শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের যুদ্ধ ঘোষণা

নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২৭ এএম, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬

অং সান সু চি রোহিঙ্গাদের বিদেশি হিসেবে বিবেচনা করছেন। তিনি বলছেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়। তারা বাঙালি। তিনি আরও বলেছেন, পুলিশের ওপর হামলার জবাবে সেনাবাহিনীর এই অভিযান চলছে আইনের শাসনের ওপর ভিত্তি করে
ইনকিলাব ডেস্ক
মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলমান রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সরকারের দমন-নিপীড়ন দীর্ঘদিনের। সরকার তাদের মৌলিক সব নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে, তাদের বিয়ে করার অধিকার নেই, ধর্মকর্ম করার অধিকার নেই, শিক্ষার অধিকার নেই। ২০১২ সালে বৌদ্ধ চরমপন্থীদের সহিংসতার কারণে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে বাস্তুচ্যুত হতে হয়। অনেকে তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চোরাকারবারিদের নৌকা করে পালিয়ে যায়। সে সময় এক লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এখন সেনাবাহিনীর অভিযানে রোহিঙ্গারা ফের তাদের গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, সহিংসতা থেকে বাঁচতে গত রোববার ও সোমবার কয়েক শ’ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে গিয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করেছে। জাতিসংঘের একটি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি দেখেছেন পাঁচ শ’রও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে তাদের আশ্রয় শিবিরগুলোতে প্রবেশ করেছে।
রয়টার্স এ খবরও দিয়েছে যে, চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।
গত ৯ অক্টোবর রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সীমান্তের তিনটি চেকপোস্টে অস্ত্রধারীদের হামলায় দেশটির নয়জন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের দমনে সেনাবাহিনীর এই অভিযান শুরু হয়। সীমান্তের তিনটি চেকপোস্টে কারা ওই হামলা চালিয়েছিল, এটা পরিষ্কার নয়। তবে মাদক চোরাচালান চক্র থেকে শুরু করে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের সবাইকে হামলাকারী বলা হচ্ছে। এ ঘটনার পর সেনাবাহিনীর অভিযানে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক লোক। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রকাশিত স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবিতে দেখা গেছে, ২২ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামের কমপক্ষে ৮৩০টি বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
মিয়ানমারের সেনাদের বিরুদ্ধে লুটপাট চালানো, নিরস্ত্র লোকজনকে হত্যা এবং নারীদের ধর্ষণ করার অভিযোগ রয়েছে। তবে মিয়ানমারের সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে। ৯ অক্টোবরের হামলা সম্পর্কে রাখাইন রাজ্যের সরকারি যে দলটি তদন্ত চালায়, সেই তদন্ত দলের চেয়ারম্যান উ অং উইন বলেছেন, মিয়ানমারের সেনারা কোনো রোহিঙ্গা নারীকে ধর্ষণ করবে না, কারণ ‘তারা খুবই নোংরা’।
মিয়ানমারের সরকার সম্প্রতি ঘোষণা করেছিল যে, তারা রাখাইন রাজ্যের সব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা করেছে। এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে ২৫ হাজার বাড়ি, ৬০০ দোকান, ১২টি মসজিদ এবং ৩০টিরও বেশি স্কুল। সরকারের এ ঘোষণার কারণেই হয়তো ৯ অক্টোবরের ওই হামলা হয়েছে।
এক বছর আগে মিয়ানমারে এক ঐতিহাসিক নির্বাচনের পর দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চি নতুন একটি গণতান্ত্রিক সরকারের প্রধান হন। তার এই বিজয়ে অনেকে আশা করেছিল যে তিনি হয়তো রোহিঙ্গাদের এই সঙ্কট নিরসন করবেন। নতুন সরকারও মিয়ানমারের জনগণের মানবাধিকার ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, যা আশা করা হয়েছিল, তা ছিল ভুল। অং সান সু চি রোহিঙ্গাদের বিদেশি হিসেবে বিবেচনা করছেন। তিনি বলছেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়। তারা বাঙালি। তিনি আরও বলেছেন, পুলিশের ওপর হামলার জবাবে সেনাবাহিনীর এই অভিযান চলছে আইনের শাসনের ওপর  ভিত্তি করে।
এদিকে রাখাইন রাজ্যে বেশির ভাগ মানবিক সহায়তাই পৌঁছাচ্ছে না। জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, অপুষ্টির শিকার হাজার হাজার শিশু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তারা খাবার এবং স্বাস্থ্যসেবা কোনোটাই পাচ্ছে না। সরকারের উচিত অবিলম্বে ওই এলাকায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে অনুমতি দেয়া। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র রাখাইন রাজ্যে চলমান এই সহিংসতার ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ ব্যাপারে জাতিসংঘের সহায়তা নিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। যদি অং সান সু চি মানবাধিকারের ধ্বজাধারী হিসেবে তার ভাবমর্যাদা রক্ষা করতে চান, তাহলে তাকে এসব আহ্বানে এখনই সাড়া দিতে হবে। 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
রবিউল ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ২:০০ এএম says : 0
সারা বিশ্বের উচিত মায়ানমারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া।
Total Reply(1)
হাঃ মোবারক ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:৩৩ পিএম says : 4
অবস্যই
ইনসান ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ৪:০৯ এএম says : 0
মায়নমারের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হোক
Total Reply(0)
Hasan Mohammad Akram ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:১২ পিএম says : 1
মুসলিম ভাইয়েরা কখনো আপনার রবের ক্ষমতাকে সামান্য ভাববেননা, মনে রাখবেন, আল্লাহর জন্য অসম্ভব বলে কিছুই নেই। লা তাকনাতু মির রাহমাতিল্লাহ- আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা।
Total Reply(0)
Shah Jalal ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:১৩ পিএম says : 0
hate for mayanmer
Total Reply(0)
Razaul Ashraf Khokan ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১:৫৪ পিএম says : 0
আল্লাহ তায়ালার কাছে ওদের জন্য দোআ ও সাহায্য কামনা করি
Total Reply(0)
mohammad ismail ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ৩:২২ পিএম says : 0
Rohiga's have right to live; So, We should do something for them immediately.
Total Reply(0)
মাহফুজুল করিম ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ৫:০৩ পিএম says : 0
মুসলিম বিশ্বের নেতারা এক হয়ে এই হত্যা যজ্ঞের প্রতিবাদ করলে হয়তো মিয়ানমার কিছুটা ভয় পাবে। এক্ষেত্রে তাদের সাথে সকল মুসলিম দেশ সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে। কিন্তু তারা কেন যেন মুসলমানদের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করছে। আমরা হতভাগা জাতিতে পরিণত হয়েছি! আমাদের কি কোন ভবিষ্যৎ নেই?
Total Reply(0)
mohammad abdul hannan ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ৫:১৯ পিএম says : 0
suchi has lost her humane qualities
Total Reply(0)
muhammad ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ৭:৩৫ পিএম says : 1
Amader oporad amora muslim,muslim dekei amader pase aj kew nei....aj sara duniay muslim nirjatito hosse.
Total Reply(0)
আল্লাহর বান্দা ২৭ নভেম্বর, ২০১৬, ৫:৫১ পিএম says : 0
অং সাং সূচীকে উচিৎ শিক্ষা দেয়া হোক ৷
Total Reply(0)
Md. Alauddin ২৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:৩৫ পিএম says : 0
আমি মুসলমান, পৃথিবীতে যত মুসলমান রয়েছে তারা আমার ভাই। আমার ভাইয়ের কিছু হলে আমি তা সহ্য করতে পারি না। তাই মুসলিম রোহিঙ্গাদের রকত বৃথা যেতে দেব না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন