ঈদুল আযহার (কোরবানীর) ঈদ দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে রাজশাহী অঞ্চলের পশুহাট থেকে খামার ও গ্রামের বাড়ি বাড়ি যেতে শুরু করেছেন কোরবানীদাতারা। অনেকে অনলাইনে যোগাযোগ করছেন।
এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুহাট রাজশাহী সিটি হাট। এখানে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারী গরু মহিষ ব্যবসায়ীরা। আর আসে পাশের সাধারন মানুষের পছন্দের জায়গা এই হাট। এখানে প্রচুর আমদানী গরু মহিষের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় প্রতিদিন এখান থেকে ট্রাক বোঝাই পশু যায়। আগে সপ্তাহে দু’দিন হাট বার হলেও এখন প্রতিদিন হাট বসছে। গতকাল হাট পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় সব সাইজের হাট ভরা গরু মহিষ। স্থানীয় ক্রেতা বিক্রেতাদের আনাগোনা। তবে অন্যবারের মত পাইকারী ব্যবসায়ীদের আনাগোনা কম। এমনটি জানালেন হাটের সংশ্লিষ্ট আনোয়ার। তাদের প্রত্যাশা জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহজুড়ে জমজমাট থাকবে হাট। এখানকার সাধারন ক্রেতারা হাটে আসছেন বাজার বোঝার চেষ্টা করছেন। গতবারের চেয়ে এবার গরু প্রতি অন্তত দশ পনের হাজার টাকা বেশী হাঁকা হচ্ছে। বিক্রেতাদের কথা হলো তাদের লালন পালন খরচ বেড়েছে অস্বাভাবিক রকমের। খৈল ভুষি খড়সহ সব উপকরনের দাম বেড়েছে দ্বিগুন তিনগুন। অনেক খরচ করে গরু লালন পালন করেছেন এখন তা প্রত্যাশিত দামে বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন। ক্রেতারা আসছেন যে দাম বলছেন তাতে পোষাচ্ছে না। তাই ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। হাটে আনা নেয়াতেও খরচ হচ্ছে। রাজশাহী বানেশ্বর হাট, কাটাখালিহাট ও নওহাটা হাটেও একই অবস্থা। তবে এসব হাটে কেনেন নগরীর বাসিন্দারা। ঈদের দু’তিন দিন আগেথেকে জমজমাট হয়ে ওঠে। হাটগুলোয় ছোট থেকে মাঝারী সাইজের গরুর চাহিদা বেশী। বড় বড় গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারীরা।
প্রানী সম্পদ বিভাগ ও খামারীরা বলছেন এবার রাজশাহী বিভাগে চাহিদার চেয়ে বেশী কোরবানীর পশু রয়েছে। রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় প্রায় সাড়ে এগারো লাখ গরু সাড়ে একুশ হাজার মহিষ আর আঠাশ লাখ বাইশ হাজার কোরবানীযোগ্য ছাগল রয়েছে। ভেড়া রয়েছে প্রায় চল্লিশ হাজার। রাজশাহী জেলাতে কোরবানীর পশুর সম্ভাব্য চাহিদা রয়েছে তিনলাখ বিরাশী হাজারের কিছু বেশী। আর পশু রয়েছে তিনলাখ তিরানব্বই হাজারের মত। সে হিসাবে এখানে চাহিদার চেয়ে দশ হাজার পশু রয়েছে। চাপাইনবাবগঞ্জ জেলায় কোরবানীর পশু রয়েছে একলাখ পয়ষট্টি হাজারের বেশী। আর কোরবানীর সম্ভাব্য লক্ষ ধরা হয়েছে এক লাখ তের হাজার। সে হিসাবে চাপাইনবাবগঞ্জে বাহান্ন হাজারের বেশী পশু রয়েছে। নওগা নাটোর একই অবস্থা।
রাজশাহী অঞ্চলের সব জেলায় চাহিদার চেয়ে বেশী কোরবানীযোগ্য পশু রয়েছে। অথচ সে তুলনায় এখনো জমে ওঠেনি বেচাকেনা। বিশেষ করে জেলার বাইরে থেকে ব্যপারীদের আনাগোনা কম। হাট ফেরত ক্রেতারা বলছেন এবারের গরু ছাগলের দাম অনেক বেশী। গত বছরের চেয়ে সাত থেকে দশ হাজার টাকা বেশী। খামারীরা বলছেন গোখাদ্যের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাবার কারনে তাদের লালন পালন খরচ বেড়েছে। তাই দাম বেশী হচ্ছে। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারনে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। আগে যারা গোটা গরু কোরবানী করতেন তারা এবার ভাগে যাচ্ছেন। এবার ছাগলের চাহিদা বেশী দেখা যাচ্ছে। মানুষ আল্লাহতালার সন্তষ্টি লাভের জন্য যেভাবে হোক কোরবানী আদায় করবে। একেবারে শেষ মুহুর্তে বোঝা যাবে কোরবানী পশুর বাজার। হয় অনেক চড়বে নয়তো পড়বে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন