শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

হবিগঞ্জ ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি

প্রতিদিন বাড়ছে বন্যার পানি

হবিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০২২, ৮:৩৫ এএম

উজান ভাটি দু’দিক থেকেই চাপে পড়েছে হবিগঞ্জ। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার পানি কালনি-কুশিয়ারা দিয়ে এসে ভাটি এলাকা দিয়ে হবিগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করছে। এতে জেলার ৭টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৭ লাখ মানুষ।

জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জেলায় বন্যার পানি আঘাত হানে। শুরুতেই বাড়তে থাকে কালনী, কুশিয়ারা, খোয়াইসহ বিভিন্ন নদীর পানি। কুশিয়ারা নদীর পানি প্রবল বেগে নবীগঞ্জ ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলা দিয়ে প্রবেশ করে। বঁাধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়। মুহূর্তের মধ্যেই প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্রমেই পানি বাড়তে থাকায় আক্রান্ত হয় বানিয়াচং,, মাধবপুর ও লাখাই উপজেলা। আর সর্বশেষ বুধবার থেকে নতুন করে প্লাবিত হতে থাকে বাহুবল উপজেলাও। এদিকে প্রতিদিনই বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে খাদ্য সহায়তা দিয়ে চলেছেন জেলা প্রশাসকসহ কর্মকর্তারা। মাঠে আছেন জনপ্রতিনিধিরাও। জেলা প্রশাসন বলছে, বানবাসীদের উদ্ধার তৎপরাতা চলছে। সেই সাথে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য জেলায় ২২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
লাখাই উপজেলার করাব গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যার কারণে উপজেলার কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়। রাস্তাঘাট, হাট বাজার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বাজারের দোকানপাট ডুবে যায়।

আবুল কাশে জানান, আকস্মিক বন্যায় লাখাই উপজেলায় নিম্নাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সবগুলো ইউনিয়নেরই অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে দরিদ্র মানুষজন।
লাখাই গ্রামের বাসিন্দা আবুল মনসুর রনি জানান, পানির অবস্থা খুব খারাপ। প্রতিনিয়তই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে গেছে। ব্যবসা নেই। বাসায়ও পানি উঠে যাচ্ছে।

অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আবুল বশর মাহমুদ বলেন, গত প্রায় ১৬ দিন ধরে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। হঠাৎ আমার ঘরে পানি ঢুকে পড়ে। পানিতে ভিজিয়েই অনেক কষ্ট করে মালামাল সরাতে হয়েছে। ফ্রিজ, ফার্নিচার সব পানিতে ভিজছে। সরাতে পারিনি। তিনি বলেন, পানির মধ্যে চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানিতে ডুবন্ত ঘরের টিন, পিলার চুরি হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে একটি ঘরের ২টি পিলার চুরি করে নিয়েছে।

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান জানান, জেলার ৭টি উপজেলা বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বুধবার থেকে বাহুবল উপজেলায়ও পানি ঢুকতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, বন্যায় আক্রান্তদের অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে আসেননি। তারা গবাদি পশু বা অন্যান্য জিনিসের কারণে বাড়ি ছেড়ে গ্রামের উচু জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন। কেউ আবার উচুতে আত্মীয় স্বজন বা প্রতিবেশির বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে বন্যায় জেলার প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

এদিকে বুধবার দিনব্যাপী লাখাই উপজেলার বন্যা কবলিত বিভিন্ন গ্রামে পানিবন্দি অসহায় মানুষ ও বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মিন্টু চৌধুরী, লাখাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শরীফুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাভিদ সারওয়ার, লাখাই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আলী নূরসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধগণ উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যেককে ২০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি চিড়া, ১ কেজি চিনিসহ বিভিন্ন ধরণে ঔষধ দেয়া হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন