ছাতকের সর্বত্র মাদকের ভয়াবহ বিস্তার নিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিগত দিনের সকল রেকর্ড ভঙ করে এখানে জমজমাটভাবে চলছে এ মাদক ব্যবসা। ফলে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীও যুবসমাজসহ উঠতি বয়সী তরুণদের মাদকাসক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন অভিভাবকমহল। অভিযোগে জানা যায়, ১৩ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ছাতক উপজেলার সর্বত্র এখন মাদকের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতায় শহর ছাড়াও গ্রামের আনাচে-কানাচে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় মদ, গাঁজা, হিরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ নেশাজাতীয় দ্রব্য। মাঝে-মধ্যে পুলিশ, বিজিবি, র্যাবও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে হাতেগোনা কয়েকজন মাদক বহনকারিও পরিত্যক্ত কিছু মাদক উদ্ধার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূল মাদক ব্যবসায়িরা। জানা গেছে, গত ১অক্টোবর তাতিকোনা গ্রামের ওয়াজিদ আলীর ছেলে জাহাঙ্গীরকে ৩২৮ বোতল ভারতীয় মদসহ গ্রেফতার করা হয়। ৭ অক্টোবর ছৈলা-আফজালাবাদ ইউপির লাকেশ্বর পশ্চিমপাড়ার রশিদ আলীর ছেলে আব্দুল বারীক ৭ বোতল মদসহ আটক করা হয়। এর আগে লাকেশ্বর এলাকা থেকে সাইদুল নামের এক মাদক ব্যবসায়িকে মালামালসহ পুলিশ গ্রেফতার করে। ২৬ জুলাই বড়কাপনবাজারে জুয়ার আসর থেকে উত্তর বড়কাপন গ্রামের আব্দুছ সুবহানের ছেলে বজলু মিয়া, বাদেশ্বরীপুর গ্রামের ইসকন্দর আলীর ছেলে ফজর আলী, মছলম আলীর ছেলে আব্দুল মজিদ, দক্ষিণ বড়কাপন গ্রামের আব্দুছ সাত্তারের ছেলে কনর আলীও বানায়ত গ্রামের ছাদ আলীর ছেলে মনর উদ্দিনকে আটক করে ১০দিনের কারাদ- প্রদান করা হয়। ৩ নভেম্বর দক্ষিণ বড়কাপন গ্রামের সূরুজ আলীর ছেলে জয়নালকে ১৯৩ বোতল মদসহ গ্রেফতার করা হয়। ১৩ আগস্ট লুভিয়া গ্রাম থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকার ৩৫২ বোতল মদ ও ৪০ বোতল বিয়ার উদ্ধার করে নোয়াকোট বিজিবি। ১৮ জানুয়ারি ছনবাড়ি-নোয়াকোট এলাকা থেকে ১০ লাখ ১৪হ াজার টাকার ৬৭৬ বোতল মদ উদ্ধার করা হয়। ১৮ মে বনগাঁও গ্রামে বিজিবি ৪লাখ টাকার ২৫৯ বোতল মদ আটক করে। গত ২ অক্টোবর পীরপুর বাজারে দক্ষিণ ছাতক নাগরিক সমাজের ব্যানারে এলাকায় মাদকের ভয়াবহতা, চুরি-ডাকতি ও ছিনতাই বৃদ্ধির ঘটনায় এক প্রতিবাদ সভা করা হয়। এ ছাড়া ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি বাসস্ট্যান্ড থেকে গাঁজা বিক্রেতা আল-আমিনকেক আটক করা হয়। একই দিনে নিজগাঁও গ্রাম থেকে ১০ বোতল মদ উদ্ধার করা হয়। ২০১৫ সালের ১৮ এপ্রিল শহরের নিজগাঁও এলাকা থেকে ৪ লাখ ২৪ হাজার টাকার ২৮৬ বোতল ভারতীয় মদ উদ্ধার করে বিজিবি। ২০১৫ সালের ৬ মার্চ গনেশপুর গ্রামের ইউছুফ আলীর ছেলে মাছুম মিয়াকে ১০ বোতল মদসহ আটক করা হয়। ২০১৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বনগাঁও গ্রামের জাহির আলী ও ছেলে খোকন মিয়াকে ২৮ বোতল মদসহ আটক করা হয়। ২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর বড়কাপন গ্রামের মাদক স¤্রাজ্ঞী রাজিয়া বেগমকে ৬ কেজি গাঁজাসহ আটক করে র্যাব। জানা গেছে, উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ, জাউয়া, দোলারবাজার, জাহিদপুর, মঈনপুর, বুরাইয়া, রসুলগঞ্জ, বরাটুকা, শাপলাগঞ্জ, পরগনাবাজার, কামারগাঁও, জহিরপুর, চরমহল্লা, বড়কাপন, লাকেশ্বর, বাংলাবাজার, গোবিন্দগঞ্জ সাদাপুল, রেল ব্রিজ, রেলগেইট, টেটিয়ারচর, ছনবাড়ি, বনগাঁও, বাউশা, নোয়ারাই, লক্ষীবাউর, লাফার্জবাজার, গনেশপুর, কালারুকা, সিমেন্ট কারখানা ৪নং এলাকা, পেপারমিল মিনি মার্কেট, আকিজবাজার, রেলকলোনী, বাগবাড়ি, গণক্ষাই, তাতিকোনা, মন্ডলীভোগসহ ছোট-বড় বিভিন্ন হাট-বাজারে মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে। এ ব্যাপারে থানার অফিসার্স ইনচার্জ আশেক সুজা মামুনকে মোবাইলে পাওয়া যায়নি। তবে ওসি তদন্ত আশরাফুর ইসলাম জানান, পুলিশ মাদকের অনেকগুলো চালান আটক করেছে। যেখানে মাদকের খোঁজ পাচ্ছি সেখানেই অভিযান চালানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোনভাবেই গাফিলতি হচ্ছে না বলে তিনি জানান। উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বার্হী অফিসার শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, সাপ্লাই লেবেলে মাদকসহ ব্যবসায়িদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। আমদানিকারকদের গ্রেফতার করলে মাদকের ভয়াবহতা অনেকটা কমে আসবে। এছাড়া মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মাদকসহ গ্রেফতারকৃত অনেককেই জেল জরিমানা করা হয়েছে। তিনি সঠিক ইনফরমেশন পেলে অবশ্যই দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন