শুষ্ক মৌসুমে মরুকরণ ও বর্ষাকালে সব গেইট খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে ভারত ভাসিয়ে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বাংলাদেশের নদ-নদীর পানি প্রবাহের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কিছুদিন আগের লোকদেখানো আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে গিয়ে জিআরসি মিটিং করেছেন। সেই মিটিংয়ে জয়েন্ট রিভার কমিশনের কোনো রিপোর্ট ছাড়া তারা লিপ সার্ভিস দিলেন। এটা আসলে বাংলাদেশের মানুষকে প্রতারণা করা হয়েছে। কারণ সবাই জানেন, বন্যায় বাংলাদেশ তলিয়ে গিয়েছে, মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। সব গেইট ভারত এই বর্ষাকালে খুলে দিয়েছে। যখন আমাদের পানির প্রয়োজন নেই তখন আমাদেরকে ভাসিয়ে দিচ্ছে। আবার যখন আমার জীবন-জীবিকার জন্য পানি প্রয়োজন তখন উজানে পানি আটকে দিয়ে বাংলাদেশকে মরুকরণ করে দেয়া হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ রিসার্চ সেন্টারের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পানি বন্টনের ইস্যু’ শীর্ষক এক গোল টেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মোস্তফা কামাল মজুমদার।
বাংলাদেশের নদ-নদীর চিত্র তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এতা বড় নদীর জন্য যে যুমনা নদীর উপর ব্রিজ হলো, এখন শুষ্ক মৌসুমে সেই নদীর ব্রিজের নিচে দিয়ে গরুর গাড়ি যাচ্ছে-এই হচ্ছে অবস্থা। কেনো? ভারতের দেয়া বাঁধগুলোর কারণে।
তিনি বলেন, আমাদের নদীর তলদেশ গভীরতা হারাচ্ছে এবং বেসিনের গভীরতা হারাচ্ছে। সুরমা বেসিনের তলদেশ কী পরিমান উচু হয়ে গেছে যার জন্য এবার ১২২ বছরেও মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা বাংলাদেশে হয়েছে। কেনো হচ্ছে- ভারতের এই বাঁধের জন্য হচ্ছে। পানি ব্যবস্থাপনার একতরফা যে সিদ্ধান্ত আমরা যারা নিচের দিকে বসবাস করি এই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে যে নতজানু নীতি তার জন্য আজকে এটা করা সম্ভব হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগনকে সচেতন করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন খন্দকার মোশাররফ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, জনগণকে সচেতন করতে হবে, জনগণের দাবিতে যদি সোচ্চার হয় অতীতে দেখেছি ফারাক্কা নদীর প্রবাহ নিয়ে ১৯৭৭ সালে চুক্তি করতে হয়েছে। আজকে আমাদের ন্যায্য পানির অধিকার আদায়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হতে হবে। তিস্তা নদী পানি বন্টন চুক্তি এক দশকের না করতে পারায় সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করেন তিনি।
বানভাসিদের দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই অভিযোগ করেছেন ড. মোশাররফ বলেন, আজকে বন্যার্তদের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। সেখানে মানুষ কী পরিমান মানবেতন জীবন-যাপন করছে আপনারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন, মিডিয়ায় দেখেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে প্রলয়ঙ্করী বন্যা মোকাবিলায় যেভাবে এগিয়ে আসার কথা ছিলো, যে পরিকল্পনা থাকার কথা ছিলো- আমরা লক্ষ্য করেছি সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। তারা অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলো। দুর্ভাগ্য জনগণের। জনগণের ভোটের সরকার যদি না হয়, জনগণের সরকার যদি না হয় তাহলে জনগণের কষ্ট, জনগণের দুঃখ প্রাধান্য পায় না, পায় ব্যক্তিস্বার্থ ও গোষ্ঠি স্বার্থ।
সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদের সভাপতিত্বে গোল টেবিল আলোচনায় জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা ড. এস আই খান, পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী এম ইনামূল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যায়ন বিভাগের প্রফেসর সাইফুদ্দিন আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন