বাঁশ, চাচের বেড়া ও টিনের চালের তৈরি ছাপড়া ঘরে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। ঘরের এক পাশে ক্লাস নিচ্ছেন আনোয়ারা খাতুন। তারপরেই বোর্ডের ওপাশে ক্লাস নিচ্ছেন নুরুজ্জামান। কেউ ফিসফিস করে কথা বললেও মনোযোগ নষ্ট হয় অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের। এভাবেই চলছে সব ক্লাস। আর তাই শ্রেণি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের বাগডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৯০ সালে স্থাপিত এই বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়েছে ২০১৩ সালে। প্রতিষ্ঠাকালীন তৈরি ছাপড়া ঘরের বাঁশের খুঁটি খুলে খুলে পড়ছে। নষ্ট হয়ে গেছে চাচের বেড়া। ফুটো হয়ে গেছে টিনের চাল। বর্ষা হলেই পানি পড়ে। কাদা হয়ে যায় ঘরের ভেতর। আর বিদ্যালয়ের মাঠ জলাবদ্ধ থাকে বছরের অধিকাংশ সময়। ১১৮ জন শিক্ষার্থীর এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন চারজন। শত সমস্যা থাকলেও শিক্ষকদের আপ্রাণ চেষ্টায় ২০১২ সাল থেকেই পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় শতভাগ সাফল্য অর্জন করে আসছে বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারিয়া জানায়, ভবন ও আলাদা আলাদা ক্লাসরুম না থাকায় খুবই সমস্যা হয়। স্যার যা বলে অন্য ক্লাসের শব্দে তা ঠিকমতো শোনা যায় না। আমাদের জন্য একটি পাকা ভবন খুবই দরকার। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মুহিদ জানায়, ক্লাসে বসে অন্য ক্লাসের ছেলেমেয়েদের দেখা যায়। চোখাচোখি হলে হাসাহাসি করে। তাই পড়ায় মন বসে না। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সাকিব জানায়, বৃষ্টি হলে ক্লাস করা যায় না। চালের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে। বাইরে থেকে সিচ লাগে। স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠার পর ২৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বিদ্যালয়টিতে আজও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। হয়তো গরিব মানুষের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে বলে বিদ্যালয়টির দিকে কেউ তাকায় না। তিনি বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত উন্নয়নে স্থানীয় সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ জানেন। সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমরা শিক্ষাদানে আন্তরিকভাবে কাজ করছি। সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ জানান, বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের পর সম্প্রতি শিক্ষক গেজেট হয়েছে। আগামী অর্থবছরের দিকে ভবনও হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন