সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের ঐতিহ্য দেশজুড়ে। এ সুখ্যাতি ধরে রাখতে ও পাটচাষকে জনপ্রিয় করতে গড়ে উঠছে রাজবাড়ীতে পাটশিল্প। সহজলভ্য কাঁচামাল হওয়ার কারণে এক দশকে পাঁচটি পাটকল গড়ে উঠেছে। এতে একদিকে স্থানীয়ভাবে হয়েছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অন্যদিকে পাটের চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় কৃষকদের পাটচাষে আগ্রহ বাড়ছে। ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে আর্থ-সামাজিক।
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে রাজবাড়ী পাটের জন্য বিখ্যাত। এ অঞ্চলে পাটের মান খুব ভালো। রাজবাড়ীতে প্রতিবছর ৪৫-৫০ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়। আশপাশের জেলার মাটিও পাট চাষের জন্য খুব উপযোগি। একারণে রাজবাড়ীতে পাটকল গড়ে উঠছে।
রাজবাড়ীতে পাটকল রয়েছে ৬টি। প্রথম নেহাজ জুট মিল। রাজবাড়ী-ফরিদপুর সড়কের রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকার এই পাটকলটি ডেসটিনি লিমিটেডের সাথে যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করতে গিয়ে নানা ধরণের মামলা ও জটিলতায় বন্ধ রয়েছে।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে সদর উপজেলার আলাদীপুরে কার্যক্রম শুরু হয় রাজবাড়ী জুটমিলের। এরপর কয়েক বছরের ব্যবধানে গড়ে উঠেছে আরও কয়েকটি পাটকল। বর্তমানে চালু থাকা পাটকলগুলোর মধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আহলাদিপুরে রাজবাড়ী জুট মিলস, রামকান্তপুর ইউনিয়নের কাজীবাঁধা এলাকায় গোল্ডেশিয়া জুটমিল, বরাট ইউনিয়নের ভবদিয়ায় গ্লোবাল জুট মিল, কালুখালী উপজেলার রতনদিয়ায় কিং জুট মিল এবং বালিয়াকান্দির জামালপুরে আ. জলিল মিয়া জুট মিলস। এসব পাটকলে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করে। পাটকলে উৎপাদিত পণ্য যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। রাজবাড়ীর নাম সারা বিশে^ ছড়িয়ে পড়াসহ আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা।
রাজবাড়ী জুটমিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী দিদার আহমেদ বলেন, ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১০ একর জমির ওপর কার্যক্রম শুরু। শুরুতে প্রতিদিন চারশ’ থেকে পাঁচশ শ্রমিক কাজ করতো। ১১ মাস পরে পাটকলে উৎপাদন শুরু হয়। শুরুতে প্রতিদিন উৎপাদন ছিল ৯ টন। পাটকল থেকে প্রধানত কার্পেট ব্যাকিং সুতা তৈরি করা হয়। যা ইরান, তুরস্ক প্রভৃতি দেশে কার্পেট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া আর কিছু পাটপণ্য তৈরি করা হয়। যা শতভাগ রফতানিমুখী। এখন কারখানার আয়তন ২২ একর জমির ওপর। বেড়েছে জনবল। প্রতিদিন তিন শিফটে কাজ করছে তিন হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। উৎপাদন ১০গুণ বেড়ে এখন প্রতিনিধি ৯০ টন। শুরুতে কারখানার স্থাপনা ছিল ৬০ হাজার বর্গফুট। এখন তা বেড়ে দাড়িয়েছে তিন লাখ বর্গফুটে। এছাড়া ৭৫ হাজার বর্গফুটে রয়েছে গুদাম ঘর।
পাট ব্যবসায়ী আশরাফুজ্জামান বলেন, আমি পাটের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আগে বিজিএমসিতে পাট দিতাম। সেখানে ২০১৬-১৭ সালের ৭ লাখ টাকা এখনো পাওনা। রাজবাড়ী জুটমিলের লেনদেন খুব ভালো। এখানে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে লেনদেন করা হয়। একারণে অল্প সময়ের মধ্যে পাওনা টাকা হাতে পাওয়া যায়।
গোল্ডেশিয়া জুট মিলের পরিচালক কাজী রাকিবুল হোসেন শান্তনু বলেন, পাট কলে সুতা ও বস্তা তৈরি করা হয়। এগুলো ভারত, চীন, ইরান, তুরস্ত, রাশিয়া প্রভৃতি দেশে পাঠানো হয়। তবে করোনা পরিস্থিতি ও বর্তমানে রাশিয়ায় যুদ্ধের কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া দেশ থেকে প্রচুর কাঁচাপাট রফতানি করা হয়। বাজারে প্রচুর পাট পাওয়া যায়। তবে দামের ক্ষেত্রে একটি রেজুলেশন থাকা প্রয়োজন। যে পাট তিন হাজার টাকা আগামীকাল সকালেই তা তিন হাজার একশ বা দুইশ টাকা হয়ে যাচ্ছে।
রাজবাড়ী চেম্বারের পরিচালক আবদুস সালাম বলেন, পাটকলগুলোতে হতদরিদ্র মানুষ কাজ করে। এলাকায় বেকারদের কর্মসংস্থান হয়েছে। তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হচ্ছে। দারিদ্রতার হার কমছে। সবমিলিয়ে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। এই শিল্পে বিত্তবানরা এগিয়ে এলে আর শিল্পকারখানা স্থাপন করলে এলাকার অবস্থার আরও পরিবর্তন হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন