এবার চাঁদপুরে পবিত্র ঈদুল আযহায় কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার। অন্য জেলা কিংবা ভারতীয় পশু আমদানির প্রয়োজন হবে না। স্থানীয় গবাদি পশুতেই চাঁদপুরে কুরবানির চাহিদা মিটানো যাবে। এমনটাই আশা করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
চাঁদপুর মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে ত্রিশের অধিক চরাঞ্চলসহ ও ৮ উপজেলায় খামারি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকেই বছরজুড়ে গবাদি পশু পালন করেছেন। পালনকৃত পশু থেকেই প্রতিবছর কুরবানির অধিকাংশ চাহিদা মিটানো হয়ে থাকে। এছাড়াও কুরবানিরহাটে জেলার বাহির থেকে পশু আমদানি হয়। তবে গত কয়েক বছর জেলার অভ্যন্তরে গরুর খামার গড়ে তুলেছেন অনেকে। এসব খামারগুলোও এখন কুরবানির পশুর চাহিদা পুরনে ভূমিকা রাখছেন। কুরবানির জন্য ৭০ হাজার পশুর চাহিদা রয়েছে। মে মাস পর্যন্ত ৬৯ হাজারের মতো যোগান রয়েছে। ইতোমধ্যে কুরবানির হাটগুলো প্রস্তুত হতে শুরু করেছে। এ বছর জেলায় প্রায় দুই শতাধিক কুরবানির পশুর হাট বসবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁদপুর মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় অধিকাংশ মানুষ কৃষি, পশু পালন ও মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মূলত চরাঞ্চল থেকেই অধিকাংশ কুরবানির পশুহাটে আসে। ব্যক্তি উদ্যোগে এবং খামারিদের পশু বিক্রির জন্য কুরবানির হাটকেই উপলক্ষ হিসেবে রাখেন। ফলে এখন খামারিরা তাদের বিক্রিযোগ্য পশুগুলো লালন-পালন ও যত্ন নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার অনেকেই কুরবানির হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে এক থেকে দু’মাস আগে জেলার বাহির থেকে এবং বিভিন্ন হাট থেকে পশু ক্রয় করে অস্থায়ী খামার করেছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ৮টি উপজেলায় তালিকাভুক্ত খামারি আছে ২ হাজার ৬৩৪ জন। কুরবানির চাহিদার জন্য এসব খামারিদের পালনকৃত ষাড়, বলদ, গাভি, মহিষ ও ছাগল রয়েছে ৬৯ হাজার। গত বছর কুরবানি হওয়া পশুর সংখ্যা অনুযায়ী এ বছর চাহিদা ৭০ হাজার।
চাঁদপুর জেলার সবচাইতে বড় পশুরহাট হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা বাজার। গত একসপ্তাহ ওই বাজারটিকে কুরবানির পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ক্রেতাদের চলাচলের রাস্তা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হচ্ছে। বাজারের ইজারাদার অমল ধর জানান, বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কর্মী রাখা হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর হাসিল কম ধরা হয়েছে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে হাসিল ছাড় রাখারও নিয়ম রাখা হয়েছে।
মেঘনা উপকূলীয় নিয়মিত গরুহাট চাঁদপুর সদর উপজেলার সফরমালি বাজার। সেখানে প্রতি সপ্তাহে হাট বসে। কুরবানি উপলক্ষে গরুর আমদানি বেড়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবছর গরুর দাম ১০-১৫% বেশি। যে কারণে ক্রেতা দেখে চলে যান, কিনতে চান না।
চাঁদপুর শহরের সুইটি ডেইরি ফার্মের পরিচালক মো. ইব্রাহীম খলিল জানান, গত দু’বছর করোনার কারণে আমাদের অনেক লোকসান হয়েছে। বাজারে খাবারের দাম বেশী। যার কারণে খরচ হিসেব করে দাম নির্নয় করলে বেশি হয়ে যায়। অনেকেই দেখতে আসেন কিন্তু কিনেন না। এখন আমাদেরকে কুরবানিরহাট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
একই ফার্মের শ্রমিক মজনু ও শাহাবুদ্দিন জানান, খামারে পালনকৃত গরুগুলোকে ঘাসসহ দেশিয় বিভিন্নভাবে উৎপাদিত খাবার খাওয়ানো হয়। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার মধ্যেই এসব গরুগুলো বেড়ে উঠে। ক্ষতিকারক কোন খাদ্যই খাবারে ব্যবহার হয় না।
চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বখতিয়ার উদ্দিন জানান, জেলায় ২ হাজার ৬৩৪ জন খামারি রয়েছেন। তাদের সকলের ৫টির অধিক গবাদিপশু রয়েছে। যারা ১ থেকে ২টি গবাদিপশু পালন করেন এরকম প্রায় ৪২ হাজার গবাদিপশু রয়েছে। কুরবানির জন্য এ বছর গবাদিপশুর চাহিদা রয়েছে ৭০ হাজার। মে মাস পর্যন্ত প্রস্তত আছে প্রায় ৬৯ হাজার।
তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি এ বছর আমাদের যে চাহিদা আছে তা মিটিয়ে অতিরিক্ত পশু থাকবে। এ বছর আমরা খুবই সুন্দরভাবে পবিত্র কুরবানির ঈদ উদযাপন করতে পারবো। এতে চাঁদপুর জেলায় কোনরুপ সমস্যা দেখছিনা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন