যশোরের বিভিন্ন পশুর হাট ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ক্রমেই জমে উঠছে। জেলা প্রশাসনের তত্ববধায়নে জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী ২৩টি পশুহাটে এবার পশুর আমদানি ভালো হলেও, বেঁচাবিক্রি কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, বন্যা আর বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দার প্রভাব পড়েছে এবারের কুরবানি হাটে। অনেকেই আর্থিক সংকটে এবার কুরবানি দিচ্ছেন না। তার পরেও এখনও ঈদের কয়েকদিন বাকি আছে। তাই শেষ সময়ে ক্রেতারা পছন্দের পশু কিনে নেবেন, এতে দেরি হলেও বিক্রি ভালো হবে বলে আশা বিক্রেতাদের।
যশোর জেলা শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের পাশে বসে জেলার বৃহৎ সাতমাইল হাট। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে এই হাট থেকে গরু কিনে নিয়ে যান বিভিন্ন এলাকার পশুর হাটে। বুধবার হাটে যেয়ে দেখা যায়, যশোর সাতক্ষীরা এলাকার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রচুর গরু ও ছাগল নিয়ে এসেছেন খামারি-বিক্রেতারা। দেশি গরুই বেশি চোখে পড়েছে। পশুর সরবরাহ প্রচুর। তবে ক্রেতাদের আনাগোনা কম। বিক্রেতারা ক্রেতা না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করে জানান, পশুর জন্য এই হাট ঐতিহ্যবাহী। যশোরসহ সিলেট-রংপুর চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর ব্যবসায়ীরা ও কুরবানি দিতে ইচ্ছুকরা পশু কিনতে আসেন। তবে এবার এই জেলাগুলোতে বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা আসছেন না। যারা হাটে আসছেন স্থানীয় ক্রেতা। তার পরেও হাট জমে উঠবে দু-এক দিনের মধ্যেই।
নজরুল ইসলাম নামে এক খামারি বলেন, এবার বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কারণে পশুর চাহিদা কম। এ হাটে সকালে গরু এনে দুপুর নাগাদ বিক্রি করতে পারেননি। এবার গো-খাদ্যের দামও বেশি। তার মধ্যেই দেনা করে গরু পাললাম। এখন দাম পাচ্ছিনে। গত বছরে হাট না বসলেও সিলেটের এক ট্রাক গরু পাঠিয়ে ছিলাম। সেই ব্যবসায়ীরে এবার ফোন দিলাম; এবার গরু লাগবে কিনা জানতে? তিনি জানান বন্যার কারণে পশুর চাহিদা না থাকায় এবার তিনি ব্যবসা করছেন না। কুরবানির গরু কিনতে আসা সুলাইমান হোসেন বলেন, এ হাটে প্রচুর গরু আছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা গরুর দাম কমাচ্ছে না। যে কারণে বেঁচাবিক্রি একটু কম। তাছাড়া কুরবানির দেরি আছে। ভেবেচিন্তে কিনবো।
এদিকে, স্বাস্থ্যসম্মত পশু ক্রয় করতে অনেক ক্রেতা ইতোমধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু ছাগল দেখছেন। কিন্তু তারা দাম বলছেন চাহিদার তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন খামারিরা। ফলে দাম নিয়ে শঙ্কা থাকলেও খামারিরা আশা করছেন পুরোদমে হাট শুরু হলে ভাল দাম পাওয়া যাবে। এ ব্যাপারে যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হক জানান, জেলায় এবার কুরবানির চাহিদা মিটিয়ে গরু ছাগল উদ্বৃত্ত থাকবে। ইতোমধ্যে কুরবানির পশুহাট শুরু হয়েছে। পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২৩টি হাটের জন্য প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ২৪টি ভেটেরিনারি মেডিকেল দল সার্বক্ষণিক হাটে দায়িত্ব পালন করছে। সুস্থ ও সবল পশু ক্রয়-বিক্রয়ে সহযোগিতার জন্য এই টিমগুলো হাটে কাজ শুরু করেছে। আমরা খামারিদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখভাল করছি। নিরাপত্তা দিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বদা নিয়োজিত রয়েছে বলে জানান তিনি।
“যশোর জেলায় যে যে স্থানে এবারে বসেছে গরুর হাট”
যশোর সদর উপজেলা ঃ সোমবার ও শুক্রবার রুপদিয়া বাজার, রবিবার ও বৃহস্পতিবার বারীনগর বাজার। শনিবার, সোমবার, বুধবার ও শুক্রবার নিউ মার্কেট। সোমবার কোদালিয়া। ঝিকরগাছা উপজেলা ঃ বৃহস্পতিবার ও রবিবার ঝিকরগাছা পশু হাট। সোমবার ছুটিপুর বাজার। শার্শা উপজেলা ঃ বুধবার নাভারণ, শনিবার ও মঙ্গলবার সাতমাইল। মণিরামপুর উপজেলা ঃ শনিবার ও মঙ্গলবার মণিরামপুর পশুহাট, সোমবার ও বুধবার রাজগঞ্জ পশুহাট, সোমবার ও বৃহস্পতিবার নেহালপুর পশুহাট। কেশবপুর উপজেলা ঃ সোমবার ও বুধবার কেশবপুর পশুহাট, রবিবার সরসকাটি পশুহাট। অভয়নগর উপজেলা ঃ শনিবার ও মঙ্গলবার নওয়াপাড়া পৌরসভা পশুরহাট, বুধবার মরিচা পশুরহাট, ঈদের আগের দিন নাওলি। বাঘারপাড়া উপজেলা ঃ বুধবার চাড়াভিটা বাজার, সোমবার ভাংগুরা বাজার, মঙ্গলবার নারিকেলবাড়িয়া। রবিবার ও শুক্রবার খাজুরা ভাটার আমতলা। চৌগাছা উপজেলা ঃ রবিবার ও বুধবার চৌগাছা পৌর গরুর হাট। এছাড়া সদরের কাশিমপুর ও রামনগরে দুটি অস্থায়ী হাট বসছে প্রতিদিন। এসব হাটে কুরবানি গবাদি পশু পর্যবেক্ষণে মনিটারিং করবেন ২৪টি মেডিকেল টিম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন