শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

পদ্মায় বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি

গোদাগাড়ীতে অসময়ের ভাঙন

মো. হায়দার আলী, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে অসময়ে পদ্মায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনে এরই মধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে উপজেলার খারিজাগাতি মৌজার বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি। এখন ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে মোল্লৗপাড়া এলাকার কয়েকশ’ পরিবার। গেল কয়েক বছরের ভাঙনে ভিটে হারানো মানুষ এসে বসতি গড়েছেন ওই এলাকায়। এলাকাবাসীর ভাষ্য, খারিজাগাতি মোল্লাপাড়ার পূর্ব ও পশ্চিমে পদ্মার তীর স্থায়ী সংরক্ষণের কাজ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। শুধু মাঝের ছয় কিলোমিটার এলাকায় কাজ হয়নি। ফলে প্রতি বছরই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে লোকালয়। এবারো চলে গেছে বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি বছর বন্যার সময় নদীতে ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদী ভাঙন শুরু হয় এবং কোটি কোটি টাকার সম্পদ ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর সকল পেশাজীবী মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকার রাজাবাড়ী থেকে বালিয়াঘাটা পর্যন্ত পদ্মা নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ করে কিন্তু দলীয় বিবেচনায় ঠিকাদার, উপÑঠিকাদার নিয়োগ করে সিডিউল বহির্ভূতভাবে নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী কম পরিমাণে ব্যবহার করায় বছর না ঘুরতে বাঁধের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সময় নি¤œমানের বাঁধের কাজের উপর দৈনিক ইনকিলাবসহ স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি সবকিছু ম্যানেজ করা হয়েছিল লুটপাটের টাকা দিয়ে। অথচ সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালীয় সময়ে সেনা সদস্য দিয়ে গোদাগাড়ী মডেল থানার এলাকা থেকে যে বাঁধটি নির্মাণ করেছিল সে বাঁধ দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়েছে। গত কয়েক বছরে বন্যা ও নদী ভাঙনে গোদাগাড়ীর  সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম, গোদাগাড়ী পৌরসভার কুঠিপাড়া, সারাংপুর, সুলতানগঞ্জ, মাদারপুর, লিপস্টিকপাড়া, জামায়াতীর মোড়, বারুইপাড়া, হাটপাড়া, গোদাগাড়ী উপজেলার ফরাদপুর, প্রেমতুলি, বিদিরপুর, পিরিজপুর, উজানপাড়া,আলিপুর, খারিজাগাথী, মৌল্লাপাড়া, খরচাকা, পালপাড়া প্রভৃতি এলাকা। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ফারাক্কা বাঁধ দেয়ার পর থেকে পদ্মা নদী অব্যাহতভাবে ভাঙতে ভাঙতে প্রায় ১২ কিলোমিটার বাংলাদেশে ভিতর চলে এসেছে। অথচ পাক-ভারত আমূলে পদ্মা নদী পাকিস্তান-ভারতের সীমান্ত রেখা দ্বারা বিভক্ত ছিল। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ কয়েক বছর পূর্বে গোদাগাড়ী সফরে এসে এক জনসভায় দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার সময় নির্মিত বলে আওয়ামী সরকার ও বিএনপি সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বাঁধটির সংস্কার করেননি। জাতীয় পাটি ক্ষমতায় আসলে এ এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হবে ইনশাল্ল­াহ। জাতীয় পার্টির সরকার একমাত্র দেশের মানুষকে শান্তিতে, সুখে রাখতে পারে এটা জনগণ ভালোভাবে জানেন। এদিকে সরেজমিনে দেখা ভাঙন থেকে দেড়শ’ মিটার দূরেই খারিজাগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাশেই রয়েছে নিমতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেশ কয়েকটি মসজিদ, ২ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে রাজাবাড়ী গবাদিপশু উন্নয়ন খামার, ছাগল উন্নয়ন খামার, রাজাবাড়ী হাট উচ্চ বিদ্যালয়, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও আঞ্চলিক হাঁস-মুরগি উন্নয়ন খামার। ভাঙন ঠেকানো না গেলে পুরো লোকালয় পড়বে হুমকিতে। গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বলেন, কয়েকবছর ধরেই ওই এলাকায় পদ্মার তীর ভাঙছে বর্ষায় এবারও ভেঙেছে। তবে বর্ষার পর তা মারাত্মক আকার নিয়েছে। এরই মধ্যে ওই এলাকার ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মার তীর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ ছাড়া কিছুতেই ভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয়। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এখন এলাকার মানুষ তাদের মুখের দিকে চেয়ে রয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রেজাউল করিম রেজা জানান, গত বছর উপজেলার রাজাবাড়ি থেকে বালিয়াঘাটা এলাকার মধ্যে আড়াই কিলোমিটার পদ্মার তীর স্থায়ী সংরক্ষণ কাজ করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্বের ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ কোটি টাকা। সেটি অনুমোদন হলেই ভাঙনকবলিত ওই এলাকায় পদ্মা তীর প্রতিরক্ষার কাজ শুরু হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন