্থতা, লুটপাট, উদাসীনতা, অদুরদর্শিতা আর খামখেয়ালীপনার কারণে দেশের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। বিশেষ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা, কুড়িগ্রাম-এসব জেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে। সিলেট জেলার প্রায় পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। বানের পানিতে ভাসছে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলারও ৯০ ভাগের বেশি অঞ্চল। অটো ভোটের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান গতকাল স্বীকার করেছেন, দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে ১০ জেলার ৬৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত। ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন ভয়ংকর বন্যা আর হয়নি। মৌলভী বাজার, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনেক এলাকা পানিতে একাকার।
তিনি বলেন, বন্যায় উপায় অন্তর না দেখে মা তার সন্তানদের পাতিলে বাসিয়ে দিচ্ছেন এমন সংবাদও গণমাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি, গবাদি পশু ভেসে যাচ্ছে পানিতে, ঘরবাড়িসহ সব জিনিস নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সবকিছু হারিয়ে মানুষ এখন সর্বশান্ত। ত্রাণের জন্য গোটা বন্যাদুর্গত এলাকা হাহাকার করছে। সিলেট এবং সুনামগঞ্জে শুকনো মাটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বজ্রপাত, বন্যা ও ভূমিধসে গত দুই দিনে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ সারাদেশ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দুই জেলায় ব্যাংকিং সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। সিলেটের রেলস্টেশন, বিমান বন্দর পানির নিচে। ট্রেন ও বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় বানের পানির নিচে থাকায় সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেটে বিদুৎ সরবরাহ বন্ধ। অন্ধকারে ডুবে আছে। মোমবাতিও মহার্ঘ হয়ে উঠেছে। হাসপাতালে পানি ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিক চিকিৎসাও ব্যাহত হচ্ছে। চরম বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটছে সিলেট, সুনামগঞ্জের বানভাসী মানুষের। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ঢুকেছে পানি। সেখানে মানুষ আর গবাদিপশু ঠাসাঠাসি করে বাস করছে। চারিদিকে থৈ থৈ পানি কিন্তু বিশুদ্ধ খাবার পানি নেই, খাদ্য নেই, পয়:নিস্কাসনের ব্যবস্থা নেই। মানুষ হাহাকার করছে। মেঘালয়-আসাম থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত জনপদে পরিণত হয়েছে বিস্তীর্ণ জনপদ। সেই সঙ্গে টানা বারিপাত।
রিজভী বলেন, এই বন্যার আরো কারণ আছে। হাওর ও নদীগুলো বাঁধ এবং সেতু দেওয়া হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। সেখানে এত দুর্নীতি হয়েছে যে, সব বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে এবং নতুন করে যেসব রাস্তা তৈরি করা হয়েছে-তা ভেঙে যাচ্ছে। সব কিছু সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আজকে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে আমাদের দেশে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, করোনা মোকাবেলায় যেমন এই গণবিচ্ছিন্ন সরকার একবারেই ব্যর্থ, চরম উদাসীনতা, অবহেলা ও দুর্নীতিতে গোটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঠেলে দিয়েছিল, ঠিক তেমনি এই ভয়াবহ বন্যা নিয়েও সরকারের নির্লিপ্ততা, নিষ্ক্রিয়তা, মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করেছে। প্রতিটি দুর্যোগের সময়ে, জনগণের কষ্টের সময়ে, সরকার ব্যস্ত হয়ে যায় উৎসব নিয়ে আনন্দে। করোনায় যখন মানুষের জীবন-মরণ লড়াই চলছিল তখন জন্ম শত বার্ষিকীর উৎসবে মত্ত ছিল তারা। এখন মৌজ মাস্তি করছে পদ্মা সেতু নিয়ে। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের নামে শত শত কোটি টাকা খরচ করে সারাদেশে উৎসবের আয়োজন নিয়ে শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রী এমপিরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সব জেলা প্রশাসককে লিখিত নির্দেশ দিয়েছে, টানা পাঁচ দিন সারাদেশে আনন্দ উৎসব আমোদ উল্লাস করতে হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে হবে। নাচ গান করতে হবে। আতশবাজী ফুটাতে হবে। বর্ণাঢ্য লেজার শোর আয়োজন করতে হবে। সারাদেশে একসঙ্গে বেলুন উড়াতে হবে। পদ্মা সেতুর মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সারাদেশে একযোগে বিগ স্ক্রীনে দেখাতে হবে। শেখ হাসিনা নিজে সারাদেশের মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন আনন্দ উৎসব করতে। দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন পদ্মার দুই প্রান্তের সমাবেশে লক্ষ লক্ষ লোক জমায়েত ঘটাতে। কয়েক হাজার বাস রিকুইজিশন করা হয়েছে। ৩০০ লঞ্চ রিকুইজিশন করা হয়েছে। জনসভাস্থলে ৫০০ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মান করা হচ্ছে। যারা উৎসবে অংশ নিতে অনিহা দেখাবে তাদেরকে চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। দুই প্রান্তে থানা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার নিরাপত্তার জন্য হাজার হাজার আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। এসব দেখে জনগণ মনে করে ফেরাউনের শাসনও শেখ হাসিনার শাসনের কাছে হার মানবে।
তিনি বলেন, এখানেই থেমে নেই। দেশের সংবাদপত্র এবং সকল মিডিয়াকে সরকার লিখিতভাবে ফরমান জারি করেছে প্রতিদিন পদ্মা সেতু নিয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। মৌখিকভাবে বলা হয়েছে কেউ নিয়মিত ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ না করলে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়া হবে। তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে।কয়েকদিন আগে ভারত থেকে একদল সাংবাদিক ভাড়া করে এনে পদ্মা সেতু দেখানো হয়েছে। তাদেরকে এই সেতু নিয়ে শেখ হাসিনার স্তুুতি বন্দনা করে রিপোর্ট লেখার জন্য প্রণোদনা দেয়া হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন উৎসবের নামে শত শত কোটি টাকা উড়ানো হচ্ছে। অথচ সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও উত্তরাঞ্চলসহ বন্যা উপদ্রুত এলাকা সমূহে প্রায় কোটি পানি বন্দি মানুষের সাহায্যের জন্য সরকারি বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন সাংবাদকদের জানিয়েছেন, এর মধ্যে সিলেটে ২০০ টন চাল, নগদ ৩০ লাখ টাকা, ৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। ত্রান প্রতিমন্ত্রী বলেছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪০ লাখ মানুষ। বরাদ্ধ ৬০ লাখ টাকার কথা বলা হলেও মূলত: ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তার মানে জনপ্রতি দেড় টাকা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জনসভাস্থলে অস্থায়ী ৫০০ টয়লেট স্থাপন করতে যে খরচ হবে তার দশ ভাগের এক ভাগও বরাদ্ধ পায়নি বন্যার্তরা।
রিজভী বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে স্ব স্ব জেলার নেতাদের বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে সিলেট মহানগর, সিলেট জেলা, হবিগঞ্জ জেলা, সুনামগঞ্জ জেলা, নেত্রকোণা জেলা বিএনপি’র পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গতদের সাহায্যার্থে কাজ করে যাচ্ছে। তারা স্যালো নৌকা ও ট্রলার দিয়ে দুর্গত এলাকার লোকজনদের নিরাপদ স্থলে আনতে সহযোগিতা শুরু করেছে। বন্যার্তদের মাঝে বিএনপির পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন