কমলাপুর রেলস্টেশনে যেন মেলা বসেছে। হাজার হাজার নারী পুরুষ ২৪ ঘন্টা ভীড় করছেন। সরকার উদ্দেশ্য প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করতে গ্রামে ফেরার জন্য ট্রেনের টিকেট। কিন্তু টিকেট এখন সোনার চেয়ে দামি। প্রতিদিন দুই হাজারের কম টিকেটের জন্য ১০ থেকে ১৫ হাজার নারী পুরুষ ভীড় করছেন। এর মধ্যে ট্রেনের টিকেট চলে যাচ্ছে দালালদের হাতে। অতিরিক্ত টাকা নিযে তারা গোপনে টিকেট বিক্রি করছেন।
অথচ সারা রাত কমলাপুর রেলস্টেশনে কাটিয়ে, প্রায় ২০ ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পাননি কমলাপুর রেলস্টেশনে ঈদের আগাম টিকিট কাটতে আসা শত শত নারী। টিকিট না পেয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজারের কক্ষে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। টিকিটপ্রত্যাশী এক নারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাতভর কমলাপুর রেলস্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছি। তবুও টিকিট মেলেনি। অল্প কয়েকজনকে টিকিট দেওয়ার পর বলছে টিকিট শেষ হয়ে গেছে! গতকাল রোববার সকাল কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজারের কক্ষে টিকিট না পাওয়া নারী যাত্রীদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। দুপুরে দেখা যায় কয়েকজন বিক্ষুব্ধ নারী ম্যানেজারের কাছে গিয়ে তাদের দুর্দশার কথা জানান। তারা দালালদের খপ্পরে টিকেট এমন অভিযোগ করেন।
কমলাপুর রেলস্টেশনে মোট ১০টি কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৯টি কাউন্টার থেকে পুরুষদের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। আর মাত্র একটি কাউন্টার থেকে দেওয়া হচ্ছে নারীদের টিকিট। নারীদের জন্য বরাদ্দ কাউন্টার থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধীদের টিকিটও বিক্রি করা হচ্ছে। মোছাম্মদ শারমিন নামে এক যাত্রী বলেন, গত ২৪ ঘন্টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এরপরও টিকিট পাইনি। নারীদের লাইনে খুব কম টিকিট দেওয়া হচ্ছে। আমাদের একজনকে টিকিট দিয়ে পুরুষদের ৫ থেকে ৬ জনকে দেওয়া হয়ে যাচ্ছে। হাবিবা বেগম নামের আরেক নারী বলেন, এতগুলো নারীর জন্য মাত্র একটা কাউন্টার। তার ওপর এখানে শারীরিক প্রতিবন্ধীদেরও টিকিট দেওয়া হচ্ছে। আমাদের ওপর জুলুম করা হচ্ছে! এত কষ্ট করেও টিকিট না পেলে আমরা বাড়ি যাব কীভাবে?
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার। তিনি বলেন, নারীদের জন্যে আলাদা লাইন করে দেওয়া হয়েছে। সে জন্য সংকট তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। তবে কিছু অব্যবস্থাপনা আছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এবার ঈদে ৬ জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও ৫০ শতাংশ টিকিট কাউন্টারে এবং বাকি ৫০ শতাংশ টিকিট মিলছে অনলাইনে।
গতকাল রোববার দেওয়া হয় ৭ জুলাইয়ের আগাম টিকিট। আজ ৪ জুলাই দেওয়া হবে ৮ জুলাইয়ের টিকি এবং ৫ জুলাই দেওয়া হবে ৯ জুলাইয়ের টিকিট।
স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাউন্টারে এবং অনলাইনে টিকিট বিক্রি করা হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি দেখিয়ে টিকিট কাটতে হবে যাত্রীদের।
ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে সমগ্র উত্তরাঞ্চলগামী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট, কমলাপুর শহরতলী প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেনের টিইকট পাওয়া যাচ্ছে।
এবারই প্রথম ঈদুল আজহা উপলক্ষে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ঈদে গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম ঈদ স্পেশাল’ নামের ওই ট্রেন গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত চলাচল করবে। তবে রংপুর ও লালমনিরহাটের যাত্রীরা পার্বতীপুর থেকে কানেকটিং ট্রেনে ফিরতে পারবেন। জয়দেবপুর এবং কমলাপুরে এই বিশেষ ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে।
অন্যদিকে, ঈদের ফেরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ৭ জুলাই। ঈদ শেষে ফিরতি ট্রেনের ক্ষেত্রে ১১ জুলাইয়ের টিকিট পাওয়া যাবে ৭ জুলাই, ১২ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট ৮ জুলাই, ১৩ জুলাইয়ের টিকিট ৯ জুলাই এবং ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের টিকিট পাওয়া যাবে ১১ জুলাই।
তবে ভুক্তোভোগীদের অফিযোগ কাউন্টারে অনেকেই টিকেট কেটে ডয়ারে রেখে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন